এ মাসেই নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি

এমপিওভুক্তির দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীরা রাজপথে নামেন একাধিকবার
এমপিওভুক্তির দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীরা রাজপথে নামেন একাধিকবার  © ফাইল ফটো

এ মাসেই নতুন করে এমপিওভুক্ত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর কার্যকর হবে আগামী ১ জুলাই থেকে। তবে এখন পর্যন্ত কতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবে তা নির্দিষ্ট করা হয়নি। সর্বশেষ ২০১০ সালের জুন মাসে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল।

এরপর থেকে এমপিওভুক্তির দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু সরকার নতুন প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দিতে পারেনি। সেই হিসেবে ৯ বছর পর ফের নন-এমপিও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্ত হতে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, বর্তমানে ২৬ হাজার ১৮০টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত আছে। এর মধ্যে স্কুল ১৬ হাজার ১৯৭টি, কলেজ দুই হাজার ৩৬৫টি, মাদ্রাসা সাত হাজার ৬১৮টি। এই খাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মোট বরাদ্দের ৬৫ শতাংশই ব্যয় হয় বলে জানা গেছে।

এদিকে, ২ হাজার ৭৬২ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির জন্য যোগ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। তবে সরকারের নীতিনির্ধারকদের বিশ্লেষণে ধাপে ধাপে এমপিওভুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত আলোচনায় ওঠে আসে। সে অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭৯৬টি প্রতিষ্ঠানের ভাগ্য খুলতে পারে। তবে বিষয়টি নির্ভর করছে নতুন প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে অর্থপ্রাপ্তি এবং পরবর্তী বছরে সেই বরাদ্দ অব্যাহত রাখার ওপরে।

জানা গেছে, গত বছরের ১২ জুন থেকে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওইদিন নন-এমপিও স্কুল ও কলেজ এমপিওভুক্তকরণের নীতিমালা এবং জনবল কাঠামো জারি করা হয়। এরপর একে একে মাদ্রাসা এবং কারিগরি প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা নীতিমালা প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চলে আসে। নির্বাচন সামনে রেখে এমপিওভুক্তির দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীরা রাজপথে নামেন। তখন শিক্ষকদের শান্ত করতে গত আগস্টে নীতিমালা অনুযায়ী নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অনলাইনে আবেদন চাওয়া হয়।

সরকারি আহ্বানে নন-এমপিওভুক্ত ৯ হাজার ৬১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তখন আবেদন করে। কিন্তু এত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনটিকে রেখে কোনটি বাদ দেয়া হবে, আর বাদ দিলে নির্বাচনের আগে শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়তে পারে-এমন আশঙ্কায় আবেদনকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর দেয়া তথ্য যাচাইয়ের নামে বিলম্বের কৌশল নেয়া হয়। কিন্তু সেই তথ্য যাচাই ছাড়াই এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, ৯ হাজার ৬১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২ হাজার ৭৬২টি এমপিও নীতিমালার তিনটি ধারায় বর্ণিত চার যোগ্যতার মানদ- পূরণ করেছে। এগুলোর মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল ৬১৫টি, মাধ্যমিক স্কুল ৭৯৮টি, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ৯১টি ও ডিগ্রি কলেজ ৪৪টি। এছাড়া আছে দাখিল মাদ্রাসা ৩৬২টি, আলিম মাদ্রাসা ১২২টি, ফাজিল মাদ্রাসা ৩৮টি এবং কামিল ২৯টি। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে এসএসসি ভোকেশনাল (হাইস্কুল সংযুক্ত) ১৪৬টি, এসএসসি ভোকেশনাল (স্বতন্ত্র) ৪৮টি, দাখিল মাদ্রাসা (সংযুক্ত) ২টি, এইচএসসি (ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা, সংযুক্ত) ৮৯টি, এইচএসসি (ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা, স্বতন্ত্র) ২৩৫টি এবং কৃষি ডিপ্লোমা ইন্সটিটিউট ৬২টি।

চারটি শর্ত হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পরীক্ষায় পাসের হার। প্রতিটি মানদণ্ডের জন্য ২৫ নম্বর রাখা হয়। তবে স্বীকৃতিতে ছাড় না দিলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংখ্যা আরও কমে ২ হাজার ৭৫৬টি হয় বলে জানা গেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানা গেছে, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওর জন্য আবেদন করেছে এর সবগুলোকে এমপিওভুক্ত করলে ৪ হাজার ৩৯০ কোটি ১২ লাখ ৫ হাজার টাকার প্রয়োজন। আর যদি যোগ্য বিবেচিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিও দেয়া হয় তাহলে লাগবে ১ হাজার ২০৭ কোটি ৬৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। যদি স্বীকৃতির মেয়াদ বিবেচনা না করে এমপিও দেয়া হয় তবে ব্যয় হবে ১ হাজার ২১০ কোটি ৩৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। এসব বিষয় উল্লেখ করে এমপিওভুক্তির জন্য টাকা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে অর্থপ্রাপ্তির ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আশ্বাস পেয়েছে। সে অনুযায়ী কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। কাজেই এখন শুধু ঘোষণার অপেক্ষা।

এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, শিক্ষকদের স্বার্থে যত দূর সম্ভব সব করার চেষ্টা করছে সরকার। ননএমপিও যতগুলো স্কুল-কলেজ যোগ্য সবগুলোই এমপিও করার চেষ্টা চলছে। এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্তির ঘোষণা শিগগিরই আসবে।


সর্বশেষ সংবাদ