ঢাবি শিক্ষকের গবেষণা

সহপাঠীদের হাসি-তামাশা, শিক্ষার বাইরে ৭৫% প্রতিবন্ধী

লোগো
লোগো

দেশে প্রাথমিক শিক্ষার হার প্রায় শতভাগ। তবে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের সিংহ ভাগই শিক্ষাব্যবস্থার এ সাফল্য থেকে বঞ্চিত। গবেষণার তথ্য বলছে, দেশের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ৭৫ শতাংশই এখনো শিক্ষার বাইরে রয়ে গেছে। আর বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী প্রতিবন্ধী শিশুদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার হার মাত্র ৩৫ শতাংশ।

গত বছরের শুরুর দিকে কুড়িগ্রামে হতদরিদ্র পরিবারের জীবনমান নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার (এইচডিআরসি)। হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল-হিউম্যানিটি অ্যান্ড ইনক্লুসন (এইচআই) বাংলাদেশ প্রোগ্রামের অর্থায়নে পরিচালিত এ গবেষণার অংশ হিসাবে একটি জরিপ করা হয়। গবেষক দলের নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ড. মুহাম্মদ সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ‘র‌্যানডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়াল অন দ্য ডিজঅ্যাবিলিটি ইনক্লুসিভ পভার্টি গ্র্যাজুয়েশন মডেল বেজলাইন রিপোর্ট’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুড়িগ্রাম জেলার দুটি উপজেলায় প্রতিবন্ধী রয়েছে এমন ৬৮৬টি হতদরিদ্র পরিবারে জরিপ চালিয়ে দেখা যায়, এসব পরিবারের মোট প্রতিবন্ধীর ৭৫ শতাংশ কখনো বিদ্যালয়ে যায়নি। এছাড়া এসব পরিবারের ছয় থেকে ১৪ বছর বয়সী বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী প্রতিবন্ধী শিশুদের মধ্যে ৬৫ শতাংশই স্কুলে যাচ্ছে না। শিক্ষার আওতায় আসা ৩৫ শতাংশ প্রতিবন্ধীর ১৫ শতাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা আবার স্বাক্ষর জ্ঞানেই সীমাবদ্ধ। জরিপে অংশ নেয়া বেশির ভাগ বয়স্ক প্রতিবন্ধীই বলেছেন, তারা কখনো বিদ্যালয়ে যাননি। আর বিদ্যালয়ে যাওয়াদের সর্বোচ্চ গণ্ডি প্রাথমিকেই সীমাবদ্ধ।

গষেণার অংশ হিসেবে স্কুলে পাঠানোর ক্ষেত্রে কী ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা করা হয় ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশনে (এফজিডি)। এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঁচজন প্রতিবন্ধী শিশুর অভিভাবকের সঙ্গে হওয়া এক আলোচনায় তিনজন অভিভাবক জানান, তাদের সন্তান স্কুল ও মাদ্রাসায় যায়। শ্রেণীকক্ষে সহপাঠীরা তাদের নিয়ে হাসি-তামাশা করে। বিভিন্ন অকথ্য ভাষায় সম্বোধন করে। এছাড়া অন্য শিশুরা তাদের সন্তানের সঙ্গে মিশতে চায় না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মুহাম্মদ সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী বলেন, গবেষণা করতে গিয়ে দেখলাম, প্রতিবন্ধী এসব পরিবার প্রায় সব দিক থেকে অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার। এসব পরিবারের দুই-তৃতীয়াংশ শিশুই শিক্ষাবঞ্চিত। আগে এ হার আরো বেশি ছিল। শিক্ষা না পাওয়ায় কর্মদক্ষতা ও সক্ষমতাও তৈরি হচ্ছে না। তাই কর্মসংস্থানের বেশ দুর্দশা। আর আয় না থাকায় স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক অবস্থান—সব দিক থেকেই খুব মানবেতর জীবনযাপন করছে প্রতিবন্ধী এসব পরিবার।

কয়েক বছর ধরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসার বিষয়ে জোর দেয়া হচ্ছে। কিন্তু পর্যাপ্ত উদ্যোগ ও সুযোগ-সুবিধার অভাব থাকায় সে লক্ষ্য অর্জন থেকে অনেক দূরে রয়েছে বাংলাদেশ। যদিও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। এসব শিশুকে শিক্ষার আওতায় আনতে পারলে পরবর্তী সময়ে তারা দেশের বোঝা না হয়ে সম্পদে রূপ নেবে। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রায় হতদরিদ্র পরিবার বিষয়ে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, সেটিও অর্জন হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর পরিচালিত বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারি ২০১৮-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় প্রতিবন্ধী ও শারীরিক ত্রুটিযুক্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯৬ হাজার ৩৮৫ জন। এর মধ্যে শারীরিক ত্রুটিযুক্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি, ২৯ হাজার ৫৫। বুদ্ধি ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছে ২৩ হাজার ৭৩৯ জন। এছাড়া দুর্বল দৃষ্টি, শ্রবণ ও বাকশক্তিযুক্ত এবং অটিজম ও অন্যান্য সমস্যায় ভোগা শিক্ষার্থীদেরও এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ