গাছ কাটা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে ঢাবি শিক্ষার্থীরা, ভিন্ন যুক্তি কর্তৃপক্ষের

  © ফাইল ফটো

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। হলগুলোও ফাঁকা। এ পরিস্থিতির মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত সড়কের পাশের সবগুলো গাছ কেটে ফেলেছে সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য রাস্তা সম্প্রসারণ করতে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে।

এ নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, ক্যাস্পাস বন্ধের সুযোগ নিয়ে নির্বিচারে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। এর প্রতিবাদে ইতিমধ্যে ছাত্র ইউনিয়নসহ কয়েকটি সংগঠন সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে মানববন্ধনও করেছেন। অবশ্য অনেকে ভিন্নমতও পোষণ করেছেন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে মেট্রোরেল যাওয়া নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এখন গাছগুলো কেটে পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সামান্য নির্মল পরিবেশ রয়েছে তাও নষ্ট হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে। এছাড়া মেট্রোরেলের কারণে চুরি-ছিনতাই বাড়তে বলে তারা মনে করছেন। তবে অনেকের মতে, টিএসসিতে মেট্রোরেল হলে বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুবিধা হবে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মাহমুদ শিহাব বলেন, ‘মেট্রোরেলের কারণে গাছ কেটে ক্যাম্পাসের যে ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ, তা বিনষ্ট করা হচ্ছে। পাশাপাশি মেট্রোরেলের কাজের শুরু থেকেই ক্যাম্পাসের ভিতরে নিয়মিত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে, যা একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কখনোই কাম্য নয়। আর টিএসসি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরো দেশের মুক্ত চিন্তাধারা চর্চার কেন্দ্র।’

তিনি বলেন, ‘টিএসসিতে মেট্রোরেল স্টেশন করা হলে সেটা টিএসসির নির্মল পরিবেশের জন্য অন্তরায় হবে এবং ক্যাম্পাসের ভিতরে অধিক মানুষের যাতায়াতের ফলে যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। যেহেতু শাহবাগে একটি স্টেশন থাকছে, সেহেতু টিএসসিতে মেট্রোরেল স্টেশন অপ্রয়োজনীয় এবং তা ক্যাম্পাসের পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।’

ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী সুমাইয়া জান্নাত সারা বলেন, ‘মেট্রোরেল দেশের ভালোর জন্য করছে ঠিক, কিন্তু মেট্রোরেলের কাজ শেষ হলে পরের অবস্থা হবে ভয়াবহ। ক্যাম্পাসে এমনিতেই বহিরাগত আসা বন্ধ করা যাচ্ছেনা বা উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। পরিবেশ দূষণের কথা নাইবা বললাম! এমনিতে ধুলা বালির কারণে ক্যাম্পাসে থাকা দায়। আর নির্বিচারে গাছ গুলা কেটে ফেলে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য নষ্ট করার সাথে সাথে জীবনীশক্তি হরণ করার মতো হচ্ছে ব্যাপারটা। এই গাছগুলোই কিন্তু ক্যাম্পাসের প্রাণ।’

উর্দু বিভাগের ছাত্র নাইম হাসান বলেন, ‘টিএসসির পাশেই মেট্রোরেলের সম্ভাব্য স্টেশন হলে শব্দের কারনে পড়ালেখার পরিবেশ নষ্ট হতে পারে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মতে, ক্যাম্পাস অতিক্রম করার সময় গতি কম রাখা হবে এবং শব্দদূষণ কমাতে সাউন্ডপ্রুফ ব্যবস্থা রাখা হবে। এখন দেখার বিষয় সেটা কতটুকু কার্যকর হয়।’

উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের ছাত্রী অন্বেষা সানজিদা বলেন, ‘মেট্রোরেলের জন্য বহিরাগতদের ভিড় বাড়বে৷তারপর এই যে গাছ কাটা হচ্ছে এগুলা তো আমাদের সম্পদ। তারা এগুলোকেও নষ্ট করছে। আর টিএসসিতে স্টেশন হলে আমরা আগের মতো পরিবেশ পাব না৷সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

তবে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করে মার্কেটিং বিভাগের রাকিবুল ইসলাম বলেন,  ‘মেট্রোরেল আমামাদের মতো জনবহুল দেশের রাজধানীতে যানজট এড়িয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর একটি মাইলফলক হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা সেই মাইলফলক স্পর্শ করতে চলেছি। অনেকে টিএসসিতে মেট্রোরেলের স্টেশন করা নিয়ে মনগড়া মন্তব্য করে এই বৃহৎ প্রকল্পের বিরোধিতা করছে।’

এটা তাদের চিরাচরিত স্বভাব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘টিএসসিতে স্টেশন হলেও ক্যাম্পাসের কোনো ক্ষতি হবে না। বরং শিক্ষার্থীরা সহজেই ট্রেন থেকে নেমে ক্যাম্পাসে পৌঁছাবে এবং সহজেই ট্রেন ধরে বাসায় পৌঁছাতে পারবে। আমার মতে, টিএসসিতে স্টেশন করলে বরং শিক্ষার্থীদেরই সুবিধা।’

এসব বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি মেট্রো স্টেশন হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতের সংখ্যা বেড়ে। আমরা তখন দেখবো টিএসসিতে ছিনতাই ঘটবে, পড়াশোনার বিঘ্ন ঘটাবে।’

তিনি বলেন, ‘পরিবেশের জন্য গাছ আসলে প্রয়োজন। উন্নয়ন ও জনগণের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে। জনগণের উন্নয়নের জন্য পরিবেশ ঠিক থাকা প্রয়োজন। আমি যতটুকু জানি এখানে যে গাছগুলো কাটা হয়েছে সেখানে সবগুলো গাছ কাটার দরকার ছিল না। কিছু গাছ কাটা দরকার আছে, সেগুলো কাটতে হবে সেটা নিয়ে আমি বলতে চাই না। আমি মনে করি, যেভাবে নির্বিচারে গাছগুলো কাটা হয়েছে সেভাবে কাটা ঠিক হয়নি।’

সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘জাতীয় কাজের জন্য যেটা লাগবে, সেটা কাটতে হবে। জাতীয় কাজের বাইরে একটি গাছ কাটলেও আমি ব্যবস্থা নেবো। মেট্টোরেল জাতীয় কাজের জন্য যা করা দরকার তা তো তারা নেবেই।’

করোনার সুযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গাছ কাটছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু ঠিক বলতে পারবো না। মেট্টোরেলের জন্য যদি বিল্ডিং ভাঙ্গা লাগে সেটি করবে।’

মেট্টোরেলের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য হষ্ট হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নিয়েছেন। এটা জাতীয় কাজ। বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় প্রতিষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রী টিএসসির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য যা করা লাগবে, তা তিনি করবেন। এ বিষয়ে তিনি স্বতন্ত্র একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য যা করা দরকার তিনি করবেন, আবার জাতীয় কাজও করবেন।’


সর্বশেষ সংবাদ