ওয়েবসাইট হ্যাক করে এসএসসি পরীক্ষায় দুই ছাত্রী!

  © ফাইল ফটো

ময়মনসিংহে টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য দুই পরীক্ষার্থীর এসএসসির ফরম পূরণ করে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার খবরে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। জেলার গৌরীপুরে বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড হ্যাক করে অভিনব কৌশলে পরীক্ষায় অংশ নেয় তারা। এমন কৌশলে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ায় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড ও বিদ্যালয়সংশ্লিষ্ট সবাই এতে হতবাক। তবে সেই দুই ছাত্রী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে পরীক্ষা দিয়ে হল ত্যাগ করে। জানা গেছে, বিদ্যালয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অকৃতকার্য দুজনের প্রবেশপত্র গত রোববার গৌরীপুর রাজেন্দ্র কিশোর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষার কেন্দ্রে যায়। তাৎক্ষণিক কেন্দ্রসচিব মোছা. লুৎফা খাতুন ডৌহাখলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নরোত্তম চন্দ্র রায়কে বিষয়টি জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়ের ৩৮ জন পরীক্ষার্থী প্রবেশপত্র পরীক্ষার এক দিন আগে গত রোববার হাতে পায়। কিন্তু বোর্ডের কিছু কর্মচারী বিদ্যালয়ের পাসওয়ার্ড হ্যাক করে অকৃততার্য দুই পরীক্ষার্থীর ফরম পূরণ ও প্রবেশপত্র দিতে বিদ্যালয়ের ৩৮ জন পরীক্ষার্থীর ডেটা মুছে ফেলেন। এতে ভোগান্তিতে পড়েন তারা।

নরোত্তম চন্দ্র রায় বলেন, খবর পেয়ে সেদিনই এ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত বক্তব্যে আপত্তি জানান। দুজন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় ফরম পূরণ করেনি। সোনালি সেবার মাধ্যমে টাকাও জমা দেয়নি। এরপরও প্রবেশপত্র অনুমোদন হওয়ায় তিনি হতবাক।

পরে দুই শিক্ষার্থীকে তলব করা হলে তারা জানায়, শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারী মহসিন আলম ওরফে রনি ফরম পূরণ করতে সহায়তা করেছেন তাদেরকে। এসএসসি পরীক্ষার আগে বিদ্যালয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষায় ১৪ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছিল। সেজন্য তাদের ফরম পূরণ করতে দেয়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তারপরও অন্য উপায়ে ওই দুজন ফরম পূরণ করে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করে। পরে পরীক্ষায়ও অংশ নেয়। এ ঘটনায় অকৃতকার্য ১৪ জনের মধ্যে বাকি ১২ জন বিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার দাবিতে প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ের সামনে গোলযোগ সৃষ্টি করে।

ডৌহাখলা উচ্চবিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুল হক গণমাধ্যমকে জানান, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। দুজনকে পরীক্ষা দেওয়ার সঙ্গে জড়িত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

নিতাই চন্দ্র নামের এক অভিভাবক বলেন, যাঁরা অনৈতিক কাজে জড়িত, তাঁরাই কৌশলে দুই শিক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র দিতে অন্য পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র প্রদানে জটিলতার সৃষ্টি করেছে। আরেক অভিভাবক তোফাজ্জল হোসেনের দাবি, বোর্ডের কিছু কর্মচারীর ভুলের কারণে তাঁর সন্তানের লেখাপড়া বিঘ্ন হয়েছে। তাঁদের হতাশায় দিন কেটেছে, সন্তানেরা দিনভর কেঁদেছে।

ডৌহাখলা উচ্চবিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দশম শ্রেণির মোট ২৫৯ জন শিক্ষার্থী ছিল। চূড়ান্ত পরীক্ষায় কৃতকার্য হয় ২৪৫ জন। এসব শিক্ষার্থী যথানিয়মে ফরম পূরণ সম্পন্ন করে। তবে গত ২৩ জানুয়ারি বোর্ড থেকে প্রবেশপত্র সংগ্রহের পর দেখা যায়, ৩৮ জন নিয়মিত পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র আসেনি।

এরপর ৩৮ জনের প্রবেশপত্রের জন্য ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সহযোগিতায় শিক্ষক ও অভিভাবকেরা শিক্ষা বোর্ডে কয়েকবার যোগাযোগ করেন। পরে গত শনিবার ৩১ জনের এবং রোববার ৭ জনের প্রবেশপত্র সংগ্রহ করেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেঁজুতি ধর গণমাধ্যমকে বলেন, বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। দুই শিক্ষার্থীর নামে প্রবেশপত্র ইস্যু হওয়ায় তাদের পরীক্ষা দিতে কোনো বাধা নেই।

জানতে চাইলে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান গাজী হাসান কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হচ্ছে। বোর্ডের কোনো কর্মচারী জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেউ জড়িত থাকলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।


সর্বশেষ সংবাদ