রঙতুলির আঁচড়ে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীর দৃষ্টিনন্দন ক্যালিগ্রাফি

  © টিডিসি ফটো

মুক্তো ঝরানো সুন্দর হাতের লেখার প্রতি দূর্বলতা কার নেই বলুনতো? আর সেই সুন্দর হাতের লেখাগুলোতে যখন শিল্পীর ছোঁয়া লাগে তখন সেটি তো রূপেগুণে অনন্য হয়ে উঠারই কথা। আর যদি সেটি হয়ে থাকে অক্ষর শিল্প তবে তো কথাই নেই! লাল, নীল, সবুজ সহ বিভিন্ন বাহারি রঙের সমাহারে অক্ষরগুলো যেন হয়ে উঠে আলোকোজ্জ্বল তারার ন্যায়। চোখ পড়তেই মনের অজান্তেই মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে আসে বাহ বেশ চমৎকার! বলছিলাম দৃষ্টিনন্দন ক্যালিগ্রাফির কথা।

‘ক্যালিগ্রাফি হচ্ছে সুন্দর হাতের লেখা অথবা চমৎকার করে লেখার একটা রুপ।’ এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, কোন অক্ষর বা শব্দকে সুশৃঙ্খল ও সুসজ্জিতরুপে ফুটিয়ে তোলা। এটি এমন শিল্প যাতে চমৎকার সব প্রতীক হাতের মাধ্যমে রচনা করা ও সেগুলোকে নিখুঁত ও সুন্দর করে সাজানো হয়। কখনো কখনো ক্যালিগ্রাফির লেখা পড়তে বা বুঝতে আপনার কষ্ট হতেই পারে কিন্তু ক্ষতির ষোলআনা উশুল হবে তাঁর চমৎকার ডিজাইন এবং মনোমুগ্ধকর দৃষ্টিনান্দনিকতায়।

পৃথীবীটা সুন্দরের পূজারী। সেই সুন্দরগুলো আরও চমৎকার রূপ ধারন করে শিল্পীমনের মাধ্যমে। সম্প্রতি সূরা ইয়াসিনের আরবি হরফ ক্যালিগ্রাফি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের অবয়ব ফুটিয়ে তুলেছেন ঢাকা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী মুনতাসীর হক মুন।

ইতোমধ্যেই বেশ সাড়া ফেলেছে তার এই ক্যালিগ্রাফিটি। এতে তিনি ব্যবহার করেছেন সূরা ইয়াসিনের ৮৩ আয়াত ও আল্লাহর গুণবাচক ২০-২২টি নাম। কোন প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও নিত্তান্তই শখের বসে ২০১৮ সালে ক্যালিওগ্রাফী শিল্পে হাতেখড়ি তার। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনেছে সব অসাড়তা। তার এই দৃষ্টিনন্দন ক্যালিগ্রাফি দূর থেকে দেখে কার্জন হলের প্রতিচ্ছবি মনে হলেও কাছ থেকে দেখার পর অবাক না হয়ে উপায় নেই৷ আল কোরআনের সূরা ইয়াসিনের ৮৩ আয়াতের মাধ্যমেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কার্জন হলের প্রতিচ্ছবি।

ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী ও তরুণ এই ক্যালিওগ্রাফী শিল্পী মুন জানালেন, প্রথমে পুরাতন নান্দনিক ও ইতিহাস বহনকারী ভবনগুলোর মধ্যে কার্জন হল ও তাঁরা মসজিদের ক্যালিগ্রাফি করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন তিনি। সময় স্বল্পতা ও আনুষঙ্গিক উপাদান না থাকায় তাঁরা মসজিদের উপর আর কাজ করা না হলেও কার্জন হলের ক্যালিগ্রাফি আঁকতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

বেশ সাড়া জাগানো কার্জন হলের ক্যালিওগ্রাফী সম্পর্কে মুনতাসীর হক মুন বলেন, আমি মূলত স্ট্রাকচারাল ক্যালিগ্রাফির উপর কাজ শুরু করি। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ছোটখাটো বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী ভবন, নান্দনিক ডিজাইন এবং প্রাচীন নানা জিনিস নিয়ে। প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী একটি ভবন হচ্ছে এই কার্জন হল তাই এটা নিয়ে আমার কাজ করা। আমি যেহেতু কোরআনের হাফেজ তাই কোরআন নিয়েই কাজটি করি। এতে পুরো সূরা ইয়াসিন ও আল্লাহর ২০-২২টি গুণবাচক নাম দিয়ে আঁকি।

তিনি আরও বলেন, কার্জন হল নিয়ে যখন আমি কাজ শুরু করি তখন দৈনিক প্রায় ১২-১৩ ঘণ্টা কাজ করতে হতো এটা নিয়ে। এভাবে কাজটি শেষ করতে প্রায় ১৪-১৫ দিন সময় লেগেছে। এখন পর্যন্ত আমি মোট চারটি ক্যালিগ্রাফী এক্সিবিশনে অংশ নিয়েছি যার মধ্যে তিনটি এক্সিবিশনই ছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আর বাকি একটি ধানমন্ডিতে হয়েছে।

২০১৮ সালের মার্চ মাসে ক্যালিগ্রাফি জগতে হাতেখড়ি উল্লেখ করে তরুন এই ক্যালিগ্রাফার বলেন, বিভিন্ন সময়ে পত্রিকা বা নানা জায়গায় প্রকাশিত ক্যালিগ্রাফিগুলো দেখতে ভালো লাগতো এবং আলাদা একটি টান কাজ করতো। সেই ভালোলাগা ও শখ থেকে ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজ শুরু করি। প্রথমদিকে পেন্সিল দিয়ে নিজের নাম বা কোরআনের আয়াতের ক্যালিওগ্রাফি করে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করতাম এবং সেখান থেকে ভালো উৎসাহ, অনুপ্রেরণা পেয়েছি। সেই অনুপ্রেরণা পেয়েই এই আর্টের উপর সময় বাড়িয়ে দিই এবং নিজ উদ্যোগেই কাজ শিখতে থাকি।

শুধু কার্জন হলই নয় বরং আরবি হরফের ক্যালিওগ্রাফি দিয়ে এঁকেছেন বাংলাদেশের পতাকা। এছাড়া ভবিষ্যতে জাতীয় সংসদ ভবন, ষাট গম্বুজ মসজিদ, ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মসজিদ সহ ঐতিহাসিক সব স্থাপনা নিয়েও ক্যালিগ্রাফি করার চিন্তা রয়েছে তরুন এই ক্যালিগ্রাফারের। মূল চিন্তাধারা আরবি ক্যালিগ্রাফি হলেও মাঝে মধ্যে বাংলা ও ইংরেজী ক্যালিগ্রাফি নিয়েও কাজ করেন বলেও জানান তিনি।

একেবারে শখের বসে শুরু করা ক্যালিগ্রাফি এখন সম্পূর্ণ পেশা হিসেবেই নিয়েছেন এই শিক্ষার্থী। ধরেছেন সংসাসের হাল। সর্বনিম্ন আড়াই হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ বিশ হাজার টাকা মূল্যের ক্যালিগ্রাফিও আঁকছেন তিনি।

শুধুমাত্র ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক ধারণার অনুপ্রেরণা নয়। শিল্পের জন্য শিল্প হিসেবেও ক্যালিগ্রাফি স্থান পেয়ছে তার হৃদয়ে। যান্ত্রিকতা আর প্রিন্টের এই যুগে নিপুন হাতের ছোঁয়ায় সাড়া জাগানো মুনের এই ক্যালিগ্রাফি বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে একদিন তুলে ধরবে সম্মানের সাথে এমন প্রত্যাশা তার সকল শুভাকাঙ্ক্ষীর।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence