সাংবাদিকের কলার ধরে ‘মোবাইল চোর’ বললেন ঢাবির ছাত্রলীগ নেতা

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় এক সাংবাদিককে ‘মোবাইল চোর’ আখ্যা দিয়ে লাঞ্ছিত ও মারধর করার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই ছাত্রলীগ নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বড় মানিকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দারের ছোট ছেলে নাবিল হায়দার।

অনিয়মের অভিযোগে নিউজ করতে গেলে স্থানীয় ডব্লিউ নিউজের সম্পাদক সাগর চৌধুরীকে মারধর করেন বলে অভিযোগে জানা গেছে। মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) বোরহানউদ্দিনে রাজমনি সিনেমা হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

ওই ঘটনায় নাবিলের করা একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (সহ-সভাপতি) নুরুল হক নুরকেও হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে নাবিলের বিরুদ্ধে। ওই সময় নূর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগও দিয়েছিলেন।

নাবিল হায়দার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এবং সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ভোলা জেলার ছাত্র-ছাত্রী দের সংগঠন দ্বীপ’র পরিকল্পনা ও কর্মসূচী সম্পাদক বলে জানা গেছে। এছাড়া বোরহানউদ্দিন উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের স্কুল ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন নাবিল। 

মারধরের শিকার সাংবাদিক সাগর চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, তাকে ফোন করে বাসা থেকে রাজমনি সিনেমার কাছে নিয়েই মারধর শুরু করে নাবিল। তার মোবাইল দিয়ে লাইভ করে বলে, আমি নাকি তার মোবাইল চুরি করেছি।

এ গটনায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, সাংবাদিক সাগরের জামার কলার ধরে তাকে মোবাইল চুরির অপবাদ দিচ্ছেন নাবিল। আশেপাশে অনেক মানুষ দাড়িয়ে তা দেখছেন।

সাংবাদিক সাগরের দাবি, জেলেদের এক মণ করে চাল দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু চাল দেওয়া হচ্ছে মাত্র ১৪-১৫ কেজি করে। বিষয়টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানান। পাশাপাশি চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসা করেন, কেন চাল কম দিচ্ছেন?

সে কারণে বোরহানউদ্দিন বড় মানিকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিমউদ্দিন হায়দারের ছেলে নাবিল হায়দার তাকে ডেকে নেয় দেখা করার জন্য। তারপর মারধর করে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

স্থানীয়সূত্র জানায়, নাবিলকে রিকশায় করে কয়েক বস্তা চাল নিয়ে যেতে দেখেন সাগর। ওই ছবিও ইউএনওকে পাঠিয়েছেন বলে দাবি সাগরের। এ ব্যাপারে ইউএনও মোহাম্মদ বশির গাজী গণমাধ্যমকে বলেছেন, সাগর তাকে একটা ভিডিও দেখান। যেখানে দুই জেলে বলেন, ১৪ কেজি করে চাল পেয়েছেন তারা।

ইউপি চেয়ারম্যানের সচিবের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চান ইউএনও। এরপর ইউপি চেয়ারম্যান জসিমউদ্দিন হয়দার আলী দুই জেলেকে নিয়ে ইউএনওর কাছে আসেন। ইউএনও বলেন, তারা জানান, সাগর তাদের ওই কথা শিখিয়ে দিয়েছেন। তবে নাবিল চাল নিয়েছেন এমন ছবি তার কাছে পাঠানো হয়নি বলে জানান ইউএনও।

সাংবাদিক সাগরের দাবি, ‘ভিপি নুরকে হত্যার হুমকি দেয়ার ঘটনার ভিডিও দেখিয়ে নাবিল তাকে বলেছেন, ‘আমি ভিপি নুরকে গুনি না, আর তুমি কোথাকার সাংবাদিক।’

এ বিষয়ে জানতে নাবিল হায়দারের সঙ্গে যোগাযোগ চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি। তবে তিনি নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাতে লিখেছেন, ‘আমাকে নিয়ে অনেকে অনেক ধরণের মন্তব্য করছেন। সত্য ঘটনাটি পড়ে দেখুন। উনি একজন পরিচয়পত্রবিহীন সাংবাদিক। বিভিন্ন জায়গায় চুরি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে এর বিরুদ্ধে। আজকে ঘটনাস্থল থেকে চুরি হওয়া মোবাইল উদ্ধার করার পর আমরা তাকে পুলিশের কাছে হস্থান্তর করি।’

তিনি বলেন, ‘এটাই কী আমার অন্যায়? আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, কোন ব্যক্তি যদি চাল নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে যেকোনো শাস্তি আমি গ্রহণ করতে প্রস্তুত। আমি প্রশাসন এর কাছে তদন্তের জোর দাবি জানাচ্ছি।’

সাংবাদিক সাগর চৌধুরীর উপর সন্ত্রাসী হামলায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ অনলাইন প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন। তারা এই ঘটনার হোতা নাবিল সহ সন্ত্রাসী বাহিনীকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি করেছেন।


সর্বশেষ সংবাদ