অনলাইনে ট্রেনের টিকিট পাবেন যেভাবে

  © ফাইল ফটো

দীর্ঘ প্রায় আড়াই মাস বন্ধ থাকার পর আগামীকাল রোববার থেকে চালু হচ্ছে আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রতিটি ট্রেনের অর্ধেক টিকিট বিক্রি করা হবে বলে জানানো হয়েছে। সেটিও অনলাইনে বিক্রি করা হবে। অর্থাৎ স্টেশনের প্লাটফর্মে কোন টিকেট বিক্রি করা হবে না।

অনেকেই অনলাইনে কীভাবে ট্রেনের টিকেট কাটতে হয় সেই প্রসেসটি জানেন না। অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটতে হলে বাংলাদেশ রেলওয়ের নির্দিষ্ট প্লাটফর্মে একজনের একাউন্ট থাকা জরুরি। নিম্নে একাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে টাকা পরিশোধ পর্যন্ত যাবতীয় প্রসেসটি তুলে ধরা হলো...

ওয়েবসাইট
বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট esheba.cnsbd.com এ ঢুকতে হবে। ঢুকলেই একটি পেজে দুটি অপশন, একটি সাইন ইন, অন্যটি সাইন আপ। যাদের আইডি খোলা আছে তারা ই-মেইল, পাসওয়ার্ড, সিকিউরিটি কোড দিয়ে সাইন ইন করে আইডিতে ঢুকবেন। যাদের আইডি খোলা নেই, তারা আইডি খুলতে সাইন আপে ক্লিক করবেন।

আইডি খুলতে
সাইন আপে ক্লিক করলে একটি পেজে নিয়ে যাবে। এখানে প্যাসেঞ্জারের নাম, ই-মেইল আইডি, পাসওয়ার্ড, আপনার ঠিকানা এবং মোবাইল নম্বর চাইবে। এ পাসওয়ার্ড আপনি যে আইডি খুলছেন, তার পাসওয়ার্ড। আর যাত্রীর নাম দিতে সতর্ক থাকবেন। যার নাম দেওয়া হবে, তিনিই হবেন আইডির এবং টিকিটের মালিক। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হলো মোবাইল নম্বর। একটি নম্বর থেকে একটি আইডি খোলা যাবে। এই নম্বর সবসময় অনলাইন টিকিটের পিডিএফে শো করবে। এগুলো সব ফিলাপ করে রেজিস্ট্রার বাটনে ক্লিক করবেন।

ই-মেইল
ব্রাউজারে ই-মেইলের জন্য আরেকটি ট্যাব খুলুন। রেজিস্ট্রারে ক্লিক করলেই please check ur email for verification link লেখা আসবে। আপনার ই-মেইলে ঢুকে দেখবেন বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে একটি কনফারমেশন লিংকসহ মেইল এসেছে। লিংকে ক্লিক করুন। আবার রেলওয়ের পেজে চলে যাবে। ই-মেইল, রেলওয়ে আইডির পাসওয়ার্ড, সিকিউরিটি কোড দিয়ে সাইন ইন করুন। আরেকটি পেজে নিবে। শেষ ধাপ হিসেবে আপনার মোবাইল নম্বরে ভেরিফিকেশন কোড আসবে। যদি না আসে, তবে send verification code এ ক্লিক করবেন। আপনার নম্বরে একটি ভেরিফিকেশন কোড যাবে, সেটি এই পেজে লিখবেন। লিখে check verification code এ ক্লিক করবেন। এতে আপনি একটি আইডির মালিক হয়ে গেলেন।

সাইন ইন
এবার আপনার ই-মেইল, পাসওয়ার্ড দিয়ে সাইন ইন করুন আপনার আইডিতে। সাইন ইন করলেই পোস্টের পিকের মত আপনার ড্যাশবোর্ড আসবে। গত একমাসে আপনি কোন কোন টিকিট কাটতে পেরেছেন। কোন টিকিট কাটতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন তা শো করবে। পাশাপাশি ড্যাশবোর্ডে থাকবে ফেয়ার কোয়েরি, ট্রেইন রুট, চেঞ্জ পাসওয়ার্ড এবং পারচেজ টিকিট অপশন। যেটা দরকার সেটাই ক্লিক করুন।

পাসওয়ার্ড চেঞ্জ
যদি আপনার কাছে আইডি ইনসিকিওর লাগে, তবে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে চেঞ্জ পাসওয়ার্ড এ ক্লিক করবেন। এখানে আপনার পুরাতন পাসওয়ার্ড, নতুন পাসওয়ার্ড দিয়ে চেঞ্জ বাটনে ক্লিক করলেই চেঞ্জ হয়ে যাবে।

টিকিট কাটা
টিকিট কাটতে চাইলে Purchase Ticket অপশনে ক্লিক করুন। ক্লিক করলে একটি পেজে ঢুকবেন। সেখানে Station from এবং Station to সিলেক্ট করবেন। ভ্রমণের তারিখ সিলেক্ট করবেন। এবার ক্লাস বাটনে ক্লিক করবেন। আপনার যে ধরনের টিকিট দরকার, সেটা সিলেক্ট করবেন। সবশেষে search train বাটনে ক্লিক করবেন।

ট্রেন সিলেকশন
আপনি যে তারিখে যে রুটে সিলেকশন দিয়েছেন; সে রুটে এক বা একাধিক ট্রেন আছে। কোনটা কখন ছাড়বে সব দেখাবে এবার। এখন আপনি যে ট্রেনে ভ্রমণ করতে চান সেটার অপশনে কতজন এডাল্ট, কতজন বাচ্চা এগুলো সিলেক্ট করবেন। সর্বোচ্চ চারজন সিলেক্ট করতে পারবেন। এডাল্ট এবং বাচ্চাসহ মোট ৪ জনের বেশির টিকিট আপনাকে দেওয়া হবে না।

সিলেকশন
এবার আসি টিকিট সিলেকশন। সিলেকশনে দুটি অপশন থাকবে- Auto Selection ও Seat Selection। যদি অটো সিলেকশন সিলেক্ট করেন, সার্ভার কম্পিউটার আপনাকে এভেইলএবল টিকিট থেকে যেকোনো সিট দিয়ে দেবে। কিন্তু সিট সিলেকশনে ক্লিক করলে আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী সিট সিলেক্ট করতে পারবেন।

সিট সিলেকশন
সিট সিলেকশনে ক্লিক করলে আপনাকে নির্ধারণ করা বগির বা বগিগুলোর সিট প্লান দেখাবে। যেসব সিট কালো দেখবেন সেগুলো কাউন্টারের জন্য। যেসব সিট লাল ও সবুজ সেগুলো অনলাইনের জন্য। লাল মানে অলরেডি সিট বিক্রি হয়ে গেছে, সবুজগুলো এখনও আপনি কিনতে পারবেন। এখান থেকে আপনার পছন্দমতো সিট বা সিটগুলো বাছাই করবেন। বাছাই করলে পাশের ছোট্ট ট্যাবে আপনার সিটগুলোর নম্বর, ভাড়া, ভ্যাট, সার্ভিস চার্জসহ মোট ভাড়া দেখাবে। এরপর আপনার লিঙ্গ (মেল বা ফিমেল), বয়স এগুলো সিলেক্ট বা ফিলাপ করবেন। অটো সিলেকশন করলে তারাই আপনাকে শো করবে কয়টি সিট আছে, ভাড়া কত? তবে কোন বগি কোন সিট এসব দেখাবে না। এরপর লিঙ্গ, বয়স সিলেক্ট করবেন। সিট সিলেকশন আপনি ভ্রমণের ১০ দিন আগে থেকে ৪৮ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত সময়ের মাঝে করতে পারবেন। ভ্রমণের ৪৮ ঘণ্টা আগ থেকে ভ্রমণের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত সিট সিলেকশন অপশন থাকবে না। তখন আপনাকে অটো সিলেকশনে যেতে হবে।

কাটার সময়
টিকিট কেনার সময় সকাল আটটা থেকে রাত দশটা। রাত দশটার পর থেকে টিকেট কাটার ট্রাই করলে ব্যর্থ হবেন।

পেমেন্ট
পেমেন্ট করতে পারবেন ভিসা, মাস্টারকার্ড, অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস, ডিবিবিএল নেক্সাস, ডিবিবিএল মোবাইল ব্যাংকিং থেকে। আপনি যেটা দিয়ে ভাড়া দিবেন, সেটাতে ক্লিক করবেন। একবার টিকিট কাটলে আগামী সাতদিন একই কার্ড থেকে টিকিট কাটতে পারবেন না। যদি কাটেন, তবে আপনার টাকা কেটে রেখে দেবে, কিন্তু কোন টিকিট দেবে না।

সাইন আউট
টিকিট কাটা হয়ে গেলে কম্পিউটার থেকে এবার সাইন আউট করে ফেলুন। এরপর ই-মেইলে ঢুকলে বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে একটি মেইল আসবে। সাথে একটি পিডিএফ ফাইল থাকবে। এটাই আপনার টিকিটের পিডিএফ। এখানে ডাউনলোড প্রিন্ট আউট অপশন আছে। পছন্দমতো পিডিএফ ডাউনলোড বা প্রিন্ট আউট করুন। যদি কাউন্টার থেকে টিকিটের হার্ডকপি নিতে চান তবে, মোবাইল নম্বর এবং টিকিটের পিন নম্বর একটা কাগজে লিখে কাউন্টারে দিন, তারা আপনাকে টিকিট দেবে।

পিডিএফে ভ্রমণ
যার নামে আইডি খোলা হয়েছে, টিকিটেও তার নামই হবে। যদি সে ভ্রমণ করে, তাহলে শুধু পিডিএফের প্রিন্ট কপি নিয়েই ভ্রমণ করতে পারবে, কাউন্টার থেকে টিকিট তোলা লাগবে না। কিন্তু অন্য কেউ এই পিডিএফ দিয়ে ভ্রমণ করতে পারবে না। এক্ষেত্রে তাকে কাউন্টার থেকে টিকিট তুলতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ