পতাকা উত্তোলন দিবসের অনুষ্ঠানে দাওয়াত পাননি উত্তোলনকারী!

  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ সোমবার (২ মার্চ) ঐতিহাসিক পতাকা উত্তোলন দিবস উদযাপন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সকালে কলাভবন সংলগ্ন বটতলায় এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দিবসটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

তবে তৎকালীন ডাকসুর ভিপি ও প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী আ স ম আবদুর রব অনুষ্ঠানে দাওয়াত পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। তাকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেও দেখা যায়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আ স ম আব্দুর রবকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে কিনা আমি জানি না। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে অনুষ্ঠান আয়োজন কমিটিতে যারা রয়েছে তাদের সাথে কথা বলে জানতে পারবেন।

আ স ম আব্দুর রবকে পতাকা উত্তোলন দিবসের প্রোগ্রামে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে অনুষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়ক কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো.দেলোয়ার হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন,যাদেরকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে তারা আসছে, যাদেরকে দাওয়াত দেওয়া হয় নি তারা আসেনি। কেন তাকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি জানতে চাইলে কলা অনুষদের ডিন বলেন, পতাকা উত্তোলনের সময় তো আরো অনেকে ছিল তাদের সবাইকে তো দাওয়াত দেওয়া সম্ভব নয় তাই আমরা আ স ম আব্দুর রবকে দাওয়াত দেয়নি। 

তিনি যেহেতু প্রথম উত্তোলনকারী সেহেতু তিনি তো দাওয়াত পাবার যোগ্য-এ বক্তব্যের উত্তরে তিনি বলেন, তা আমরা পরবর্তীতে বিবেচনা করবো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের সমন্বয়ক ও কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন স্বাগত বক্তব্য দেন। আলোচনায় অংশ নেন ডাকসু’র এজিএস মো. সাদ্দাম হোসেন। রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শারমিন জাহান চৌধুরী। এসময় বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ‘মার্চ আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গৌরবের মাস। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের শুরু থেকে একের পর এক ঐতিহাসিক ঘটনাবলী ঘটতে থাকে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত হতে থাকে বাংলাদেশ।’

তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঐতিহাসিক এই বটতলায় তৎকালীন ডাকসুর নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এর আগে তারা তৎকালীন ইকবাল হলে (বর্তমান শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) বৈঠক করে ২ মার্চ পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেন এবং এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর অনুমতি গ্রহণ করেন।’

তিনি ঐতিহাসিক এই দিবসের তাৎপর্য অনুধাবন করার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহেবান জানিয়ে বলেন, এই দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্য অবদান তুলে ধরে উপাচার্য বলেন, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন প্রজন্মকে উদার, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মূল্যবোধ ধারণ করতে হবে এবং জাতি গঠনে নেতৃত্বে দিতে হবে।

আলোচনা পর্ব শেষে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রখ্যাত শিল্পী ইন্দ্র মোহন রাজবংশী সংগীত পরিবেশন করেন।

এদিকে ১৯৭১ সালের ২ মার্চ তৎকালীন ডাকসুর ভিপি আ স ম রব স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। তবে তাকে অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়া হয়নি অভিযোগ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. বিন ইয়ামিন মোল্লা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘১৯৭১ সালের ২ মার্চ তৎকালীন ডাকসুর ভিপি আ স ম রব স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পতাকা উত্তোলন দিবসের কর্মসূচী ছিলো।

হতভাগা জাতি আমরা, সেই অনুষ্ঠানে আ স ম রব জীবিত থেকেও আমন্ত্রণ পাননি। আর বর্তমান ভিপি নুরুল হককে তার সাংবিধানিক অধিকার (পাসপোর্টের) পাবার জন্য কোর্টে হাজির হতে হয়েছে।

স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের মূল্য আমরা কতটুকু দিতে পেরেছি? যেই স্বাধীনতার জন্য ঢাকা বিশবিশ্ববিদ্যালয়ে লাল সবুজ সোনালী রঙের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিলো, সেই স্বাধীনতা কতটুকু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে?’


সর্বশেষ সংবাদ