কেমন আছে ঢাবি ছাত্র কাউসারের ফুটফুটে দুই বাচ্চা?

ঢাবি ছাত্র কাউসার (বামে)। দুই যমজ সন্তানের সঙ্গে জুয়েল (ডানে)
ঢাবি ছাত্র কাউসার (বামে)। দুই যমজ সন্তানের সঙ্গে জুয়েল (ডানে)  © টিডিসি ফটো

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহিদ ম্যানশনে ভয়াবহ আগুনে দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান ৭১ জন। মর্মান্তিক সেই দুর্ঘটনার আজ এক বছর। ওই এলাকার আল মদিনা ফার্মেসি নামে একটি ওষুধের দোকান ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র হাফেজ কাউসার আহমেদের। লেখাপড়ার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। চোখে মুখে স্বপ্ন ছিলো লেখাপড়া শেষ করে বড় চাকরি করবেন। 

তবে সেই স্বপ্ন আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির ঘটনায়। এ ঘটনায় পুড়ে যায় তার ফার্মেসি আর দোকানেই পুড়ে মারা যান তিনি। স্ত্রী আর ছোট্ট দুই যমজ সন্তান (আব্দুল্লাহ ও মেহজাবিন) নিয়ে ছিল কাউসারের সংসার। এ ঘটনার পর কাউসারের সন্তানের দায়িত্ব নেন হাবিবুর রহমান জুয়েল নামের এক তরুণ উদ্যোক্তা। তিনিও ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র।

চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির বছরপূর্তিতে কাউসারের পরিবারের সার্বিক অবস্থা এবং তার ফুটফুটে যমজ সন্তানের কি অবস্থা জানতে চাইলে তার স্ত্রী নুসরাত জাহান মুক্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আল্লাহর রহমতে বাচ্চা দুটি ভালো আছে। জুয়েল ভাই তাদের জন্য প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা করে পাঠান। তা নিয়ে আমি বাচ্চাদের নিয়ে ভালোভাবে চলতে পারি। জুয়েল ভাইকে মহান আল্লাহ তায়ালা আমার বাচ্চাদের জন্য নিয়ামত হিসেবে পাঠিয়েছেন বলে আমি মনে করি।

কাওসারের কোন ঋণ আছে কিনা? থাকলে বর্তমানে কি অবস্থা? এ প্রসঙ্গে মুক্তা বলেন, ব্যবসা করার কারণে অনেকে টাকা পেত। এদের মধ্যে অনেকে ‘আল্লাহর ওয়াস্তে’ মাফ করে দিয়েছেন। তবে যাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না তারা বেশ কয়েকবার এ ব্যাপারে আমার সাথে যোগাযোগ করেছে।

আমি একজন মেয়ে মানুষ আমার পক্ষে একা ওইসব ঋণগুলো পরিশোধ করা তো সম্ভব নয়। আমি সমাজের বিত্তবানদের এ ব্যাপারে সহযোগিতা কামনা করছি-যোগ করেন কাওসারের স্ত্রী নুসরাত জাহান মুক্তা।

কাওসারের ফার্মেসি ব্যবসা প্রসঙ্গে স্ত্রী বলেন, ব্যবসা করার জন্য যখন সে যখন দোকানটি ভাড়া নিয়েছিল তখন প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা মালিকের জামানত রেখেছিল। এ ঘটনার পরে আমি দোকানের মালিকের কাছে অনুরোধ করে বলেছিলাম, আপনারা ৪০ হাজার টাকা বাদ দিয়ে অন্তত ৩ লাখ লক্ষ টাকা আমার বাচ্চাদের জন্য এবং ঋণ পরিশোধ করার ফেরত দিয়ে দেন। এসময় দোকানের মালিক জমানতের টাকার বিষয়টি অস্বীকার করে। আমি এ বিষয়ে আপনাদের (সাংবাদিকদের) সহযোগিতায় উপর মহলের সাহায্য কামনা করি।

এদিকে, কাওসারের দুই যমজ সন্তানের দায়িত্ব নেওয়া হাবিবুর রহমান জুয়েল তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘প্রায় বছর ঘুরতে চললো চূড়িহাট্টার সেই ভয়ানক অগ্নিকাণ্ডের। গতকাল ব্রা‏হ্মণবাড়িয়া গিয়েছিলাম চূড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডে নিহত হাফেজ কাউসারের জমজ দুই সন্তান আমাদের সবার আদরের আব্দুল্লাহ ও মেহজাবিনকে দেখতে। ২ বছর তিন মাস বয়স হলো ওদের। সবার দোয়ায় ভালো আছে ওরা। মহান আল্লাহপাক ওদেরকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার তৌফিক দান করুক। একদিন তারাও যেন মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে। মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করতে পারে।’


সর্বশেষ সংবাদ