ঢাবির ছিন্নমূল মানুষ ও কুকুর-বিড়ালের দায়িত্ব নিলেন রাব্বানী

  © টিডিসি ফটো

করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে দেশ যখন প্রায় লকডাউন অবস্থা এবং সবাই যখন বাড়িতে অবস্থান করছে তখন রাস্তার ছিন্নমূল অসহায় মানুষ ও অবলা প্রাণীদের ক্ষুধার্ত থাকতে হচ্ছে। তবে এই দুর্যোগের সময়ে অসহায় তারাও যেন বেঁচে থাকতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য কিছু লোক অতিরিক্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

করোনভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কায় গত ২০ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এর দুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ফলে বর্তমানে পুরো ক্যাম্পাস জনমানবহীন শূন্য প্রায়। তবে ক্যাম্পাসে ছিন্নমূল মানুষ ও অবাল প্রাণীদের কোথাও যাওয়ার ও খাওয়ার জায়গা নেই। এ পরিস্থিতিতে বেশকিছু শিক্ষার্থী এসব ছিন্নমূল মানুষ ও প্রাণীদের খাবার দিতে এগিয়ে আসছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, ক্যাম্পাসের ছিন্নমূল মানুষ ও কুকুর-বিড়ালের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী। আজ দুপুরে ফেসবুক পোস্টের তিনি এ তথ্য জানান। নিচে সেই পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হল-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, আবাসিক হলগুলোও ভ্যাকেন্ট; পুরো ক্যাম্পাস জনমানবহীন শূন্য প্রায়। এমতাবস্থায় সবচেয়ে বেশি মানবেতর জীবনযাপন করছে ক্যাম্পাস এলাকায় ফুল, চুড়ি, চকলেট বিক্রি করা, শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা-অনুকম্পায় পেট চালানো ছিন্নমূল পথশিশু, ওদের পরিবার ও বয়বৃদ্ধ মানুষগুলো।

ফাঁকা ক্যাম্পাসে তাদের ইনকাম সোর্স নেই, যাওয়ার ও খাওয়ার জায়গা নেই। আশেপাশের বস্তিঘর, ফুটপাত, হাইকোর্ট মাজার এলাকায় বসে তীর্থের কাকের মতো কারো মানবিক সাহায্যের পথ চেয়ে আছে।

আর মহাবিপদে আছে ক্যাম্পাস এবং বিভিন্ন হল আঙ্গিনার স্থানীয় বাসিন্দা, শ'খানেক কুকুর বিড়াল। ওদের একটু খাবার দেয়ার যে কেউ নাই! ক্ষুধার্ত হলেও ওরা চিরচেনা এই গন্ডি ছেড়ে যাবে না। দু'একজন মহৎপ্রাণ শিক্ষার্থী মাঝে মধ্যে কিছু খাবার দিচ্ছে। কিন্তু প্রতিদিন সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা ওদের জন্য কষ্টসাধ্য।

এসব ছিন্নমূল অসহায় মানুষ আর অবলা প্রাণী গুলোর পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আজ রাতে তিন/চার দিন খেতে পারে এমন খাদ্যসামগ্রী এই মানুষগুলোর কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। এরপর প্রতি ৩/৪ দিন পর পর আবার।

আর প্রতিদিন ক্যাম্পাসের সকল কুকুর বিড়ালের খাবার নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমি নিচ্ছি। প্রতিদিন ১০ কেজি মুরগী মধুর ক্যান্টিনে সিদ্ধ করে ওদের দেয়া হবে। ইনশাআল্লাহ ওরা আর অভুক্ত থাকবে নাহ।

ক্যাম্পাস খোলার আগ পর্যন্ত এভাবে চলবে। সুহৃদগণ, এ মহতী উদ্যোগে সামর্থ্য অনুযায়ী পাশে থাকবেন বলে প্রত্যাশা করছি।

এর আগে গত ২২ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইসতিয়াক আহমেদ হৃদয়ের উদ্যোগে অভুক্ত প্রাণীদের খাবার সর্বরাহ করে আসছিলেন মাহবুব, সাবরিনা, ফারজানাদের একটি টিম। তাদের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে আরও বেশ কয়েকজন এগিয়েও এসেছেন।

তবে নিজেদের অর্থায়নে কর্মসূচিটি চালিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছিলো ইসতিয়াকদের টিম। কর্মসূচিটি সচল রাখতে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নেতৃবৃন্দদের আহবান জানানো হয়। তাদের এ আহবানে সাড়া দিয়ে ডাকসু জিএস গোলাম রাব্বানি, এজিএস সাদ্দাম হোসেনসহ অনেকে এগিয়ে আসেন। পরে এ বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে নিজের টাইমলাইনে পোস্ট করেন জিএস রাব্বানী।


সর্বশেষ সংবাদ