করোনা: বড় সংকটে দেশের শিক্ষা খাত

জনশূন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
জনশূন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে অন্যান্য খাতের মতো অচল হয়ে পড়েছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাও। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে আগেই। সে ছুটি বাড়িয়ে ঈদুল ফিতরের পর পর্যন্ত নেয়ার ঘোষণা আসতে পারে আজ। এ হিসাবে টানা আড়াই মাসের দীর্ঘ ছুটিতে যাচ্ছে দেশের গোটা শিক্ষা খাত।  

করোনা নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির এ বন্ধে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়- সব পর্যায়েই  পাঠদান, পরীক্ষা, ল্যাব ওয়ার্কের মতো নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রমগুলো বন্ধ। স্থগিত করা হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এসএসসির ফল তৈরির কাজও সাময়িকভাবে বন্ধ।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গোটা শিক্ষাবর্ষের ক্যালেন্ডারকেই হুমকিতে ফেলে দিয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত এ ছুটি। ক্লাস বন্ধ থাকায় নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা যাবে না সিলেবাস। এর কারণে পেছাতে হবে পরীক্ষাও। এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশে বিলম্ব হলে পেছাবে কলেজে ভর্তি ও ক্লাস শুরুর কার্যক্রম। এইচএসসি পরীক্ষা পেছালে সে প্রভাব পড়বে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ও ক্লাস শুরুতে। বিশ্ববিদ্যলয়গুলোর শিক্ষাপঞ্জিতেও বেশ প্রভাব ফেলবে এ ছুটি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন পরীক্ষা নেয়ার জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো বছরব্যাপীই ব্যস্ত থাকে, সেখানে এ বন্ধের কারণে পরীক্ষা গ্রহণে বিলম্ব হওয়ায় সেশন জটে তৈরির আশঙ্কাও রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আসলেই এটা একটা বড় সংকট। তবে করোনা প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে এর কোনো বিকল্পও ছিল না। বিশ্বের অন্যান্য দেশও তাই করছে। এখন দেখতে হবে অন্যান্য দেশগুলো কী ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে, সে অনুযায়ী আমাদেরও ব্যবস্থা নিতে হবে। মাধ্যমিকে টেলিভিশনে ক্লাস প্রচার করা হলেও শিক্ষার্থীরা সেটি নিয়মিত দেখছে কিনা সেটি নিশ্চিত করতে হবে অভিভাবকদের।

শিক্ষাবিদদের পরামর্শ শিক্ষাবর্ষের প্রথমার্ধে করোনা সংকট নিরসন সম্ভব হলে দ্বিতীয়ার্ধে বিশেষ ব্যবস্থায় এ শিক্ষাবর্ষ শেষ করতে হবে। এক্ষেত্রে সিলেবাস কমিয়ে আনা, পরবর্তী ছুটিগুলো সমন্বয় করা, পরীক্ষার সংখ্যাও কমিয়ে আনা যেতে পারে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, এখন শিক্ষাবর্ষের প্রথমার্ধ চলছে। যেহেতু এখন একটি সংকট চলছে, তাই আমাদের বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে কাটিয়ে উঠতে হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্লাস-পরীক্ষা কমিয়ে এনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিক্ষাবর্ষ শেষ করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে শিক্ষার্থীদের ওপর যেন বাড়তি চাপ না পড়ে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বর্ষপঞ্জি অনুসারে, রমজান, ঈদুল ফিতরসহ বেশকিছু ছুটি মিলিয়ে ২৫ এপ্রিল থেকে ৩০ মে পর্যন্ত ছুটি রয়েছে। এছাড়া এপ্রিলে শবেবরাত, স্টার সানডে ও পহেলা বৈশাখের ছুটি রয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটি ও সরকারি ছুটি বাদে ৪ থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত মাত্র ১৪ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। তাই করোনাভাইরাস রোধে এই ১৪ দিনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে চায় উভয় মন্ত্রণালয়। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নয়ন হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ঈদুল ফিতরের আগে আর খুলছে না বলে জানা যায়।

এদিকে দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি থাকতে পারে—এমন ধারণা থেকে এরই মধ্যে টেলিভিশনের মাধ্যমে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের দ্বারা ক্লাস সম্প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। কিছু বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে শিক্ষাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অনেক স্কুল থেকে অভিভাবকদের ফোন দিয়ে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা পর্যন্ত সিলেবাস সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। এমনকি স্কুল খুললেই পরীক্ষায় বসতে হবে বলে জানিয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান।


সর্বশেষ সংবাদ