প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের রিডিং রুমে যেতে নিষেধাজ্ঞা ছাত্রলীগের!

  © ফাইল ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্যার এ এফ রহমান হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের রিডিং রুমে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। স্যার এ এফ রহমান হলের প্রথম বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেছেন।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, স্যার এ এফ রহমান হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটির সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী গ্রুপের সিনিয়ররা নিয়মিত গেস্টরুমে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সাথে সাথে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা হলের ক্যান্টিনেও যেন না খায়, সে নির্দেশ দেয়।

নাম গোপন রাখার শর্তে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা তাদের নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তারা যেন রিডিং রুমে না যায় এবং গেলে তাদেরকে গেস্টরুমে নিয়ে মারধর করা হবে হুমকি দিয়েছে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রলীগ কর্মীরা। মূলত পড়াশোনা থেকে বের করে শিক্ষার্থীদের রাজনীতিমুখী করা এ নির্দেশনার মূল উদ্দেশ্য বলে জানা গেছে।

তারা জানিয়েছেন, যারা গেস্টরুমে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন তাদের মধ্যে দ্বিতীয় বর্ষের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের আরিফ, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অয়ন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের হাসান, সমাজ কল্যাণ বিভাগের পলাশ, পালি ও বুদ্ধিষ্ট স্টাডিজ বিভাগের মাহবুব, সমাজকল্যাণ বিভাগের জাবেদ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তানভীর, পালি ও বুদ্ধিষ্ট স্টাডিজ বিভাগের আকিব প্রমুখ রয়েছেন।

তবে, দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাদের নিকট থেকে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য কোন নির্দেশনা আসেনা। তাদের সিনিয়ররা যে নির্দেশনা দেয়, তা তারা বাস্তবায়ন করেন মাত্র।

স্যার এ এফ রহমান হলের সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী গ্রুপের পক্ষে হল শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ প্রত্যাশীরা দ্বিতীয় শিক্ষার্থীদের এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য বলেছেন অভিযোগ উঠেছে। পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে হল শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন ও সহ-সভাপতি হুসাইন মাহমুদ আপেল রয়েছেন বলে জানা গেছে।

তবে, তিনজন প্রদপ্রার্থী হলেও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রনির কথায় সঞ্জিত চন্দ্র দাসের অনুসারীরা চলে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ‘আমাদের ইমিডিয়েট সিনিয়র ভাইয়েরা আমাদের রিডিং রুমে যেতে নিষেধ করেছেন। আমাদের হলের রিডিং রুমে আমরা পড়তে না পারলে পড়বো কোথায়?’

তিনি বলেন, ‘হলে দ্বিতীয় বর্ষের ভাইয়েরা গেস্টরুমে অনেক চাপ দেয়। অনেক ভয়-ভীতি দেখায়। রাতের বেলা আমাদের সবাইকে হল থেকে বের করে দেয় এবং রাত ১/২ টার আগে হলে আসতে দেয়না। এতে আমাদের সকালের ক্লাস মিস হয়।’

জানতে চাইলে স্যার এ এফ রহমান হলের হল প্রভোস্ট অধ্যাপক কে এম সাইফুল ইসলাম খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমার কাছে সুনির্দিষ্ট তালিকা দিয়ে অভিযোগ করলেই আমি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। রিডিংরুমে সবাই পড়বে। ছাত্রলীগ মানা করার কি আছে। আমি তদন্ত করে এর ব্যবস্থা নেব।’

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও হলের সাবেক নেতা মাহমুদুল হাসান তুষার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যেখানে ইচ্ছে সেখানে পড়বে। এখানে তাদেরকে কেউ নিষেধ করতে পারবেনা।’ সবকিছু নিয়ে চাপ দেওয়া বাড়াবাড়ি বলে মন্তব্য করেন তিনি। এছাড়া এ ধরণের কেউ কিছু করলে হল র্কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের হল কমিটির পদ প্রত্যাশী ও গত কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রনিকে ফোন দেওয়া হলেও বন্ধ পাওয়া যায়। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।