প্রতি ৩ কিশোরীর একজন কখনো স্কুলে যায় না: ইউনিসেফ

  © ফাইল ফটো

বিশ্বজুড়ে দারিদ্র পরিবারগুলোর প্রতি তিনজন কিশোরীর মধ্যে একজন কখনো স্কুলে যায় না। জাতিসংঘ শিশু তহবিল- ইউনিসেফের নতুন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠেে এসেছে। এতে মানসম্পন্ন শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ থেকে আর্থিক অনটনসহ নানা প্রতিবন্ধকতা শিশুদের অব্যাহতভাবে বিরত রেখেছে বলে জানানো হয়েছে। 

‘শিক্ষার সংকট সমাধান: দরিদ্রতম শিশুদের শিক্ষার পেছনে আরও অর্থের যোগান দেওয়া জরুরি প্রয়োজন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আজ সোমবার (২০ জানুয়ারি) ইউনিসেফের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।

সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে শিক্ষার জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত অর্থ দরিদ্র ও ধনী পরিবারের শিশুর জন্যে ব্যয়ের হার যথাক্রমে ১৫ ও ২৭ শতাংশ। অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বার্বাডোস, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে এবং সুইডেনে ধনী ও দরিদ্র শ্রেণির মধ্যে শিক্ষা তহবিল সমানভাবে বণ্টন হয়।

এতে বলা হয়েছে, চরম দরিদ্র শিশুদের মানসম্পন্ন শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পাওয়া থেকে বিরত রাখার পেছনে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তারমধ্যে দারিদ্র্য, লিঙ্গ বৈষম্য, জাতিগত বা ভাষাগত কারণে বৈষম্য, স্কুল থেকে তাদের অবস্থানগত দূরত্ব,  শারীরিক অসামর্থ্যতা এবং দুর্বল অবকাঠামো।

শিক্ষার প্রতিটি ধাপে বাধা দারিদ্র্যকে স্থায়ী করে। এটি বৈশ্বিক শিক্ষা সংকটের অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি। এতে সরকারি শিক্ষা ব্যয় বণ্টনের ক্ষেত্রে বড় বৈষম্যের বিষয়টিও উঠে এসেছে।

এতে বলা হয়, তহবিলের সীমাবদ্ধতা এবং এর অসম বণ্টনের ফলে বিদ্যালয়ে বড় আকৃতির শ্রেণিকক্ষ, নিম্নমানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক, পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণের অভাব এবং স্কুলগুলোর দুর্বল অবকাঠামো রয়েছে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী উপস্থিতি, স্কুলে ভর্তি এবং শেখার ওপর এগুলো বিরূপ প্রভাব ফেলে।

ইউনিসেফের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দরিদ্রতম শিশুদের সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে স্কুলগুলো শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানে ব্যর্থ হয়। বিশ্বব্যাংকের তথ্য উল্লেখ করে এতে  বলা হয়, নিম্ন ও মধ্যম-আয়ের দেশে অর্ধেকের বেশি শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করার পরও সাধারণ গল্প পড়তে বা বুঝতে পারে না।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর জানান, প্রায় সব জায়গায় বিশ্বের দরিদ্রতম শিশুদের ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। সরকারি শিক্ষা ব্যয় অসম অনুপাতে ধনী পরিবারের শিশুদের পেছনে যেতে থাকলে, সবচেয়ে দরিদ্র শ্রেণির দারিদ্র্য থেকে মুক্তিলাভ, বিশ্বে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা এবং সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা শেখা এবং নিজ দেশের ‘অর্থনীতিতে’ অবদান রাখার প্রত্যাশা খুবই সামান্য।

তিনি জানান, ৪২ দেশের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তৈরি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দরিদ্রতম ২০ শতাংশ পরিবারের শিশুদের শিক্ষায় তহবিলের যে অর্থ ব্যয় হয়, তার প্রায় দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় হয় ধনী ২০ শতাংশ পরিবারের শিশুদের শিক্ষায়।’

তিনি বলেন, আফ্রিকার দশটি দেশে শিক্ষা ব্যয়ে সবচেয়ে বেশি বৈষম্য পাওয়া গেছে। সেখানে দরিদ্র পরিবারের তুলনায় সবচেয়ে ধনী পরিবারের শিশুদের শিক্ষার জন্য ব্যয় হয় চারগুণ বেশি অর্থ। গিনি ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে স্কুলের বাইরে থাকা শিশুদের হার বিশ্বে সর্বোচ্চ।