সফল অনলাইন মিটিং যেভাবে সম্পন্ন করবেন

সারা বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী চলছে এবং এই ভাইরাস প্রায় ২১৬টি দেশে বিস্তার লাভ করেছে। করোনাভাইরাস আক্রমনের কারণে আমাদের জীবন যাপনেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। করোনা সংক্রমণ রোধে বেশিরভাগ দেশে লকডাউন চালু করা হয়েছে ফলে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, আদালত ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কিন্তু এভাবে কতদিন চলা সম্ভব জীবীকা বিহীন, তাইতো জীবীকার তাগিদে ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অনলাইনে অফিস করছেন অনেকেই।

অনলাইনে অফিস করতে আমরা অনেকই বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। কেননা আমরা অনলাইন মিটিংয়ে অভ্যস্ত নই মোটেও যেটি আমাদের বিড়ম্বনার একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আজকে আমি অনলাইন মিটিংয়ের আদবকেতা সম্পর্কে বলার চেষ্টা করবো। একটি সফল অনলাইন মিটিং সম্পন্ন করার জন্য যেসকল বিষয় মাথায় রাখা তা নিম্নে তুলে ধরা হলো—

সঠিক সফটওয়্যার ব্যবহার করুন
অনলাইন মিটিং সম্পন্ন করার জন্য বর্তমান বিশ্বে নানা ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহৃত হচ্ছে। কোনটি আসলে আপনার প্রয়োজন সেটি নিজেই বাছাই করতে হবে। তাছাড়া কি কি ফিচার আপনার দরকার সেটিও আপনিই জানেন সুতরাং একটি অনলাইন মিটিং শুরু করার আগে সঠিক সফটওয়্যার নির্বাচন খুবই জরুরী। আপনাদের সুবিধার জন্য কিছু অনলাইন কনফারেন্সিং সফটওয়্যারের নাম এবং কাজের ধরন সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো—

জুম: জুম একটি সহজলভ্য সফটওয়্যার যা আপনি ফ্রিতে ব্যবহার করতে পারবেন। এটি একসাথে ১০০০ জন অংশগ্রহনকারী ব্যক্তি ও ১০,০০০ জন দর্শক নিয়ে মিটিং সম্পন্ন করার সক্ষমতা রাখে। এই ফিচারটিই মূলত এই সফটওয়্যারটিকে সব থেকে বেশি ব্যবহৃত সফটওয়্যারে পরিণত করেছে। অনলাইন ক্লাস করার জন্য এটি একটি উপযুক্ত সফটওয়্যার।

গুগল মিট: এই সফটওয়্যারটি মূলত গুগল হ্যাংআউটের প্রফেশনাল ভার্সন যার সাথে রয়েছে জি-সুইট। এটির মাধ্যমে সর্বোচ্চ ২৫০ জন অংশগ্রহনকারী নিয়ে মিটিং সম্পন্ন করা সম্ভব। এছাড়াও এটিতে স্বয়ংক্রিয় ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

মাইক্রোসফট টিমস: এটিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই টেকসই কিন্তু সফটওয়্যারটি বেশ ব্যয়বহুল। তাছাড়া এটিতে প্রায় সবধরনের ফিচার রয়েছে যেগুলো আমাদের দরকার।

ওয়েবএক্স: এই সফটওয়্যারটি একদম ফ্রি এবং এতে ১০০ জন অংশগ্রহনকারী ব্যক্তি নিয়ে মিটিং করা সম্ভব। ওয়েবএক্স এর মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্সিং, ওয়েবইনার, কল দেওয়া ও স্ক্রিন শেয়ারিং এগুলো সবই করা সম্ভব।

ডিসকর্ড: এটিতে ৫০ জন লোক একসাথে অংশগ্রহন করতে পারবে একটি অনলাইন মিটিংয়ে।

নির্দিষ্ট নিয়ম তৈরি করে নিন: মিটিং যতই ছোট হোক না কেন মিটিং শুরু করার পূর্বে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম তৈরি করে নিন যাতে কেউ মিটিং চলাকালীন সময়ে অপেশাদারিত্বের পরিচয় না দেয়। খুব সাধারন কিছু নিয়ম যেমন মোবাইল নিরব করে রাখা, মিটিং চলাকালীন অযাচিত কথা না বলা, আপনার পাশে যাতে সবকিছু নিরব থাকে সে ব্যবস্থা করা এবং মিটিং চলাকালীন অন্য কোন কাজ না করা ইত্যাদি নিয়মগুলো সকলেরই মেনে চলা উচিত। এছাড়া উচ্চ শব্দ যুক্ত স্থানে বসে কখনো অনলাইন মিটিংয়ে অংশ্রগ্রহন করবেন না। সকলের জন্য নূন্যতম একটি কম্পিউটার বা স্মার্টফোন, মাইক্রোফোন, ওয়েবক্যাম ও দ্রুত গতির ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করুন।

একটি আলোচ্যসূচী তৈরি করুন: একটি মিটিংয়ে যে সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে সেগুলো নোট করে ফেলুন। ক্রমানুসারে লিখে ফেলুন যাতে আলোচনার সময় কোন ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়। বিষয়গুলোর পাশ সময়ও লিখে ফেলুন ফলে সময়ের দিকে খেয়াল থাকবে এবং নির্দিষ্ট সময়েল মধ্যে সবগুলো বিষয় কভার করতে পারবেন।

সকলকে মিটিংয়ের পূর্বে অবহিত করুন: করোনকালীন সময়ে প্রায় সকলেই যেহেতু বাড়িতে অবস্থান করছে তাই পরিবারের সাথে ব্যস্ত থাকাটাই স্বাভাবিক। এই জন্য মিটিংয়ের পূর্বে সকলের সুবিধা অসুবিধা এবং সময় জেনে তারপর মিটিংয়ের সময় এবং তারিখ ঠিক করা উচিত। যাতে করে মোটামুটিভাবে সকলেই অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান। এক্ষেত্রে সঠিক যোগাযোগ দক্ষতা আপনার কাজকে আরো সহজ করে দিতে পারে। আর হ্যাঁ সকলের অংশগ্রহন বাধ্যতামূলক নয় এই ব্রত নিয়ে মিটিং আহবান করুন। এই কাজের জন্য World Time Buddy ও I World Clock Meeting Planner ব্যবহার করতে পারেন।

সকলকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করুন: আপনার টিম মেম্বারদের সকলকে মিটিংয়ে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করুন যাতে করে মিটিংটি ফলপ্রসু হয়। প্রত্যেকের পরিচয় এবং কাজ সম্পর্কে তাদের মতামত শুনুন। তাদেরকে প্রশ্ন করার বা কথা বলার সুযোগ দিন।

সকলকে সার মিটিংয়ের সারসংক্ষেপ প্রদান করুন: মিটিং শেষ হলে পুনরায় কি কি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়ে তা সংক্ষেপে তুলে ধরুন যাতে সহজে সবার মনে থাকে। প্রয়োজন আলোচনার বিষয়বস্তু, কাজের বিবরন ও কাজ জমা দেওয়ার তারিখ উল্লেখ করে সকলকে ইমেইল করে দিন।

লেখক, শিক্ষার্থী, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ইমেইলঃ billalanftiu@gmail.com


সর্বশেষ সংবাদ