০১ জুলাই ২০২০, ১২:৪০

একসময় ঢাবির ছেলে-মেয়েরা অনুমতি ছাড়া কথা বলতে পারত না

  © টিডিসি ফটো

আজ ১ জুলাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯২১ সালের এই দিনে তৎকালীন ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর পূর্ববঙ্গ এবং আসাম প্রদেশ সরকারের পরিত্যক্ত ভবন ও ঢাকা কলেজের (বর্তমান কার্জন হল) ভবনগুলোর সমন্বয়ে গড়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

তিনটি অনুষদ, ১২টি বিভাগ, ৬০ জন শিক্ষক, ৮৪৭ জন শিক্ষার্থী এবং তিনটি আবাসিক হল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। হাঁটি হাঁটি পা পা করে শতবর্ষে পদার্পণ করল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শতবছরে পদার্পণ করা দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়টির পথ চলা কেমন ছিল— এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মুখোমুখি হয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই নানা সংগ্রাম করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠা নিয়ে তো বটেই, প্রগতিশীলতা চর্চার জন্যও যুদ্ধ করতে হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে।’

যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সময় ছেলে-মেয়েদের প্রকাশ্যে কথা বলার অনুমতি ছিল না, সেই বিশ্ববিদ্যালয়েই পরবর্তীতে তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নানা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ছিদ্দিক ফারুক

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: ওয়ালাইকুমুস সালাম, ভালো আছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ শত বছরে পা দিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রাটা কীভাবে হয়েছিল?
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: প্রতিষ্ঠার শুরুতেই নানা প্রতিকূলতার মুখে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এর ফলে পূর্ব বাংলার মানুষ হতাশা প্রকাশ করে। ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সরকারের কাছে অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাশের আহ্বান জানান। ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ গভর্নর জেনারেল এ বিলে সম্মতি দেন। এ আইনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ভিত্তি। এ আইনের বাস্তবায়নের ফলাফল হিসেবে ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে, সংক্ষেপে যদি বলতেন। 
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: শুরু থেকে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আসতে হয়েছে। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে সব স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেছে। এরই প্রেক্ষিতে অনেক ধরনের বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। এই বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ পর্যায়ে এসেছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল তা কতটুকু সফল হয়েছে বলে মনে করেন?
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: পূর্ব বাংলার মানুষকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় তা করতে সক্ষম হয়েছে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অনস্বীকার্য।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ব্যর্থতা আছে কি?
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদানের পাশাপাশি কালো অধ্যায় ও ব্যর্থতা রয়েছে। যেমন- ১৯৪৯ সালে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা। এই বহিষ্কার ২০১০ সাল পর্যন্ত বহাল ছিল। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট তা বাতিল করে দেয়। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়েছে; তাদের উচ্ছিষ্ট ভোগ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী সৈয়দ সাজ্জাদ হোসাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়া এটা একটা লজ্জাকর বিষয়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে রক্ষণশীলতা ছিল তার কারণ কি? এ থেকে উত্তরণ কীভাবে হয়েছে?
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক পশ্চাৎপদতা এবং রক্ষণশীলতা ছিল। এর একটি হলো ছেলে-মেয়ে কোন ধরনের পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা করতে পারত না। কথা বলতে হলে প্রক্টরের অনুমতি প্রয়োজন ছিল। সব ধর্মের শিক্ষার্থীর কাছে এই রক্ষণশীলতা ছিল। পরবর্তীতে প্রগতিশীল ছাত্র-শিক্ষক মিলে আন্দোলন, সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে এই পশ্চাৎপদতা থেকে বেরিয়ে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। তাহলে হারানো স্বকীয়তা ফিরে পেতে কি করা উচিত?
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: সংক্ষেপে বলতে গেলে এ কথায় বলতে হয় যে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে রাজনৈতিক আদর্শ, চিন্তা, চেতনা এবং দর্শন ছিল তা অনুসরণ করে আগামীর পরিকল্পনা করলে বিশ্ববিদ্যালয় তার আসল চেহারা এবং স্বকীয়তা ফিরে পাবে বলে মনে করি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে ধন্যবাদ।
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: ধন্যবাদ, ফারুক।