‘লকডাউনে নির্বিচার গাছ কেটে ঢাবির প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করছে প্রশাসন’

  © সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার সুযোগ নিয়ে নির্বিচার গাছ কেটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করছে স্বার্থান্বেষী প্রশাসন বলে অভিযোগ তুলেছে ছাত্র ইউনিয়ন। এর প্রতিবাদে আজ (১৮ মে) বেলা ১১টার দিকে বাংলা একাডেমির সামনে মানববন্ধন করেছেন সংগঠনটি। এই কর্মসূচিতে সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে নিশ্চিত করা হয় বলে ছাত্র ইউনিয়নের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

ছাত্র ইউনিয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম বলেন, ‘আমরা যখন বলি, পৃথিবীটা মরে যাচ্ছে একটু করে করে, তখন আমাদেরকে উন্নয়ন আর অর্থনীতির সূচক দেখানো হয়। বলা হয়, পরিবেশ একটা গেলে আরেকটা আসবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন বলি, আমার বিশ্ববিদ্যালয়কে তোমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো থাকতে দাও, বিশ্ববিদ্যালয় গাবতলী নয়, যে এখানে বাস ট্রাক থাকবে, বিশ্ববিদ্যালয় পল্টন নয়, যে এখানে যুবলীগের জন্মদিন করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় কোনো মাছের বাজার নয়, যে বাজার উচ্ছেদ করে মেট্রো রেলের পিলার বসাতে হবে, তখন আমাদেরকে জায়গার সংকট দেখানো হয়। বলা হয়, ঢাকা শহরে জায়গা নেই কোনো।’

তিনি আরো বলেন, ‘আর আমরা যখন বলি, চীন আর ইতালীতে হাজারে হাজারে মানুষ মরছে, তখন আমাদেরকে ভাড়া করা টেলিভিশনের মাধ্যমে জানানো হয়, গরমের দেশে করোনা হয় না। আমাদের সক্ষমতা ছিলো না তা কিন্তু নয়। সাধারণ মানুষের ক্ষতি হলে তাদের কীই বা আসে যায়! এই মেট্রোরেল শেরাটন হোটেলের উপর দিয়ে যেতে পারেনি। কারণ ওইখানে যায় বড়লোকেরা।’

এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘মেট্রোরেল যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গলার উপর দিয়ে, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে চিন্তা করে গরীবেরা। এই মেট্রোরেলের রাস্তা থেকে দুইশো মিটার দূরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র। সেইখানে এখন করোনা রোগের টেস্টিং চলছে। ভাবুন! উচ্চতর গবেষণা কেন্দ্রের মাত্র দুইশো মিটার দূরে ধুলা বালু মাখা এক কন্সট্রাকশন।’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের ক্ষমতার অভাব নেই, সদিচ্ছার। সরকার চায় বিশ্ববিদ্যালয়কে জাহান্নাম বানিয়ে তুলতে, জাহান্নাম বানানোর জন্যই সে পড়তে আসা নিরীহ ফার্স্ট ইয়ারের একটা ছেলেকে চার বছরে পরিণত করে ছাত্রলীগের পোষা সন্ত্রাসীতে। জাহান্নাম বানানোর জন্যই একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে ছুরির মতো মেট্রোরেল চলে যায়।’

মানববন্ধনে ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি সংসদের সহ-সভাপতি জয় রায় বলেন, ‘আপনারা জানেন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের এই করোনা চলাকালীন সময়েও হাজার হাজার টাকা ফি দিতে হবে, এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সেই ভাইবোনেরা আজ আন্দোলন করছে।’

তিনি বলেন, ‘গার্মেন্টস শ্রমিকদের শত কিলোমিটার হাঁটিয়ে আনা হয়েছে। করোনার টেস্ট করাতে এসে এই শাহবাগে, পিজি হাসপাতালের সামনে অসহায় রোগীরা রাস্তায় পড়ে আছে, কাঁদছে, সেখানেই শুয়ে থাকছে পেপার বিছিয়ে। কেউ কেউ মারাও যাচ্ছে। মারা যাচ্ছে বাংলাদেশ।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি সাখাওয়াত ফাহাদ তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, ‘সরকার এইরকম এক মহামারির মাঝেও মানবাধিকার কর্মী দিদার ভূঁইয়াকে, লেখক আহমেদ মোশতাককে গ্রেফতার করতে পারে, চাইলেই পারে মেট্রোরেলের স্টেশন বিশ্ববিদ্যালয়ে না করতে। চাইলেই পারে দেশের সকল জনগণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে।’

তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগেও বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বুকের উপর রেললাইন বানাবেন না। আমাদেরকে বলা হয়েছে, এটা নাকি আমাদের ভালোর জন্যই। কোথায় সেই ভালো? তখন তারা বললো, মেট্রোরেলটা হতে দাও, স্টেশন আমরা করবো না। আর আজ আমরা দেখি, টিএসসিতে স্টেশন করার জন্য এই করোনার মাঝেই কি ব্যস্ততা! যাতে স্টুডেন্টরা ফিরে আসার আগেই সর্বনাশটা করে ফেলা যায়!’

সাখাওয়াত বলেন, ‘এই সরকার আমাদের ভালো চায় না। এই সরকার আমাদের না। আমাদের লড়াই, তাই এই সরকারের বিরুদ্ধে। অনেক জুলুম সইতে হবে, জেল হবে, ফাঁসি হবে, সরকারের তরফ থেকে অনেক নাটক সাজানো হবে। কিন্তু আমরা কোনো কিছুতেই থেমে যাবো না। কারণ, এই বিশ্ববিদ্যালয়কে, এই দেশকে, এই দেশের মানুষকে আমরা ভালোবেসেছি। এই পৃথিবীটাকে, আর স্টেশন বানানোর উদ্দেশ্যে কেটে ফেলা ওই গাছগুলোকে আমরা, ভালোবেসেছি।’


সর্বশেষ সংবাদ