কিউএস র‍্যাংকিং

আট বছরে ২০০ ধাপ পেছাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাংকিংয়ের জন্য বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান কুয়াকুয়ারেলি সাইমন্ডস (কিউএস)। শিক্ষা-গবেষণার মান ও পরিবেশ বিবেচনায়  প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক র‌্যাংকিং প্রকাশ করে আসছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক এ সংস্থা। কিউএস র‌্যাংকিংয়ের গত কয়েক বছরের তালিকা বিশ্বেষণে দেখা গেছে, গত আট বছরে বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ২০০ ধাপ অবনমন হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের।

টপইউনিভার্সিটিস ডটকম সূত্রে জানা যায়, কিউএসের ২০১২ সালের জরিপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক অবস্থান ছিল ৬০১তম। ২০২০ সালে এসে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৮০১তম। অর্থাৎ আট বছরের ব্যবধানে কিউএস র‍্যাংকিংয়ে ২০০ ধাপ পেছাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

অন্যান্য বছরগুলোর র‌্যাংকিংয়ে দেখা যায়, ২০১২ সালের পর ২০১৩ সালে কোনো জরিপ প্রকাশ করেনি কিউএস। ২০১৪ সালে হঠাৎ করে ১০০ ধাপ অবনমন হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান হয় ৭০১+ তম। এরপর ২০১৭ সাল পর্যন্ত র‌্যাংকিংয়ে ঢা্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকে। ২০১৮ সালে গিয়ে কিছুটা অবনমন হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান দাঁড়ায় ৭০১-৭৫০ তম। এরপর ২০১৯ সালে এসে বড় অবনমন হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান দাঁড়ায় ৮০১-১০০০ তম। ২০২০ সালেও বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে একই অবস্থানে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

র‌্যাংকিংয়ে বড় অবনমন বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বড় বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। কম অর্থের মধ্যেও সবচেয়ে ভালো আউটপুট আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে আমাদের মূল লক্ষ্য র‌্যাংকিংয়ে ভালো অবস্থান অর্জন না। আসলে র‍্যাংকিংয়ের উৎপত্তি হয়েছিল একটি কমার্শিয়াল ভেনচার নিয়ে। ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত এবং তার পেছনের বাজেট র‍্যাংকিং একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সেই মানদণ্ডে রাশিয়ার অনেক নামকরা অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান র‍্যাংকিংয়ে থাকে না। কারণ অন্য।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন বিবেচনায় র‍্যাংকিংগুলোর উৎপত্তি হয়েছিল। র‍্যাংকিংয়ে অবস্থান করার জন্য লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের প্রতিবছরই কিছু প্রয়াস ও উদ্যোগ থাকে, যাতে তাদের অবস্থানটা সব সময় ওপরে থাকে। এর মানে হলো এ ধরনের প্রতিষ্ঠান বিশ্বের সেরা সেরা শিক্ষার্থী ও গবেষকদের আকৃষ্ট করতে পারে। একই মানদণ্ড বিবেচনায় রেখে যখন মূল্যায়ন করা হয় এবং একটি কমার্শিয়াল ভেনচার মাথায় থাকে, তখন আমাদের কুলিয়ে ওঠা কঠিন হয়।’

সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ-পঠনের মান, গবেষণা, আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানক্রম নির্ধারণ করা হয়। গবেষণায় কম বরাদ্দ ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশনা সংখ্যা কম, শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা কম থাকা ও ওয়েবসাইট নিয়মিত হালনাগাদ না করার কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল বাজেটের মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ গবেষণার ব্যয় করা হচ্ছে। এর ফলে কাঙ্ক্ষিত মানের ভালো গবেষণা হচ্ছে না। শিক্ষকদের মধ্যেও গবেষণায় আগ্রহ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশনাও কমছে। আর যেসব কাজ হচ্ছে সেগুলোও নিয়মিত ওয়েবসাইটে হালনাগাদ করা হয় না। এর ফলে র‌্যাংকিং সংস্থাগুলো অনকে সময় তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য পায় না। তাই বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে ভালো অবস্থান অর্জনে গবেষণা ও প্রকাশনা বাড়ানোর বিকল্প নেই।


সর্বশেষ সংবাদ