ঢাবিতে সান্ধ্য কোর্স থাকবে, নীতিমালা অনুযায়ী চলবে (ভিডিও)

  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকোর্স চালু থাকবে। একটি নীতিমালার অধীনে এ কোর্স পরিচালিত হবে। তবে কোন বিভাগে সান্ধ্যকোর্স থাকবে বা খোলা হবে আর কোন বিভাগে থাকবে না কিংবা খোলা হবে না সে বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। দেশের উচ্চশিক্ষার সবচেয়ে প্রাচীন এ শিক্ষায়তনটি এমন পথেই হাঁটছে বলে জানিয়েছেন এর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণে পদে থাকা শিক্ষকরা। 

সোমবার বেলা তিনটা থেকে রাত সোয়া ১০টা পর্যন্ত সাত ঘন্টারও বেশি সময় ধরে একাডেমিক কাউন্সিলের সভার পরও সান্ধ্যকোর্স রাখা না রাখা নিয়ে শিক্ষকরা চূড়ান্ত ঘোষনা দিতে পারেননি। সভাসূত্র জানায়, প্রভাবশালী শিক্ষকদের সিংহভাগ সান্ধ্যকোর্স রাখার পক্ষে। তুমুল তর্কবিতর্কের পর এটি কোন উপায়ে রাখা যায় এবং এর পরিধি কতটুকু হওয়া উচিত তা নিয়ে আলোচনা হয়। যেসব বিভাগে সান্ধ্যকোর্স থাকবে সেগুলোকে কী নিয়ম মেনে চলতে হবে এবং সেসব বিভাগের শিক্ষকদের কোন কোন নিয়ম অনুসরণ করা উচিত তাও আলোচিত হয়। 

বিজ্ঞান অনুষদের এক শিক্ষক বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সান্ধ্যকোর্স বহাল রাখার ঘোষণা সরাসরি দেয়া কঠিন। আর যুগের চাহিদা অনুযায়ী এটিকে আরেকটু আগাগোড়া ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। একাডেমিক কোর্স ও প্রফেশনাল কোর্সের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে এবং শিক্ষাদান পদ্ধতিও যে আলাদা সেটিও স্পষ্ট করতে হবে। তাই অধিকতর যাচাইয়ে প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটির পর্যালোচনা ও সুপারিশ অনুযায়ী একটি নীতিমালা প্রণীত হবে। এতে সবপক্ষের মান রক্ষা হবে এবং নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে শিক্ষকদেরও একটি কাঠামোবদ্ধ আচরণে আনা যাবে। 

সভাশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানও সান্ধ্যকোর্স চালু থাকার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রো-উপাচার্যের (শিক্ষা) নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দিবেন। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে সান্ধ্যকোর্স নিয়ে একটি নীতিমালা প্রণীত হবে। ওই নীতিমালার আওতায় জাতীয় চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা অনুযায়ী কোন বিষয়গুলো খোলা হবে আর কোন বিষয়গুলো খোলা হবে না  সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। 

ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের একজন জেষ্ঠ্য শিক্ষক বলেন, ওই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সেটি আবার একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় উঠবে। সেখানে শিক্ষকরা আলোচনার পর চূড়ান্ত ঘোষনা দিবেন। এরপর থেকে নীতিমালা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকোর্স পরিচালিত হবে। 

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ওই সভায় বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও ইনস্টিটিউট পরিচালকরাসহ অধ্যাপকরা উপস্থিত ছিলেন। সভা সূত্রে জানা গেছে, সান্ধ্যকোর্স থাকবে কিনা তা নিয়ে সভায় পক্ষ-বিপক্ষে তুমুল বির্তক চলে। কোর্স বন্ধ করার পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি দেন শিক্ষকরা।

সভার শুরুতে সান্ধ্যকোর্সের যৌক্তিকতা যাচাইয়ে কমিটির প্রতিবেদন পাঠ করেন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও সান্ধ্যকোর্স যাচাই কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ। এসময় তার বক্তব্যের মধ্যে সভা থেকে ‘শেইম’ ‘শেইম’ চিৎকার আসে।

পরে সান্ধ্যকোর্সের পক্ষ নিয়ে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, এ ধরণের প্রোগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি উজ্জল করে। আমি যদি আমার বিভাগের কথা বলি তাহলে বলবো, আমার এখানে ডিগ্রি নেয়ার জন্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আসে, যা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে গৌরাবান্বিত করে।

সান্ধ্যকোর্সের বিরোধীতা করে স্যার এ এফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, আমাদের নিয়মিত শিক্ষার্থীরা, যারা মেধা দিয়ে এখানে ভর্তি হয়, তাদের স্বার্থের বিষয়ে আমাদের চিন্তুা করতে হয়। শিক্ষার্থীরা অনেকেই অভিযোগ করেছেন, আমাদের স্যাররা আমাদের সময় দেন না।

সভা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সান্ধ্যকোর্সের যৌক্তিকতা যাচাইয়ে কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে সাত থেকে সাড়ে সাত ঘন্টার আলোচনা হয়েছে। পরে কমিটিকে ধন্যবাদ দেয়া হয়েছে এবং তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হয়। তবে এ কমিটির সুপারিশের এক জায়গায় পরিবর্তন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সান্ধ্যকোর্সের যৌক্তিকতা যাচাইয়ে উপ-উপাচার্য  (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদকে প্রধান নতুন আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৫ সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটি একাডেমিক কাউন্সিলের সভা উঠবে। সেখানে এ ব্যাপারে একটি নীতিমালা করা হবে। এরপর থেকে নীতিমালা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকোর্স পরিচালিত হবে।

তিনি বলেন, ন্যাশনাল নিড, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাপাসিটিসহ সবকিছু মিলিয়ে তারপরে কোন বিভাগের সান্ধ্যকোর্স রাখা যাবে আর কোন বিভাগে রাখা যাবেনা তা নীতিমালার আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ