বার্ষিক পরীক্ষা পিছিয়ে ফেব্রুয়ারিতে!

করোনার বন্ধের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে দেশের শিক্ষার্থীরা। এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে কাজ করছেন শিক্ষা খাতের নীতিনির্ধারকরা। সিলেবাস কমিয়ে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সকল ছুটি বাতিল করে চলতি শিক্ষাবর্ষ ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করা অথবা চলতি শিক্ষাবর্ষ (২০২০) আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো— এই ‍দুটি বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে চিন্তা ভাবনা চলছে। আর দ্বিতীয় বিকল্পের ওপরই গুরুত্ব দিচ্ছেন নীতিনির্ধারকরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

চলতি শিক্ষাবর্ষ (২০২০) আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব গৃহীত হলে বার্ষিক পরীক্ষা ডিসেম্বরের পরিবর্তে আগামী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে। আর পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ (২০২১) মার্চ মাসে শুরু হবে।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কয়েক দফায় সময় বাড়িয়ে রোজা ও ঈদের ছুটিসহ তা ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে ঈদের পরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে না। ৩০ মে এর কাছাকাছি সময়ে গিয়ে পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

আর করোনাকালীন ক্ষতি পোষাতে করণীয় নির্ধারণের দায়িত্ব পড়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) উপর। এনসিটিবির শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞরা প্রথম বিকল্পের বিপক্ষে মত দিয়েছেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে সিলেবাস কমানোর বিপক্ষে তারা। ফলে চলতি শিক্ষাবর্ষ (২০২০) আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব গৃহীত হলে বার্ষিক পরীক্ষা ডিসেম্বরের পরিবর্তে আগামী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে। আর পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ (২০২১) মার্চ মাসে শুরু হবে।

দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এখনো নিশ্চিত কনো আভাস না পাওয়ায় সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌছতে বেগ পেতে হচ্ছে এনসিটিবিকে। চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘এরই মধ্যে কয়েকটি সভা হয়েছে। সেখানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ছিলেন। সেখানে মূলত দুটি প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু কবে নাগাদ করোনার প্রকোপ শেষ হবে আর কবে স্কুল-কলেজ খুলবে, সেটার ব্যাপারে আমরা মোটামুটি একটা ধারণা না পেলে সামনে এগোনো যাচ্ছে না। এ বিষয়ে আরও বৈঠক হবে।’

দুটি বিকল্প প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যদি আগস্ট বা সেপ্টেম্বরে স্কুল খুলে দেওয়া হয়, তাহলে এনসিটিবির প্রস্তাব ছিল, চলতি শিক্ষাবর্ষকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া। ফেব্রুয়ারিতেই বার্ষিক পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষা নেওয়া। এতে শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে পড়ে ও শিখে পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত হতে পারবে।

আর পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ ২০২১ সালের মার্চ থেকে শুরু করা। আগামী শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন ধরনের ছুটি কমিয়ে ১০ মাসে শিক্ষাবর্ষ শেষ করা। তবে বিকল্প প্রস্তাবও এসেছে। সেখানে ২০২০ সালের মধ্যেই সব পরীক্ষা শেষ করার কথা বলা হয়েছে। এতে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা ও ঐচ্ছিক ছুটি কমানোর কথা বলা হয়েছে। তবে কবে নাগাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারে, সেটা মোটামুটিভাবে জানতে পারলে এনসিটিবি চূড়ান্ত প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে।’

এদিকে প্রতি বছর নভেম্বর মাসের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী-পিইসি ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী-জেএসসি পরীক্ষা। কিন্তু প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা এগোচ্ছে না। এ অবস্থায় সিলেবাস শেষ করা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।

আর বিশেষজ্ঞদের অভিমত, প্রতিটি শ্রেণির সিলেবাস ওই শ্রেণির নির্ধারিত দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জন করে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য। সিলেবাস কমানো হলে নির্ধারিত জ্ঞান অর্জিত হবে না। এতে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। এ ছাড়া তাড়াহুড়ো করে সিলেবাস শেষ করলে শিক্ষর্থীরা ওই জ্ঞান ধারণ করতে পারবে না। তাই তারা শিক্ষাবর্ষ অন্তত দুই মাস বাড়ানোর পক্ষে।


সর্বশেষ সংবাদ