বাবা-ভাইকে হারালেন ঢাবি ছাত্র, মা-বোনকে বাঁচাতে বাধা!

করোনা সংকটে দুইদিনের ব্যবধানে বাবা ও বড়ভাইকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। তবে নিজের করোনা টেস্ট নেগেটিভ এসেছে বলে জানান ওই শিক্ষার্থী। আজ শনিবার সকালে চট্টগ্রাম শহরের হালিশহর এলাকায় নিজ বাসায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন তার বড়ভাই। দুইদিন আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে মারা যান বাবা। তবে করোনা পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রতার জন্য বাবাকে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করানো যায়নি বলে জানান ওই ঢাবি শিক্ষার্থী।

ওই শিক্ষার্থী হাবিবুল্লাহ রিফাত ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টে মাস্টার্সে পড়ছেন। আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক ছাত্র। তাঁর গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের উপজেলায়। পরিবারকে নিয়ে বাবা থাকতেন শহরের হালিশহরে এলাকায়।

এদিকে বাবা ও ভাইয়ের মৃত্যুর পর মহামরি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মা ও বোনকে রক্ষা করতে তাদেরকে নিজের গ্রামের বাড়ি রেখে আসতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন অভিযোগ উঠেছে। তাদের গ্রামের বাড়িতে মা ও বোনকে রেখে আসতে চাইলে চাচারা বাধা দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

বড়ভাইয়ের মৃত্যু নিয়ে আজ সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ওই শিক্ষার্থী একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, আমার অসুস্থ বড়ভাই টাও সম্ভবত মারা গেছে। বাসায় একটা ডাক্তার বা কেউ এসে কনফার্ম করতে পারবেন? কোনো হেল্প?

এরপর ওই ঢাবি শিক্ষার্থী নিশ্চিত করেন তার ভাই মারা গেছেন।

এর আগে বাবার মৃত্যু নিয়ে তিনি ফেসবুকে লিখেন, আমার বাবা বাম দিকে কাত হয়ে শুয়ে ছিলেন। আমি ছিলাম তার ডানদিকে। হঠাৎ একটা খিচুনি দিয়ে তড়পাতে তড়পাতে আমার কোলে এসে পড়লেন। নিশ্বাসটা বন্ধ হবার সময় চোখ কটমট করে আমার দিকে তাকিয়ে যেন বলছিলেন, ‘৩০ ঘন্টা সময় পেয়েও আমাকে একটা আইসিইউতে নিতে পারলি না?’

বাবার করোনা উপসর্গ দেখা দেয়ার পর টেস্টের দীর্ঘসূত্রতা তুলে ধরে গত ১২ মে তিনি ফেসবুকে লিখেন, আমার বাবাকে নিয়ে সকাল থেকে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছি। কন্ডিশন আইসিইউতে নেয়ার মতো। কিন্তু কেউ ভর্তি নিচ্ছে না। করোনার টেস্ট ছাড়া নাকি কোনো আইসিইউ দেয়া যাবে না। আর স্যাম্পল কালেকশন হবে কাল সকাল ১০টায়। রেজাল্ট আসতে আরও কয়েকদিন লাগবে। তারপর সিদ্ধান্ত হবে আব্বুকে সাধারণ আইসিইউতে নিবে নাকি করোনা আক্রান্তদের আইসিইউতে।

ওই শিক্ষার্থীর বাবা-ভাইয়ের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ঢাবিতে অধ্যয়নরত চন্দনাইশের আরেক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লেখেন, ২ দিনের ব্যাবধানে পরিবারের ২ জন সদস্যকে হারালেন হাবিবুল্লাহ রিফাত ভাই। গত ১৪ মে আংকেল করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আর আজকে মারা যান বড়ভাই। একই এলাকায় বাড়ি হওয়ার সুবাধে এবং পাশের হলে থাকার কারণে সবসময়ই যে হাসিখুশি মানুষটাকে দেখতাম, তার এই অবস্থা মেনে নেয়া কষ্টকর।

তিনি আরও লেখেন, এখন তিনি (রিফাত) প্রতিবেশীদের মানসিক নির্যাতনের শিকার। নিজের বাড়িতেই তিনি থাকতে পারছেন না। চাচারা নিজ বাড়িতেই তাদের থাকতে দিচ্ছে না। ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা থাকায় তিনি তার মা এবং বোনকে বাড়িতে (গ্রামের বাড়ি) রেখে আসতে চান। কিন্তু তার চাচারা তাদের বাড়িতে থাকতে দিবেন না বলে জানিয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ