ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কুকুরের জন্য ভালোবাসা
- মায়িশা মাহমুদ, প্রদায়ক
- প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২০, ১১:১৫ AM , আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২০, ০২:০৯ PM
করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে দেশ যখন প্রায় লকডাউন পরিস্থিতিতে এবং প্রায় সব দোকানপাট বন্ধ ও সবাই যখন বাড়িতে অবস্থান করছে তখন রাস্তার পশুদের ক্ষুধার্ত থাকতে হচ্ছে। তবে এই দুর্যোগের সময়ে অসহায় প্রাণীরাও যেন বেঁচে থাকতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য কিছু লোক অতিরিক্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় এক বিকেলে, মাস্ক এবং গ্লাভস পরা মধ্যবয়স্ক এক লোককে একটি নিরাশ্রয় কুকুরকে খাওয়াতে দেখা গেছে, যে স্পষ্টতই অনাহারে ছিল এবং গত কয়েকদিন ধরে কোনো খাবার পায়নি।
‘নড়াচড়া কোরো না, একটু জ্বলবে। এরপর ঠিক হয়ে যাবে’ বলছিলেন কুকুরটির পিছনে কিছু জীবাণুনাশক লাগাতে থাকা ৪৫ বছর বয়সী রফিক আহমেদ ডলার। রফিক যে রিক্সায় করে যাচ্ছিলেন তাতে স্তূপাকারে বিস্কুটের প্যাকেট ছিল যার মধ্যে কিছু খালি আর কিছু তখনও ভরা।
তিনি যখন একটি কুকুরকে স্নেহের সাথে খাবার দিচ্ছিলেন তখন আরও দুটি কুকুর সেই ভালবাসা আর একটু খাবারের আশায় তার কাছে এসে লেজ নাড়াচ্ছিল। রফিককে তখন তার নতুন বন্ধুদের দেয়ার জন্য পাশের ব্যাগ থেকে আরও একটি বিস্কুটের প্যাকেট বের করতে দেখা যায়।
জানতে চাইলে ট্র্যাভেল এজেন্সির ব্যবসায়ী রফিক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী আগেই আবাসিক হল ছেড়ে চলে যাওয়ায় তিনি এখানে এই নিরীহ প্রাণীগুলোকে খাওয়াতে এসেছেন।
‘ক্যাম্পাসে এমন অনেক প্রাণী রয়েছে যাদের যত্ন নেওয়ার মতো কেউ নেই। এই কুকুরগুলোর যত্ন সাধারণত ঢাবির ছাত্ররা নেয়। একজন ছাত্র সম্প্রতি তার হল ছেড়ে যাওয়ার পরে এই প্রাণীদের জন্য সাহায্য চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিল’-তিনি জানান।.
করোনভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কায় গত ২০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে ঢাবির শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ হৃদয় তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে ঢাবির ক্যাম্পাসে বসবাসরত কুকুর এবং বিড়ালদের খাবারের ব্যবস্থা করতে সহায়তা চেয়েছিলেন।
রফিক আরও বলেন, ‘আমি যখন এসব অসহায় ক্ষুধার্ত প্রাণীর কথা ভাবি তখন নিজেকে আটকাতে পারিনা। আমি টানা চারদিন ধরে এখানে আসছি।’
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রাণী থেকে করোনভাইরাস সংক্রমণের কোনও তথ্য বা প্রমাণ নেই। তবে আমি পর্যাপ্ত সুরক্ষা বজায় রাখার চেষ্টা করছি। ইনশাআল্লাহ, কিছুই হবে না।’
রাজধানীর লালবাগ এলাকার বাসিন্দা রফিক বলেছিলেন, ‘আমি যখনই বাইরে বেরোই, সর্বদা অসহায় প্রাণীগুলোর জন্য আমার ব্যাগে শুকনো খাবার নেই।’ ‘এমনকি লালবাগের রাস্তার সব কুকুর আমাকে চেনে’-হাসি দিয়ে বললেন তিনি।
রফিক বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) আমার মা আমাকে প্রতিজ্ঞা করিয়েছিলেন এটি আর না করার। তবে আমার স্ত্রী এ ব্যাপারে একজন উৎসাহদাতা। সে ওদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে।’
এদিকে, রফিক হাজী মুহাম্মদ মহসিন হল, মাস্টার দা সূর্যসেন হল, বিজয় একাত্তর হল, মধুর ক্যান্টিনসহ টিএসসি চত্বরে প্রায় ২০০টি বিস্কুটের প্যাকেট বিতরণ করেছেন।
ফেসবুকের স্ট্যাটাস পোস্টকারী হৃদয় বলেন যে খুব শিগগিরই তার নেতৃত্বে একটি দল ক্যাম্পাসের এই প্রাণীদের দেখাশোনা এবং সাহায্য করার জন্য রফিকের সাথে অংশগ্রহণ করবেন। তিনি বলেন, আমি আমার গ্রামে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করায় এই মুহূর্তে ঢাকায় নেই।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের এসব প্রাণীদের খাবার দিতে এগিয়ে আসছে। মো. আল আমীন নামের জিয়া হলের এক শিক্ষার্থী ও তাদের সহপাঠীদের সহযোগিতায় গতকাল বৃহস্পতিবার খিচুড়ি রান্না করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায়বিতরণ করছেন।
ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসে তিনি জানান, ‘আজকে (বৃহস্পতিবার) নিজ হাতে খিচুড়ি রান্না করে ৫২ প্যাকেট খাবার জসীমউদ্দীন হল, জিয়া হল, সূর্যসেন হল, এফবিএস, আইইআর, আইবিএ, মধুর ক্যান্টিন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, হাকিম চত্বর, চারুকলার অভুক্ত কুকুরগুলোকে দিয়ে আসি। আপনাদের অনুপ্রেরণাই আমাদের সম্বল’।
সূত্র: ডেইলি স্টার