করোনাভাইরাস: উৎকণ্ঠায় ১১ লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থী

  © ফাইল ফটো

পূর্ব ঘোষিত রুটিন অনুযায়ী আগামী ১ এপ্রিল চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে দেশে নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় যথাসময়ে পরীক্ষা শুরু হবে কি না তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন পরীক্ষায় বসতে যাওয়া ১১ লাখেরও বেশি পরীক্ষার্থী। ইতোমধ্যে বুধবার থেকে সারাদেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে এখনও সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে। সব মিলিয়ে পরস্থিতি পর্যাবেক্ষণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামী সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা স্থগিত করার ঘোষণা দেবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, আরও কয়েকদিন দেখে তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। আর পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

আগামী ১ এপ্রিল থেকে ৪ মে পর্যন্ত এইচএসসির তত্ত্বীয় এবং ৫ থেকে ১৩ মের মধ্যে সব ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ করার সূচি নির্ধারিত আছে। নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আতঙ্কের মধ্যে গত ১৬ মার্চ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে সরকার।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। পরীক্ষা পেছানো হবে কি না, তা পরীক্ষা শুরুর আগে জানিয়ে দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সে বিষয়টি আমাদের মাথায় রয়েছে। পরীক্ষা পেছানোর প্রয়োজন হলে অবশ্যই আমরা পিছিয়ে দেব।

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পরীক্ষা পেছানোর প্রয়োজন হলে তো শুধু ঘোষণা দিলেই হবে। আমরা সবকিছুই মাথায় রাখছি।

বুধবার প্রথমবারের মতো দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা আয়োজন করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত জাতীয় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা স্থগিত করেছে। এর আগে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের অধীন কেন্দ্র সচিবদের সভাও স্থগিত করা হয়েছে। 

পরীক্ষা পেছানোর ব্যাপারে গত সোমবার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, আমরা অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে দেখব। এজন্য পরীক্ষার তারিখের কাছাকাছি সময় গিয়ে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সতর্কতামূলক যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

অভিভাবকরা জানান, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা স্কুল-কলেজের পাশাপাশি কোচিং ও প্রাইভেট নির্ভর। সহপাঠীদের সঙ্গেও শেয়ারিং করে পড়াশোনা করে। সরকার শিক্ষার্থীদের বাসায় থাকতে বলেছে। এখন তারা কীভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাবে- প্রশ্ন রাখেন অভিভাবকরা। শেষ ১৫ দিন একজন পরীক্ষার্থীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় শর্ট সাজেশন্স তৈরি, বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ারিং করে বিশেষ প্রস্তুতি নেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণার পর পরীক্ষার্থীরা বাসাতেই অবস্থান করছেন। তারা শিক্ষকদের কাছেও যেতে পারছেন না। এতে তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি বিঘ্নিত হচ্ছে।

রাজধানীর ইমপেরিয়াল কলেজের এক পরীক্ষার্থীর মা ঝুনু জাহাঙ্গীর বলেন, সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতদিন অনেক ভয় নিয়ে মেয়েকে কলেজ ও কোচিংয়ে পাঠিয়েছি। পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হোক। রোজার ছুটিতেও পরীক্ষা নিতে পারে। তা না হলে আমাদের আতঙ্কের মধ্যেই থাকতে হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণায় সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আরেক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক আনোয়ার সাহাদাত হোসেন বলেন, সরকার ঘোষিত বন্ধের পর দিনই এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। আতঙ্কের মধ্যে পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নিতে পারবেন না। কলেজ ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকায় লেখাপড়াও বিঘ্নিত হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হলে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হোক। কলেজ বন্ধ থাকায় প্রবেশপত্র সংগ্রহ করবে কী করে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সরকার শিক্ষার্থীদের ঘরে থাকতে বলেছে। আবার কলেজ থেকে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে বলেছে। কলেজে গেলে ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম বলেন, বিদেশের মতো আমাদের সব শিক্ষার্থীর প্রযুক্তি সুবিধা নেই যে তাদের অনলাইনে পাঠদান করা যাবে। আজ বোর্ড থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র বিতরণ করেছে। পরীক্ষার্থীদের কলেজে এসে প্রবেশপত্র নিতে বলা হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কলেজে বিশেষ প্রস্তুতি আগেই শেষ হয়েছে। এখন তারা বাসায় বসে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নেবে।


সর্বশেষ সংবাদ