নতুন বাংলাদেশ তৈরিতে কাজ করবে ‘ডিজিটাল অর্থনীতি’

ফ্রিল্যান্সারদের আয় ১০ কোটি ডলার

  © ফাইল ফটো

দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নে বড় ধরনের অবদান রাখতে শুরু করেছে ‘ডিজিটাল অর্থনীতি’। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে আভাস দেওয়া হয়েছে, আউটসোর্সিংয়ের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক খাতে নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি রচিত হচ্ছে। শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি নারীদের কর্মসংস্থানেও অনন্য অবদান রাখছে এই ইন্টারনেটভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনলজির একজন শিক্ষকের লেখা ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, ডিজিটাল অর্থনীতিতে দুর্দান্ত অবদান রাখতে শুরু করেছে উন্নয়নশীল দেশগুলো; যেখানে প্রশ্নাতীতভাবে এশিয়া এগিয়ে রয়েছে।

অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, অনলাইন শ্রমশক্তির সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী হচ্ছে ভারত; যাদের প্রায় ২৪ শতাংশ গ্লোবাল ফ্রিল্যান্সার ওয়ার্কার আছে। এর পরের অবস্থানটিই বাংলাদেশের। অনলাইন শ্রমশক্তিতে যাদের অবদান হচ্ছে ১৬ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যাদের ফ্রিল্যান্সার হচ্ছে ১২ শতাংশ।

কম্পিউটার প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে ট্যাক্স প্রিপারেশন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনসহ বহু কাজ অনলাইন ফ্রিল্যান্সিয়ের আওতাভূক্ত। এ ধরনের কাজের সুবিধা অনেক। বিশেষ করে গ্রাহক ও কাজের পরিসর অনেক মুক্ত। বিশ্ব বাজারে কাজ করা যায়, কাজের স্থান নিয়েও ভোগান্তি নেই। আর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ফ্রিল্যান্সারদের ঢাকার মতো জনবহুল শহরের রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যাম ঠেলে অফিস যেতে হয় না। এতে করে নতুন চাকরি বাজার তৈরি হয়েছে, তৈরি হয়েছে অনেক সুযোগ। এশিয়াতেই এখন আউটসোর্সিংয়ের বাজার সবচেয়ে বড়।

ওই নিবন্ধে বলা হয়, খরচ ও ঝুঁকি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মতো অনেক উন্নত দেশও এখন বাংলাদেশের মতো আইটি আউটসোর্সিংয়ের দিকে ঝুঁকছে।

বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং পেশা দিনকে দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখতে এখান থেকে ভালো আয় করার সুযোগ রয়েছে। দ্রুতগতিতে বাংলাদেশে ডিজিটাল রুপ লাভ করায়, শহরে ইন্টারনেট সুবিধা, সরকারি-বেসরকারি প্রচারণায় এই খাত ধীরে ধীরে সবার কাছে পরিচিত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, অনলাইন কর্মী সরবরাহে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। এখানে নিয়মিত কাজ করছে ৫ লাখ ফ্রিল্যান্সার। আর মোট নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ৬ লাখ ৫০ হাজার।

বাংলাদেশ তথ্য-প্রযুক্তি অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর ফ্রিল্যান্সররা ১০ কোটি ডলার আয় করে থাকেন। একেক দেশ একেক বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে এই পেশা নিয়ে কাজ করছে। যেমন ভারতীয় ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতা প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট। আর বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা মূলত সেলস ও মার্কেটিং সেবায় পারদর্শী।

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৪ কোটি ৪০ লাখ তরুণদের প্রতি ১০ জনের একজন বেকার। প্রতিবছরই বিশ্ববিদ্যালয় পেরোনো হাজার হাজার শিক্ষার্থী মনের মতো চাকরি না পেয়ে বেকার হয়ে বসে আছেন। ফলে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে খুব সহজেই আইটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার সুযোগ রয়েছে তাদের সামনে।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই নিবন্ধে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, এতে করে তারা শুধু নিজের জীবিকাই নিশ্চিত করবে না, বরং দেশে অনেক বৈদেশিক মুদ্রাও অনবে সমর্থ হবে যা ‘নতুন বাংলাদেশ’র অর্থনৈতিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।

বাংলাদেশে এখন অনেক শিক্ষিত নারীকে সংসারের দায়িত্ব নিয়ে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। তাদের জন্যও ফ্রিল্যান্সিং দারুণ সুযোগ। ঘরে বসেই কাজের সুযোগ থাকায় বাংলাদেশের নারীরা এখন তাদের প্রথাগত সাংসারিক দায়িত্বের গণ্ডি পেরিয়ে ফ্রিল্যান্স কাজকে ক্যারিয়ার সংকটের সমাধান হিসেবে দেখছে।

গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের নারীরা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে এখন পুরুষের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য। আর নারীদের অংশগ্রহণে এই সেক্টর আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছে।

তথ্য-প্রযুক্তি সেবা নিশ্চিতে সরকার প্রতি জেলায় আইসিটি পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এখানে শ্রমব্যয় কম থাকায় বিশ্বের আউটসোর্সিং বাজারে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে বাংলাদেশ। তবে এখনও বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে বাংলাদেশের। সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। ফ্রিল্যান্সিংয়ে এমন সফটওয়্যারে কাজ করতে যেখানে মনোযোগ খুবই জরুরি। সেখানে বিদ্যুৎ চলে গেলে কাজের ক্ষতি হয়।

এছাড়া ইন্টারনেট সেবার মান নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের মূল্যও অনেক বেশি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এটা অনেক বড় সমস্যা। ব্র্রডব্যান্ড সুবিধা থাকলেও অনেক সময় তা ধীরগতির হয়। আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে টাকার সহজ লেনদেনের ব্যবস্থা। বিশেষ করে বিদেশ থেকে টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে সহজ কোনও উপায় নেই। আর নারী ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেলেও এখনও তা যথেষ্ট নয়।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই নিবন্ধে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বেকার তরুণদেরকে প্রযুক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ে উদ্বুদ্ধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তারা বলছে, এতে করে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন আরও বাস্তব হতে শুরু করবে। জনসম্পদকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ডিজিটাল অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে বাংলাদেশ।


সর্বশেষ সংবাদ