ঢাবির করোনা ল্যাব আসলেই কি টাকার অভাবে বন্ধ?

ল্যাব উদ্বোধন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য
ল্যাব উদ্বোধন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য  © ফাইল ফটো

দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার শুরুর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্সেস (কারাস) ভবনে তৈরি করা ল্যাবে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ নমুনা পরীক্ষা করা হত। তবে এর একমাস পার না হতেই ল্যাবটি বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তো বটেই, সমালোচনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও।

তাদের ভাষ্য, দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানটির করোনা সংকট মোকাবিলায় যেখানে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করার কথা, সেখানে ল্যাবটি বন্ধ করে দেয়া কোনোভাবেই উচিত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তারা দাবি তুলেছেন, ল্যাবটি পুনরায় চালু করার পাশাপাশি ক্যাম্পাসের কয়েকটি স্থানে নমুনা সংগ্রহের বুথ স্থাপন করার।

জানা গেছে, করোনা ল্যাব বন্ধ করার ইস্যুতে গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভায় বিস্তর আলোচনা হয়েছে। সেখানে এ নিয়ে অনেকে কড়া সমালোচনা করেন। শিক্ষকরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধসহ জাতির সব সংকট মোকাবেলায় নেতৃত্ব দিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এখন বাজেট না থাকার মতো ঠুনকো অজুহাতে ল্যাব বন্ধ করা হলো কেন?

এসময় তারা ল্যাবটি পুনরায় চালু করার দাবি জানিয়ে কিছু পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এছাড়া ক্যাম্পাস এলাকা বা এর আশেপাশে নমুনা সংগ্রহের বুথ প্রতিষ্ঠার দাবি জানাবেন বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দাবিগুলো আজকালের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাাবে জানানো হবে বলে সভা সূত্রে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এই করোনা পরিস্থিতি তো আর সবসময় থাকবে না। একটা নির্দিষ্ট সময় থাকবে। টাকা অভাবে এটি বন্ধ হতে পারে না। আামরা চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনা পরীক্ষার ল্যাব চালু হোক।’

তিনি বলেন, ‘আমরা মিটিংয়ে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে যা কিছু করা প্রয়োজন, তার সবকিছুই করা হবে। টাকা সরকারকেও দিতে হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতার কারণে এটি বন্ধ হয়েছে। এখন আালোচনা করে সেটি আাবার চালু করতে হবে।’

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আর্থিক সঙ্কট না, বিভিন্ন বিভাগের যন্ত্রপাতি নিয়ে ল্যাবটি চালু করা হয়েছিল। এখন তাদেরকে গবেষণার কাজে সেগুলো ফেরত দেয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেকদের দিয়ে সেটি চালানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘অনেকগুলো ফ্যাক্টর মিলিয়ে ল্যাবটি বন্ধ হয়েছে। কারণ, গবেষণা কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো অন্যদের নিয়মিত গবেষণার যন্ত্রপাতি ছিল। আগের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়েই ল্যাবটি বন্ধ হয়েছে।’

ঢাবি উপাচার্য বলেন, ‘এরপরও আমি যদি কোনক্রমে ধারণা পেতাম যে, এটি প্রয়োজন- তাহলে অর্থ জোগাড় করা কঠিন কিছু ছিল না। এটি আমাদের প্রশাসনিকভাবে চালানো কঠিন। মূলত স্বেচ্ছাসেবী দিয়ে চালানো হয়। তবে আমাদের শিক্ষকরা কিংবা জাতীয়ভাবে যদি চায়, তাহলে বিষয়টি এমন না যে, বন্ধই রাখতে হবে। অন্য ল্যাবগুলোর কাজ বন্ধ থাকায় মূলত আরেকটি বিতর্ক এড়াতে করোনা পরীক্ষার ল্যাব বন্ধ করা হয়েছে।’

গত ১ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ল্যাবটি বন্ধ করার কথা নিশ্চিত করে কর্তৃপক্ষ। এর কারণ হিসেবে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান জানান, পূর্বের সিদ্ধান্ত মোতাবেক  ৩১ মে পর্যন্ত ল্যাবটি চালাানো হয়েছে, বন্ধের পেছনে আর্থিক কারণ ছিল না। তিনি বলেন, ল্যাবের মেশিনগুলো মাইক্রোবায়োলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগ থেকে আনা হয়েছিল। এগুলো নিয়মিত যে গবেষণা কার্যক্রম আছে, সেই গবেষণা কর্মে ফিরে যাবে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমাবদ্ধতা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অসহযোগিতা এবং পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতির অভাব ও অর্থ সঙ্কটের মতো কারণ জাানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাস রেসপন্স টেকনিক্যাল কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড.শরীফ আখতারুজ্জামান। এছাড়া দক্ষ জনবলের ঘাটতির কথাও উল্লেখ করেন তিনি। যদিও উপাচার্য অর্থিক সংকটের কথা স্বীকার করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজ শুরুকেই মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তের হতাশা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শরীফ উদ্দীন বলেন, ‘এভাবে ল্যাবটা বন্ধ করা ঠিক হয়নি। বরং সমস্যার সমাধান করে এইস সংকটের সময়ে সেটি চালু রাখা জরুরি ছিল। পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্যও পরীক্ষা করার সুযোগ রাখতে পারে।’

একই ধরনের মতামত জানিয়ে আরেক ছাত্র রাতুল বলেন, ‘পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে ল্যাবটি চালু রাখা দরকার। এতে করোনা সংকট মোকাবিলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখতে পারবে। দক্ষ জনবলের ঘাটতিসহ অন্য কোনো সমস্যা থাকলেও সেগুলোও দূর করতে হবে। এছাড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারে কর্তৃপক্ষ।


সর্বশেষ সংবাদ