শামসুন নাহার হলের ‘অবৈধ দোকান’ উচ্ছেদে ছাত্রলীগের বাঁধা

  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শামসুন নাহার হলের সীমানার বাহিরে মিশুক মনির চত্ত্বর সংলগ্ন আশেপাশের দোকান অপসারণ ও ছিন্নমূল মানুষদের উচ্ছেদে বাঁধা দিয়েছে ছাত্রলীগ নেত্রীরা। আজ সোমবার দুপুরে হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

সেখানে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হল সংসদের উদ্যোগে প্রশাসন ঘোষিত দোকানগুলো সরাতে গেলে ছাত্রলীগ নেত্রীরা দলবেধে মামনে দাঁড়িয়ে বাঁধা দেয়। এসময় তাদের বলতে শোনা যায়, দোকান সরিয়ে ফেললে শিক্ষার্থীরা খাবে কী? কার অনুমতিতে এগুলো সরানো হচ্ছে?

এসময় উচ্ছেদে নেতৃত্ব দেওয়া হল সংসদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক (জিএস) আফসানা ছাফাকে ‘তুই’ বলে সম্বোধন করতে শোনা যায়। আফসানাও বলতে থাকেন, ‘তোমাকে আমি চিনি না, তুমি বলে সম্বোধন করছ কেনো?’

এ ব্যাপারে হল সংসদের জিএস আফসানা ছাফা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দোকানগুলো এখানে অবৈধভাবে বসতি স্থাপন করেছে। স্টেট ম্যানেজার এবং হল প্রাধ্যক্ষ এসব অবৈধ বলে নোটিশ দিয়েছে। সেই নির্দেশনা পেয়ে আমরা এখানে এসেছি।’

দোকানগুলো উচ্ছেদের কারণ কী এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এসব দোকানের কারণে এখানে বিকেল বেলায় বাজারে পরিণত হয়। বহিরাগত, মাদকসেবী, ভবঘুরে লোকজন আড্ডা দেয়। যার ফলে আমাদের শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। তাই আমরা স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করতে এসেছি।’

এসময় তিনি এসব দোকান থেকে ছাত্রলীগ নেত্রীদের বিশাল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ করেন।

বাঁধার কারণ কী জানতে চাইলে প্রতিবেদকের সাথে নিজের নাম এবং বক্তব্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে ছাত্রলীগ নেত্রীরা। পরে জানা যায়, ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে নির্বাচিত পাঠকক্ষ বিষয়ক সম্পাদক বিশাখা দাস ইরা এতে নেতৃত্ব দেন। তার সাথে ছিলেন, আরেক ছাত্রলীগ নেত্রী সেহেরজানসহ প্রায় বিশ জন।

বিশাখা বলেন, ‘আমি সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এখানে এসেছি। নাম বলার প্রয়োজন মনে করছিনা।’ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এতে সম্মতি দিয়েছে আপনারা বাঁধা দিচ্ছেন কেন? এমন প্রশ্নে এ শিক্ষার্থী বলেন, দোকান উঠে গেলে আমরা নাস্তা করবো কোথায়? হলের ভেতর বাড়তি দোকান দেওয়া ছাড়া এটা উচ্ছেদ হতে পারে না।’

একপর্যায়ে সাংবািদকদের সাথে অশোভন কথাবার্তা বলতে শুরু করেন তিনি। ঘটনাস্থলে এক ছাত্রলীগ নেতা জানান, ‘তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী।’

এদিকে উচ্ছেদে সম্মতি জানিয়েছেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয় সাহা। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে হল সংসদের আগ থেকেই দাবি ছিল। আমি দু’বছর যাবৎ বিভিন্নভাবে এসব উচ্ছেদ করার জন্য চিঠি দিয়ে আসছি। দোকানগুলো থাকার কারণে এখানে বহিরাগত গাড়ি পার্কিং শিক্ষার্থীদের হয়রানির শিকার হতে হয়। তাই এগুলো উচ্ছেদে আমার সম্মতি রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এ জায়গা এস্টেট ম্যানেজারের দায়িত্বে। আমার দায়িত্বে হলে আমি সরাতাম।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত এস্টেট ম্যানেজার মিসেস সুপ্রিয়া দাস বলেন, ‘এটা হল প্রশাসনের দায়িত্ব। আমরা চিঠি দিয়ে তাদের অবহিত করেছি।’ এস্টেট ম্যানেজারের পাঠানো চিঠিতে দেখা যায়, হল প্রাধ্যক্ষেরও অনুমতি রয়েছে দোকানগুলো উচ্ছেদে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘গতকাল ওই দোকানগুলো বন্ধ করা হয়েছে। আমি সবাইকে বলে দিয়েছি। এট এস্টেট অফিস করবে। প্রক্টরিয়াল টিম ও পুলিশ সাথে থাকবেন।’


সর্বশেষ সংবাদ