প্রতিদিন ৪০০ মানুষকে খাওয়াচ্ছেন ঢাবির সাবেক ছাত্র সোহাগ

  © টিডিসি ফটো

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। চীনে শুরু হওয়া প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের কালো ছোবল থেকে রক্ষা পায়নি বাংলাদেশও। করোনাভাইরাসের ফলে দেশের প্রায় সর্বত্রই এখন ঘোষিত-অঘোষিত লকডাউন চলছে। ফলে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন রাজধানীর ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ। অনেকের মতই সমাজের এসব অসহায়ের পাশে নীরবে-নিঃশব্দে দাঁড়িয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র কামরুজ্জামান সোহাগ।

গত ২৬ মার্চ থেকে রাজধানীর সদরঘাট, হাইকোর্ট এলাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও বাড্ডাসহ বেশ কয়েকটি স্থানের ছিন্নমূল প্রায় ৪০০ অসহায় মানুষকে প্রতিদিন রান্না করা খাবার খাওয়াচ্ছেন তিনি। দুপুর এবং রাতে বেলায় দিচ্ছেন এই খাবার। খাবার তালিকায় রাখছেন কখনও গরুর মাংস, কখনও মুরগি। আইটেম হিসেবে রেখেছেন মোরগ পোলাও কিংবা বিরিয়ানিও। শুধু খাবার বিতরণই নয়, দিচ্ছেন চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যও। অনেককে আবার নগদ অর্থ দিয়েও সহযোগিতা করছেন সোহাগ।

জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর গত ২৬ মার্চ সদরঘাট এলাকায় মাস্ক বিতরণ করেন সোহাগ। সেখানেই কয়েকজন এসে খাবারের মিনতি জানালে চোখের কোনে জল নাড়া দেয় তাকে। এরপর আর নিজেকে আটকে রাখতে পারেননি। সেখানেই তাদেরকে খাবার খাইয়ে ছুটে গেছেন হাইকোর্টে এলাকার দিকে। সেখানের চিত্রও একই। খাবার না পেয়ে অসহায়দের অর্তনাদ। মূলত এরপর থেকেই এসব মানুষের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন সোহাগ।

তবে এতকিছুর মাঝেও দুশ্চিন্তায় আছেন অসহায় মানুষদের কাছে বন্ধু বনে যাওয়া এ মানুষটি। বাসাবো এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন তিনি। আর এই এলাকাতেই করোনা রোগীর ছড়াছড়ি। ইতোমধ্যেই প্রশাসন পুরোপুরি লকডাউন ঘোষণা করেছে। বাড়ির বাইরেও সার্বক্ষণিক আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর অবস্থান। ফলে অনেক সময়ই বাড়ির বাইরে বের হওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে কামরুজ্জামান সোহাগের।

কামরুজ্জামান সোহাগ বর্তমানে ভাস্ট বাংলাদেশ নামক আমদানী-রপ্তানি কারক প্রতিষ্ঠানের মালিক। এছাড়া তিনি প্রথম শ্রেণীর একজন সরকারি ঠিকাদারও। তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ফাইভ এস ট্রেডিং। যা ইতোমধ্যেই ভাল কাজের জন্য সুনাম অর্জন করেছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের ফলে দেশের সব কিছুই থমকে গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার খেটে খাওয়া এসব মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। ফাঁকা ঢাকায় তাদের ইনকাম সোর্স নেই, যাওয়ার ও খাওয়ার জায়গাও নেই। ফুটপাত ও হাইকোর্ট মাজার এলাকায় তীর্থের কাকের মত বসে থাকা এসব মানুষগুলোর জন্য সাহায্য অব্যাহত রাখতে চাই। যদিও লকডাউনের ফলে আজ থেকে তা সম্ভব হবে কি-না জানিনা।

কোন স্বার্থের জন্য সাহায্য করছি না জানিয়ে কামরুজ্জামান সোহাগ বলেন, এসব ছিন্নমূল অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমি শুধু আমার দায়িত্বটুকু পালনের চেষ্টা করছি। দেশের এই ক্রান্তিকালে সমাজের এই মানুষগুলোর সহযোগিতায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এই মানুষগুলোর সহযোগিতায় জীবনের শেষ অবধি কাজ করে যেতে চাই।

আমদানি-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ভাষ্ট বাংলাদেশের মালিক কামরুজ্জামান সোহাগ আরও বলেন, ভবিষ্যতে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম চালু হলে আরও অন্তত দুইশ মধ্যবিত্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াবো। তাদের অন্তত ১৫ দিনের নিশ্চিন্তে বাজার করে দেওয়ার ইচ্ছা আছে| এই সময়ে সবচেয়ে বড় বিপদে আছে মধ্যবিত্ত রা, কারন তারা কারও কাছে হাত পাততে পারে না। সুতরাং তাদের কে ডেকে ডেকে ধার স্বরূপ ১৫ দিনের বাজারের টাকা দিলে তারা নিতে দ্বিধা করবে না, মূলত তাদের সম্মানে আঘাত না দিয়ে তাদের কে সহায়তা করাই আমার ইচ্ছা। বিজনেস করে টাকার মালিক হওয়া আমার স্বপ্ন নয়, আমার স্বপ্ন আশেপাশের সবাই কে নিয়ে ভালো থাকা। যেহেতু আমার ব্যবসা এই মুহূর্তে বন্ধ তাই খুললেই যেনো আমার পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করতে পারি এই দোয়া চাচ্ছি সবার কাছেই।

উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো তিনজন করোনায় আক্রান্ত বলে জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর)। দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২০ জন। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ২১৮ জন।


সর্বশেষ সংবাদ