অপসংস্কৃতির কালো ছায়া দূর করবে ‘বিজ্ঞানপ্রিয় ডট কম’

মুহাম্মাদ শাওন মাহমুদ
মুহাম্মাদ শাওন মাহমুদ  © টিডিসি ফটো

বিজ্ঞানের প্রতি স্কুল-কলেজে যতটুকু আগ্রহ তৈরী হয়, তার থেকে বেশি আগ্রহ তৈরী হয় স্ব-অধ্যয়ন এবং ইন্টারনেটে শিক্ষার মাধ্যমে। এ সূত্রকে ভিত্তি করে বাংলা ভাষায় ই-লার্নিং সুবিধাকে আরো উন্নত পর্যায়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে মুহাম্মাদ শাওন মাহমুদ প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘বিজ্ঞানপ্রিয় ডট কম’।

‘শিখি ও শেখাই’ স্লোগানে যাত্রা শুরু করে বাংলা ভাষায় অনলাইনে বিজ্ঞান শেখা এবং খোলামেলা আলোচনা করার সবথেকে সহজ ও সাজানো-গোছানো মাধ্যম এই বিজ্ঞানপ্রিয়। শুরুটা হয়েছিল ২০১৮ সালে। উদ্দেশ্য ছিল বাংলা ভাষায় এমন একটি নির্ভরযোগ্য সাইট নির্মাণ করা যেখানে যে কেউ বিনামূল্যে তার সৃজনশীল বিজ্ঞানচিন্তা সম্পর্কে সবাইকে জানাতে পারবে, শেখাতে পারবে, নিজে শিখতে পারবে এবং ভুল ধরতে পারবে।

এ উদ্দেশ্য মাথায় রেখে নিজেই ডিজাইন করে ফেলেন চমৎকার একটি ওয়েবসাইট। শুরুর দিকে তেমন কোন সাড়া না পেলেও সময়ের সাথে রীতিমত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিজ্ঞানপ্রিয়। আজ বিজ্ঞানপ্রিয়র ওয়েবসাইটে নিয়মিত পাঠকসংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। সেই সঙ্গে বিজ্ঞানশিক্ষাকে আরো সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলতে খুলে বসেছেন একটি ফেসবুক পেজ এবং গ্রুপ।

নিয়মিত বিজ্ঞানসম্পর্কিত গবেষণাভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে চমৎকার সব ইনফোগ্রাফ এবং ভিডিওচিত্র প্রকাশিত হয় বিজ্ঞানপ্রিয়র অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে। এমনকি ভিডিওর টপিক নিয়ে থাকে বিস্তর গবেষণার সুযোগ। তবে সবথেকে বড় চমকগুলো লুকিয়ে রয়েছে বিজ্ঞানপ্রিয়র অফিশিয়াল ফেসবুক গ্রুপটিতে। ফেসবুকেও পড়াশোনা হয় এ ধারণাটি আমাদের দেশে এখনও প্রতিষ্ঠিত না হলেও বিজ্ঞানপ্রিয় এই অসম্ভবকেই সম্ভব করে চলেছে প্রতিনিয়ত।

বর্তমানে বিজ্ঞানপ্রিয়র ফেসবুক গ্রুপে সদস্য সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষেরও বেশি। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫ শতাধিক বিজ্ঞানমূলক আর্টিকেল, ব্লগ ও স্টোরি প্রকাশিত হয় এই গ্রুপে। সেই সঙ্গে প্রতিদিন ১০০০ এর বেশি সংখ্যক বিজ্ঞানভিত্তিক প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয় এবং দেয়া হয় নানাবিধ ঘটনার সর্বোচ্চ যৌক্তিক সমাধান।

এছাড়া বিজ্ঞানশিক্ষাকে আরো আনন্দঘন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন টপিকের উপর আয়োজন করা হয় মাসিক কন্টেস্ট, থাকে চমৎকার সব টাস্ক। গ্রুপে আসা তথ্যগুলোর সত্যতা যাচাই থেকে শুরু করে সহস্র জ্ঞানপিপাসুর কৌতূহল মেটানোর পেঁছনে কাজ করে যাচ্ছে একটি প্রাণবন্ত টিম। এই টিমটিই মূলত বিজ্ঞানপ্রিয়র প্রাণ। এই টিমের সম্মিলিত ও নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টাই বিজ্ঞানপ্রিয়কে দেশ ও দেশের বাইরের বাঙালি সমাজে এতটা জনপ্রিয় করে তুলেছে।

বিজ্ঞানপ্রিয়র প্রতিষ্ঠালগ্নে মুহাম্মাদ শাওন মাহমুদ ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি রপ্ত করে ফেলেছিলেন গ্রাফিক ডিজাইনিং এবং ওয়েব ডেভলপিং স্কিল। বিশ্বব্যাপী ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিংয়ের উন্মুক্ত সুযোগ থাকলেও তিনি মূলত মাতৃভাষা ও বিজ্ঞানের স্বার্থে স্ব-উদ্যোগে কিছু করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন।

বিজ্ঞানপ্রিয়র আইডিয়া কীভাবে এলো জানতে চাইলে শাওন বলেন, আমি বিজ্ঞানকে ভালোবাসি। তার থেকেও বেশি ভালোবাসি মায়ের ভাষাটিকে। ছোটবেলা থেকেই বাবা শেখাতেন মুক্তিযোদ্ধাদের মত দেশের স্বার্থে কিছু করে তারপর মৃত্যুকে বরণ করতে হবে। বাবার আদর্শ এবং নিজ ভাষার প্রতি প্রবল ভালোবাসা বুকে নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু করতে চেয়েছিলাম।

শাওন বলেন, কিন্তু বিজ্ঞানপ্রিয়র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার পরে বুঝতে পারি বাংলাদেশে অজস্র বিজ্ঞানমস্তিষ্ক রয়েছে যারা ঝড়ে যাচ্ছে চিরাচরিত শিক্ষা-দূর্নীতির প্রভাবে। তাদের প্রতি ব্যাপক দায়িত্ব রয়েছে আমার। আমার দায়িত্ব, হাজারও দুর্নীতির ভীড়ে সঠিক বিজ্ঞানমনস্কটি খুঁজে বের করা, দেশের আনাচে-কানাচে পড়ে থাকা বিজ্ঞানমনস্ক রত্নগুলোকে তুলে এনে সবার সামনে নিবেদন করা। বিজ্ঞানের প্রতিনিধি তৈরী করে সাধারণ মানুষগুলোকে বিজ্ঞাননির্ভর করতে শিখিয়ে দেশ থেকে সমূলে অপসংস্কৃতির কালো ছায়াকে দূরীভূত করা।

বিজ্ঞানপ্রিয় ডট কমের একজন নিয়মিত পাঠক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ছাত্র মুস্তাফিজুর রহমানের কাছে বিজ্ঞানপ্রিয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনলাইনে বাংলা ভাষায় এতটা সাজানো-গোছানো ইন্টারফেস হাতে গোনা অল্প কয়েকটিই আছে। বিজ্ঞানপ্রিয়র প্রতিটি সোশ্যাল প্লাটফর্ম পরিকল্পিত ও নিয়মতান্ত্রিকতার মাধ্যমে পরিচালিত। এ বিষয়টিই মুগ্ধ করে আমাকে।


সর্বশেষ সংবাদ