সান্ধ্যকোর্সে ঢাবির ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের যত আয়

  © সংগৃহীত

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকোর্স মানে কাড়িকাড়ি টাকা। শিক্ষাবিদরা এটাকে শিক্ষা বাণিজ্য বলে অভিহিত করেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক সান্ধ্যকোর্স বন্ধের নির্দেশনা দিলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নড়েচড়ে বসে। এটা কিভাবে বন্ধ করা যায়, ইতোমধ্যে তা নিয়ে বেশকয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় যাচাই কমিটিও গঠন করেছে।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকোর্স বন্ধ হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মঙ্গলবার একাডেমিক কাউন্সিলের সভা রয়েছে। সেখানে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানা গেছে। এর আগে গত বছরের মে মাসে পাঁচজন ডিনের সমন্বয়ে সান্ধ্য কোর্সের যৌক্তিকতা যাচাইয়ে কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি সান্ধ্যকোর্সের বিষয়ে প্রণীত প্রতিবেদন উপাচার্যের কাছে জমা দিয়েছে যৌক্তিকতা যাচাই কমিটি। ওই প্রতিবেদনে সান্ধ্য কোর্স সাময়িকভাবে বন্ধের সুপারিশ করা হয়।

জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে সবচেয়ে বেশি সান্ধ্যকোর্সের শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে থাকে। সব বিভাগে সান্ধ্যকোর্স চালু রয়েছে। এ অনুষদে নিয়মিত শিক্ষার্থীর আসন সংখ্যা ১২৫০টি। অপরদিকে, সান্ধ্যকোর্সে অনিয়মিত শিক্ষার্থীর জন্য আসন সংখ্যা ২৯৬৫ জন। এ অনুষদে নিয়মিত শিক্ষার্থীর আড়াই গুণ বেশি সান্ধ্যকালীন কোর্সগুলো শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৭০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করায় অনুষদটির ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সান্ধ্যকোর্সের প্রোগ্রামগুলোর শুধু কোর্স ফি বাবদ অনুষদটির বাৎসরিক আয় প্রায় ৭৫ কোটি টাকা। যে টাকার অধিকাংশই শিক্ষকরা নিজেদের সম্মানী হিসেবে নেন। এই পরিসংখ্যান ধরা হয়েছে যদি সান্ধ্যকালীন শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত আসন সংখ্যা পূর্ণ হয়। এই অবস্থায় সান্ধ্যকোর্স বন্ধ করা হলে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষকদের ইনকামের পথও বন্ধ হয়ে যাবে। এরই প্রেক্ষিতে সান্ধ্যকোর্স বন্ধ না করতে এই অনুষদের সব শিক্ষকই একজোট হয়ে মাঠে নেমেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকোর্স বন্ধ হলে ছাত্র-শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মন্তব্য করেছেন ওই অনুষদের ডীন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম। সান্ধ্য কোর্সের যৌক্তিকতা যাচাইয়ে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে তিনি এ মন্তব্য করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাময়িকভাবে স্থগিতের সুপারিশের বিষয়ে কমিটির সদস্য ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডীন ভিন্ন দৃষ্টি পোষণ করেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ না করে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হোক। পরবর্তীতে সে নীতিমালার আলোকে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। তবে নীতিমালা প্রণয়ন পর্যন্ত প্রোগ্রামসমূহ স্থগিত করা হলে ছাত্র-শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ম্যানেজমেন্ট বিভাগে দু’টি সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। এর কোর্স ফি ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এ শাখায় বছরে তিন ব্যাচে ১৮০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে বছরে কোর্স ফি বাবদ বিভাগ পায় ৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

অপর একটি কোর্স হলো মাস্টার্স অব হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট। এর কোর্স ফি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ শাখায় বছরে দুই ব্যাচে ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে কোর্স ফি বাবদ আদায় করা হয় ৩ কোটি টাকা।

একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে তিনটি সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনেস্ট্রশন। এর কোর্স ফি ৩ লাখ ৮ হাজার ৫শ টাকা। এ শাখায় বছরে তিন ব্যাচে ১৯৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে কোর্স ফি বাবদ আদায় করা হয় ৬ কোটি ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫শ টাকা।

মাস্টার্স অব প্রফেশনাল ইন একাউন্টিংয়ের কোর্স ফি ২ লাখ ৬০ হাজার ৩০০ টাকা। দুই ব্যাচে ১৩০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৩৯ হাজার টাকা আদায় করা হয়।

অন্যটি হলো মাস্টার্স অব প্রফেশনাল একাউন্টিং ইন ট্যাক্সেশন। এর কোর্স ফি ৩ লাখ ৬২ হাজার ৮শ টাকা। এ শাখা বছরে দুই ব্যাচে ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে কোর্স ফি বাবদ আদায় করা হয় ৪ কোটি ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।

মার্কেটিং বিভাগে দু’টি সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু রয়েছে। মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনেস্ট্রশনের কোর্স ফি ২ লাখ ৫১ হাজার টাকা। এ শাখা বছরে তিন ব্যাচে ২২৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে। ফলে কোর্স ফি বাবদ ৫ কোটি ৬৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়।

মাস্টার্স অব প্রফেশনাল মার্কেটিংয়ের কোর্স ফি ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। এ শাখায় বছরে দুই ব্যাচে ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ফলে কোর্স ফি ২ কোটি ৯২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

ফিন্যান্স বিভাগে দু’টি সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু রয়েছে। মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনেস্ট্রশন এর কোর্স ফি ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এ শাখা বছরে তিন ব্যাচে ২১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে। ফলে কোর্স ফি বাবদ ৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা আদায় করা হয়।

মাস্টার্স অব প্রফেশনাল ফিন্যান্সের কোর্স ফি ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ শাখায় বছরে দুই ব্যাচে ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ফলে কোর্স ফি বাবদ ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা আদায় করা হয়।

ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগে সর্বোচ্চ চারটি সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। এর কোর্স ফি ২ লাখ ৫১ হাজার টাকা। এ শাখায় বছরে তিন ব্যাচে ২১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে কোর্স ফি বাবদ আদায় করা হয় ৫ কোটি ২৭ লাখ ১০ হাজার টাকা।

মাস্টার্স অব ইন্স্যুরেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্টের কোর্স ফি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। দুই ব্যাচে ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে ৩ কোটি ৪০ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

মাস্টার্স অব প্রফেশনাল ব্যাংকিংয়ের কোর্স ফি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এ শাখায় বছরে দুই ব্যাচে ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে কোর্স ফি বাবদ আদায় করা হয় ৩ কোটি ৪০ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

মাস্টার্স অব ট্যাক্স ম্যানেজমেন্টের কোর্স ফি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এ শাখায় বছরে দুই ব্যাচে ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে কোর্স ফি বাবদ আদায় করা হয় ৩ কোটি ৪০ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগে একটি সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু রয়েছে। তা হলো মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। এর কোর্স ফি ১ লাখ ২০ হাজার ৫০০ টাকা। এ শাখায় বছরে তিন ব্যাচে ১৯৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে বছরে কোর্স ফি বাবদ বিভাগ পায় ২ কোটি ৩৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা।

ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগে দু’টি সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। এর কোর্স ফি ২ লাখ ৬১ হাজার টাকা। এ শাখায় বছরে তিন ব্যাচে ১৯৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে বছরে কোর্স ফি বাবদ বিভাগ পায় ৫ কোটি ৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।

অপর একটি কোর্স হলো মাস্টার্স অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড বিজনেস। এর কোর্স ফি ২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। এ শাখায় বছরে দুই ব্যাচে ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে কোর্স ফি বাবদ আদায় করা হয় ২ কোটি ৮৩ লাখ ২০ হাজার টাকা।

ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে একটি সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু রয়েছে। প্রতি বছরে তিন ব্যাচে ২২৫ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। আনুমানিক কোর্স ফি আড়াই লাখ টাকা ধরলে এর কোর্স ফি হয় ৫ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অর্গানেইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগে তিন ব্যাচে ২১০ জন শিক্ষার্থী নেওয়া হলে কোর্স ফি দাঁড়ায় ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

সান্ধ্যকোর্সের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকোর্সের যৌক্তিকতা যাচাইয়ে ডিনদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়। যার প্রতিবেদন আমরা হাতে পেয়েছি। একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ