নুরের বিরুদ্ধে মামলকারী কে এই কামাল?

  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে মানহানি মামলার আবেদন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউর রহমানের আদালতে মামলাটির আবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের সহ-সভাপতি (ভিপি) মোজাহিদ কামাল উদ্দিন।

এরপর থেকেই ফের আলোচনায় এসেছেন কামাল উদ্দিন। হল সংসদ নির্বাচনের পর থেকে নানা কারণে আগে থেকেই আলোচনায় ছিলেন কামাল। আবারো ভিপির নুরুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করে খবরের শিরোনাম হয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, রংপুর সদরে বাড়ি মোজাহিদ কামাল উদ্দিনের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে মাস্টার্স শেষ করেছেন। এখন ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে সান্ধ্য মাস্টার্স কোর্স করছেন। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনে এসএম হল সংসদে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করে জয়ী হন।

নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর থেকে নানা কারণে আলোচনায় আসেন তিনি। হল সংসদ ও ডাকসু নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন। সর্বশেষ ভিপিও নুরের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, এসএম হল সংসদে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ফরিদ হাসানকে মেরে রক্তাক্ত করার ঘটনায় নেতৃত্বদানকারীদের একজন ছিলেন কামাল উদ্দিন। পরে এ নিয়ে বিক্ষোভ করে এসএম হলে গেলে শামসুন নাহার হলের ভিপি এসকে তাসনিম আফরোজ ইমির গায়ে ডিম নিক্ষেপ করা ঘটনায়ও আসে তার নাম।

এমনকি ওইদিন ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজিরের পেটে লাথি মারার ঘটনাও ঘটে। হামলার শিকার হয়েছিলেন ভিপি নুরুল হক নুর, সমাজসেবা সম্পাদক আকতার হোসেননহ আরও অনেকে।

গত শনিবার এসএম হলে সংঘর্ষ হয়। অভিযোগ উঠেছে, জিএস জুলিয়াস সিজারের নেতৃত্বে এক পক্ষ হল প্রশাসনের সরাসরি হস্তক্ষেপে কর্মচারী নিয়োগ দিতে চায়। অন্যদিকে ভিপি এম এম কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে অন্য একটি গ্রুপ নিজেদের হস্তক্ষেপে কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগে জানা গেছে।

এ নিয়ে হল সংসদের ভিপি এম এম কামাল উদ্দিন ও জিএস জুলিয়াস সিজারের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিলো। তার পরিপ্রেক্ষিতেও ওই সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত মাসে হল প্রশাসনের কাছ থেকে কক্ষ বরাদ্দ পেয়েও তখন উঠতে পারেননি এসএম হলের ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক এস এম বাপ্পী। হল সংসদের ভিপি কামালসহ কয়েকজন সদস্য তাঁকে কক্ষ থেকে বের দিয়েছেন বলে তখন অভিযোগ তোলেন তিনি। এমনকি তাঁর ব্যবহৃত জিনিসপত্রও সেদিন ফেলে দেয়া হয়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মোজাহিদ কামাল উদ্দিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ব্যক্তিগত কারণে আমি মামলা করিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে করেছি। আমি মনে করি, ভিপি পদ ব্যবহার করে তিনি ব্যবসাসহ নানা কাজ করছেন। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন করছেন।’

এসএম হলের অভিযোগগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গত শনিবারের ঘটনা নিয়োগ নিয়ে হয়নি, বরং এটা ছিলো সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়। বাপ্পীকেও হল থেকে বের করা হয়নি। সে তার কক্ষেই আছে।’

ফরিদ, ইমি, বেনজিরসহ অন্যদের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাদকসহ একজন ছাত্রকে বের কয়ে দেয়া হয়। সেদিন সাধারণ ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওই ঘটা ঘটায়। এখানে আমাদের আসলে করার কিছু ছিল না।’

এর আগে মামলার বাদী মুজাহিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুর তার পদটিকে ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অনৈতিক তদবির বাণিজ্য ও অর্থ লেনদেনে জড়িয়ে পড়েন। গত ৫ ডিসেম্বর দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে তা জানতে পারি। নুরের এসব কর্মকাণ্ড ঢাবির ইতিহাস ও সুনামকে নষ্ট করেছে। তিনি ভিপির পদটিকে কলঙ্কিত করেছেন।’

সম্প্রতি ডাকসুর ভিপি নুরের ফোনালাপ নিয়ে একাধিক সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। ফোনালাপে নুরের তদবির ও আর্থিক লেনদেনের তথ্য প্রকাশ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় খবরে।

তবে নুর দাবি করেন, ওই সংবাদমাধ্যমগুলো তার ফোনালাপের অংশবিশেষ তুলে ধরে খবর প্রচার করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। তিনি তিনটি সংবাদমাধ্যমকে এজন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান, অন্যথায় আইনের আশ্রয় নেবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন।

এর মধ্যেই গত ৬ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে নুরের পদত্যাগ দাবি করেন ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী।  পরে এ বিষয়ে নুর বলেন, ‘একটি ফোনালাপ ফাঁস করে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেখানে বিন্দুমাত্র তথ্য নেই যে, আমি অবৈধভাবে লেনদেন করেছি। মূলত ছাত্রলীগ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে ইস্যু তৈরি করতে চাইছে। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে এবং তা করা হচ্ছে সরকারনিয়ন্ত্রিত মিডিয়াকে হাত করে।’


সর্বশেষ সংবাদ