বন্যায় শত শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ

  © টিডিসি ফটো

প্রতি বছরই বন্যা ও জলাবদ্ধতার মতো বিভিন্ন দুর্যোগের কবলে পড়ে দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। চিত্র ব্যতিক্রম নয় এ বছরও। সম্প্রতি দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতেই বন্ধ হয়ে পড়েছে কয়েক’শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ভাঙনের ফলে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খোজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যার কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়ায় বিদ্যালয়ে যেতে পারছেন না শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আবার বন্যার কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিদ্যালয়ের আসবাবসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ। আবার কোথাও কোথাও ভাঙনে তলিয়ে যাচ্ছে খোদ বিদ্যালয় ভবনই।

এ অবস্থা থেকে দ্রুত উত্তরণ না করতে পারলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের। এ প্রসঙ্গেসাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, দেশে বন্যা-জলোচ্ছ্বাসের মতো দুর্যোগ এখন নিয়মিত ঘটনা। যদিও দুঃখজনক বিষয় হলো- দুর্যোগ মোকাবেলায় অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই কোর ধরনের প্রস্তুতি থাকে না। এর ফলে ক্ষতির আকারটা বড় হয়। এছাড়া দুর্যোগ পরবর্তী সময়েও সংকট নিরসনে দ্রুত কোন উদ্যোগ নেয়া হয় না। ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পুনঃনির্মাণে দীর্ঘসূত্রিতা পরিলক্ষিত হয়। ফলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হারও বেড়ে যায়।


গাইবান্ধায় আড়াই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ
গাইবান্ধার চার উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বন্যার কারণে জেলার চার উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকসহ আড়াই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরমধ্যে সরকারীভাবে শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বানভাসীদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে খোলা হয়েছে।

এছাড়া ব্রক্ষপুত্র, তিস্তা ও ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমাসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা। সরকারী হিসেবে সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের ১৫২টি চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের ১ লাখ ১২ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হিসেবে চার উপজেলায় পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ।


কুড়িগ্রামে ৩৮৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বন্যায় সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বসতভিটায় পানি ঢুকে পড়ায় বাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি ৯ উপজেলার ৩৮৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.শহিদুল ইসলাম জানান, বন্যার পানি প্রবেশের কারণে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী ও উলিপুর উপজেলায় সর্বাধিক সংখ্যক প্রাথমিক বিদ্যালয় পাঠদানের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই দুই উপজেলায় যথাক্রমে ৫৬ ও ৫১টি করে বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে।

অন্যদিকে সদর উপজেলায় ৩৫টি, ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় ১১টি, নাগেশ্বরী উপজেলায় ৩৪টি, ফুলবাড়ী উপজেলায় ৮টি, রাজারহাট উপজেলায় ৬টি, রৌমারী উপজেলায় ৩৮টি এবং রাজীবপুর উপজেলায় ৩৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় সাময়িকভাবে শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতটি বিদ্যালয় এবং নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়।


সিলেটে ২৫৪টি বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ
সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। বন্ধ হয়ে গেছে জেলার ২৫৪টি বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম। পানিতে ডুবে গেছে কোন কোন প্রতিষ্ঠানের ভবন। আবার কোন কোন স্কুল-কলেজে যাওয়ার রাস্তা গেছে ডুবে। সব মিলিয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাট ও সুনামগঞ্জের ৬টি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন কয়েক লাখ মানুষ।


সুনামগঞ্জে ২৬৮ স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা
সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বন্যার কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে স্কুল-কলেজের কার্যক্রম। পানিতে ডুবে গেছে কোন কোন প্রতিষ্ঠানের ভবন। আবার কোন কোন স্কুল-কলেজে যাওয়ার রাস্তা গেছে ডুবে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ২১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ।


জামালপুর ১৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত, বন্ধ ঘোষণা ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
টানা বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ী ঢলে জামালপুরে নদ নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ি উপজেলার যমুনা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ১৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বন্যার কারনে জেলার ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব এলাকার অন্তত ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। যমুনার তীব্র স্রোতে ইসলামপুরের চিনাডুলি ইউনিয়নের ৩টি সংযোগ সড়ক বাঁধ ভেঙ্গে গেছে।

বন্যা কবলিত এলাকার প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মেডিকেল টিম গঠন করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। বন্যা কবলিত এলাকায় শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গো খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যা দুর্গতদের জন্য জেলায় ৯০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২ লাখ টাকা ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।


সর্বশেষ সংবাদ