ডাবল ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্টকে বাদ দিয়ে দশমকে নিয়োগ: সুপারিশ গ্রহণ করেনি সিন্ডিকেট

ঢাবি
ঢাবি  © ফাইল ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক পদে ডাবল ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট, পিএইচডিধারী বাদ দিয়ে দশমকে নিয়োগের সুপারিশ করেছে সিলেকশন বোর্ড। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসে প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। পরে অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ অনুমোদন না দিয়ে রিভিউ কমিটি গঠন করেছে প্রশাসন।

আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় প্রভাষক পদে নিয়োগের অনুমোদন দেয়ার কথা থাকলেও অনুমোদন না দিয়ে নিয়োগের বিষয়ে রিভিউ কমিটি গঠন করে সিন্ডিকেট সভা শেষ করা হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, নিয়োগের বিষয়টি সিন্ডিকেট সভায় তোলা হয়েছিল। তবে প্রভাষক পদে নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়নি। নিয়োগের প্রক্রিয়া যাচাই-বাছাই করার জন্য জন্য রিভিউ কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিভিউ কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদকে।

জানা যায়, গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের দুটি স্থায়ী শূন্য প্রভাষক পদ পূরণের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এ পদে চাকরির আবেদন পড়ে ২৬টি। আবেদনকারীদের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার সিলেকশন বোর্ডের সভায় মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন ১৬ জন। তাদের থেকে ৩ জনকে নিয়োগ দেয়ার জন্য সুপারিশ করেছে সিলেকশন বোর্ড। অভিযোগ উঠেছে, যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীদের নিয়োগের সুপারিশ করেছে সিলেকশন বোর্ড।

নিয়োগের জন্য সুপারিশকৃতরা হলেন— মো. আবু সায়েম খান, এসএম তানজিল শাহ ও মো. রাফিউল ইসলাম রাঙ্গা। এর মধ্যে মো. রাফিউল ইসলাম রাঙ্গা স্নাতক সম্মানে ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড ও স্নাতকোত্তরে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট অর্জন করেন, তাকে সুপারিশের বিষয়ে তেমন কোনো অভিযোগ নেই।

তবে বাকি দুজনের নিয়োগের সুপারিশ বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। এর মধ্যে মো. আবু সায়েম খান স্নাতক সম্মানে দশম ও স্নাতকোত্তরে পঞ্চম অবস্থানে ছিলেন। আর এসএম তানজিল শাহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পর্যায়ের চতুর্থ অবস্থানে ছিলেন। তাদের দুজনের কারোরই কোনো গবেষণা প্রকাশনা নেই।

যদিও মো. আবু সায়েম খান, এসএম তানজিল শাহদের ব্যাচে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর— উভয় পর্যায়ে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট পাওয়া প্রার্থী নাদিরা নাজনীন রাখিকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেনি সিলেকশন বোর্ড। অথচ পরীক্ষায় অংশ নেয়া ১৬ জনের মধ্যে তিনিই একমাত্র ডাবল ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট পাওয়া প্রার্থী। এমনকি ওই ব্যাচে জীববিজ্ঞান অনুষদের মধ্যেও ফার্স্ট হয়েছিল ওই ছাত্রী। এছাড়া তাঁর আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একটি ও দেশীয় পর্যায়ে একটি প্রকাশনা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও সিলেকশন বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আসলে শিক্ষার্থীদের বিভাগীয় ফলাফলের দিকে থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়— এভাবে অবস্থান নির্ণয় করা হয়। তবে প্রথম সারির পাঁচ-দশজন শিক্ষার্থীর মাঝে সিজিপিএর দিকে থেকে বড় কোনো তফাত থাকে না। দুই-এক পয়েন্টের কারণে তাদের অবস্থান আগে-পরে হয়। এছাড়া ফলাফল বা প্রকাশনা এগুলো কোনটিই নিয়োগের একমাত্র মানদণ্ড নয়। এর বাইরে প্রেজেন্টেশন স্কিলসহ আরো অনেক বিষয়ে দেখতে হয়। আমি অনেক ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট দেখেছি— কথাই বলতে পারে না।

শুধু নাদিরা নাজনীন রাখি নয়; সিলেকশন বোর্ড থেকে বাদ পড়েছেন পিএইচডি ডিগ্রিধারী পাঁচজন চাকরিপ্রার্থী। তাদের মধ্যে একজন যুক্তরাষ্ট্র, একজন যুক্তরাজ্য, দুই জন ডেনমার্ক ও একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। যদিও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উচ্চতর ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ বলেন, আসলে পিএইচডিধারীদের একজনের কথা এখন মনে আসছে। তিনি অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক পদ ছেড়ে এখানে প্রভাষক পদে আসতে চাচ্ছেন। তাই আমরা ওনাকে ওই বিশ্ববিদ্যালেয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিতে উৎসাহিত করেছি।