টিউশন ফি সমস্যা কাটছে না, সিদ্ধান্তহীনতায় প্রশাসন

করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর থেকে বেসরকারি বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলোচনা মূলকেন্দ্র ছিল টিউশন ফি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রায় সাড়ে চার মাস পরও সমাধান হয়নি আলোচিত সমস্যাটি। ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ফি নিয়ে উভয়সংকটে পড়েছে স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কয়েকটি স্কুলের অভিভাবকেরা করোনাকালেও শিক্ষা ফি অর্ধেক করার দাবিতে আন্দোলন করছেন। তবে সাড়া মিলছে না।

অভিভাবকেরা বলছেন, তাঁরা এখন আর্থিক সংকটে পড়েছেন। এ জন্য সময় দিয়ে করোনাকালে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ফি অর্ধেক নেওয়া হোক। আর প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শিক্ষা ফি আদায় না করলে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া যাবে না।

করোনার কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্ধ চলছে। আপাতত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধের ঘোষণা থাকলেও সরকারি সূত্রগুলো বলছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না আসা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা নেই। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ক্ষতির মুখে পড়েছে। এর মধ্যে অনেকে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে। যদিও অভিভাবকদের অভিযোগ অনলাইন ক্লাস গুণগত মানের হচ্ছে না।

টিউশন ফি নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকদের মাঝে বিতর্ক চললেও শিক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হচ্ছে না। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, একেকটি স্কুলের ধরন একেক রকমের। অভিভাবকেরা যেমন সমস্যায় আছেন, আবার শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের বিষয়ও আছে। ফলে এখানে একটি নির্দেশনা দিয়ে সমস্যা সমাধান করা যাবে না। তাই তাঁরা বলছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকদের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতেই এই সমস্যা সমাধান করতে হবে।

শিক্ষা ফি (টিউশন ফি) ৫০ শতাংশ মওকুফ করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে সম্প্রতি রাজধানীতে মানববন্ধন করেছেন ইংরেজি মাধ্যমের আরেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাউথ ব্রিজ স্কুলের অভিভাবকেরা।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, দেশে মাধ্যমিকে পড়ছে ১ কোটি ৩৪ লাখের মতো ছেলেমেয়ে। স্কুল আছে ২১ হাজার, যার প্রায় ৯০ ভাগ বেসরকারি। এসব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অনেকগুলোতে প্রাথমিক স্তরও আছে। কলেজ আছে সাড়ে চার হাজারের মতো, শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪৪ লাখ।

এগুলোও বেশির ভাগ বেসরকারি। প্রাথমিক পর্যায়ের মোট শিক্ষার্থী প্রায় পৌনে দুই কোটি, যার সিংহভাগই অবশ্য সরকারি প্রাথমিক স্কুলে পড়ে। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেতনের ঝামেলা নেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল সমস্যা হলো ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলো পুরোটাই শিক্ষা ফির ওপর নির্ভর করে চলে। আর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যেগুলো এমপিওভুক্ত, সেগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা কেবল মূল বেতনসহ সামান্য কিছু ভাতা সরকার থেকে পান। বাকি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন হয় মূলত শিক্ষা ফি আদায়ের মাধ্যমে। তাই শিক্ষা ফি নিয়ে স্কুলগুলোও চাপে আছে।


সর্বশেষ সংবাদ