অনলাইনে সার্টিফিকেট সংশোধন যেভাবে...

সার্টিফিকেটে নিজের নাম তো বটেই, বাবা-মায়ের নাম, জন্মতারিখসহ যেকোনো তথ্য ভুল লেখা হলে দুশ্চিন্তায় পড়েন অনেকে। এইগুলো সংশোধনে নানা কর্মযজ্ঞের আয়োজন করতে হতো। এখন থেকে সার্টিফিকেটের ভুল সংশোধন করা যাচ্ছে অনলাইনে। দালাল বা তৃতীয় পক্ষের হয়রানিতে না পড়ে নিজেই করুন অনলাইন আবেদন। এর জন্য কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে।

নোটারি বা এফিডেভিট: সার্টিফিকেটে নাম বা জন্মতারিখের ভুল সংশোধনের জন্য প্রথমে আইনজীবীর মাধ্যমে নোটারি বা এফিডেভিট করাতে হবে। প্রার্থীর নিজের নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে তার বয়স যদি ১৮ বছরের বেশি হয়, তাহলে তিনি নিজেই এফিডেভিট করতে পারবেন।

প্রার্থীর বয়স যদি ১৮ বছর পূর্ণ না হয় বা প্রার্থী যদি তার মা-বাবার নাম সংশোধন করতে চান, তাহলে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে প্রার্থীর বাবা কর্তৃক প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিকের কাছ থেকে এফিডেভিট করতে হবে।

প্রত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি: হলফনামা সম্পাদন হয়ে গেলে তা নিয়ে একটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীর সার্টিফিকেট নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, শাখা, পরীক্ষার সাল, পরীক্ষা কেন্দ্রের নাম, রোল নম্বর, বোর্ডের নাম এবং জন্মতারিখ উল্লেখ করে যা সংশোধন করতে চান (প্রার্থীর নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম বা জন্মতারিখ) তা সংক্ষেপে উল্লেখ করতে হবে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ: এবার নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। অনলাইনে আবেদন করতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। কারণ তাদের ইআইআইএন (EIIN) ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সার্ভারে ঢুকতে হবে। তাই উপরে উল্লেখিত দুটি কাগজ ও আপনার বাবা-মায়ের নাম সংশোধন হলে তাদের সার্টিফিকেট বা ন্যাশনাল আইডি কার্ড, আপনার নিজের হলে জন্ম সনদ নিয়ে সরাসরি আপনার প্রতিষ্ঠানে চলে যান।

প্রতিষ্ঠানের কাজ: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বরাবর আবেদন করুন। তিনি প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার অপারেটরকে অনলাইন আবেদন করার জন্য নির্দেশনা দেবেন। এরপর ডুকুমেন্ট স্ক্যান করে আবেদন করে দেবেন এবং ফোনে ম্যাসেজ চলে আসবে সঙ্গে সঙ্গে। তারপর সোনালী ব্যাংকে আবেদন ফি জমা দেওয়ার জন্য একটা রশিদ দেবেন। ৫৫৮ টাকা জমা দিতে হবে (প্রতিটির জন্য)। টাকা জমা দেওয়ার পর রশিদ অবশ্যই যত্ন করে রাখতে হবে। আবেদন ফি জমা না দিলে আবেদন গৃহীত হবে না। আবেদন ফি জমা করার পর শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আলাদা একটা প্রোফাইল তৈরি হবে।

আপডেট জানুন: এবার ওই প্রোফাইলে লগ ইন করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই সর্বশেষ অবস্থা জানা যাবে। টাকা জমা দেওয়ার পর আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ৩ মাস বা এর বেশি সময় লাগতে পারে। যখন কাজ শেষ হবে তখন ফোনে ম্যাসেজ চলে আসবে এবং প্রোফাইলে লগ ইন করলে সেখানে নতুন একটা অপশন আসবে ‘ডুকুমেন্ট উত্তোলন’। সেই অপশনে গিয়ে ডকুমেন্টস উত্তোলনের আবেদন করতে হবে। এবার কলেজে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, কারণ এখন সাইটে লগ ইনের জন্য যে পাসওয়ার্ড আছে, সেখানে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে যেই ডকুমেন্ট উত্তোলন করতে চান সেটার জন্য ঘরে বসেই আবেদন করুন৷

নতুন সার্টিফিকেট উত্তোলন: আবেদন করার পর উত্তোলন ফি বাবদ ৫৫৮ টাকার সোনালি ব্যাংকে পে করার জন্য একটা ডকুমেন্টস পেয়ে যাবেন। সেটা নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে আগের মতোই ফি জমা দিতে হবে। কাজ শেষ, এবার ১ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। তারপর ফোনে ম্যাসেজ পাবেন ডকুমেন্টস রেডি। তখন প্রোফাইলে লগ ইন করে উত্তোলন করার চূড়ান্ত ডকুমেন্টস আছে সেটা ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে শিক্ষা বোর্ডে অরিজিনাল সার্টিফিকেট জমা দিন। পরদিন আবার অফিসে গিয়ে চূড়ান্ত ডুকুমেন্টস ও ব্যাংকে যে ফি জমা দিয়েছেন সেটার মূল কপি জমা দিয়ে বুঝে নিন নতুন সংশোধিত সার্টিফিকেট।

মোট যত টাকা খরচ হবে: অনলাইনে সার্টিফিকেটের নাম সংশোধনের খরচ হবে মোট ৩০৩২ টাকা। এর মধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ৩০০ টাকা (কম বেশি লাগতে পারে); নোটারি পাবলিক ৫০০ টাকা (কম বেশি লাগতে পারে); আবেদেন ফি ৫৫৮×২= ১১১৬ টাকা (এসএসসি ও এইচএসসি) এবং সার্টিফিকেট উত্তোলন ফি ৫৫৮×২= ১১১৬ টাকা (২টি)