‘এক ছবি ২ হাজার, গত বছর পাঁচ হাজার নিয়েছি’

ঢাবি সমাবর্তন-২০১৮, ইনসেটে ডিইউপিএস সভাপতি আবু জাফর মো. সালেহ
ঢাবি সমাবর্তন-২০১৮, ইনসেটে ডিইউপিএস সভাপতি আবু জাফর মো. সালেহ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পদক গ্রহণকালে তোলা একটি ছবির দাম ২ হাজার চেয়েছেন ফটোগ্রাফিক সোসাইটির (ডিইউপিএস) সভাপতি আবু জাফর মো. সালেহ। গোল্ড মেডেলিস্ট ও দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী খাইরুল ইসলাম এমনটাই অভিযোগ করেছেন তার বিরুদ্ধে। যদিও দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সোসাইটি সভাপতি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে খাইরুল অভিযোগ করেন, ‘‘আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তনে মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট থেকে একটি স্বর্ণপদক পাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে; কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় চ্যান্সেলরের সাথে হাত মেলানোর সামান্য মুহূর্তের জন্য প্রথমবারের মতো আমি সুযোগ পেলাম। স্বাভাবিকভাবেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে এই মুহূর্তটাকে ফ্রেমবন্দি রাখার সুপ্ত ইচ্ছা আমারও ছিল, আছে। তাছাড়া বাবা-মায়ের ইচ্ছা রাষ্ট্রপতির সাথে একটা ছবি বাড়িতে টাঙিয়ে রাখবেন। হয়তো কারণে-অকারণে ছেলের ছবি দেখে গর্বও করবেন, যদিও ছেলে বেকার।

তবে ভিভিআইপির উপস্থিতির এ প্রোগ্রামে মোবাইল বা ক্যামেরা (অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া) তো দূরের কথা, একটা আলপিন নিয়ে যাওয়াও সম্ভব না। এমতাবস্থায়, নিজেরাই ভিজিটিং কার্ড বিতরণ করে ছবি নেওয়ার আমন্ত্রণ জানায় টিএসসিকেন্দ্রিক সংগঠন ডিইউপিএস- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফিক সোসাইটি। সন্ধ্যায় একজন মেডেলিস্ট জানাল- সে উক্ত সংগঠন থেকে এক হাজার টাকার বিনিময়ে একটা ছবির সফ্টকপি পেয়েছে! আমি ডিইউপিএস-এর অফিসে গেলে তাদের প্রেসিডেন্ট আবু জাফর মো. সালেহ জানান— একটা ছবির চূড়ান্ত মূল্য দুই হাজার টাকা! আগের বছর পাঁচ হাজার নিয়েছিলেন এবার আমাদের জন্য ছাড় দিয়ে দু’হাজার করা হয়েছে।

ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে মূল ফটোগ্রাফারের সাথে দেখা হলে আমার প্রশ্নের উত্তরে তিনি এক হাজার টাকা বললেও পরে তিনি প্রেসিডেন্টের সামনে সেটা স্বীকার করলেন না। আমি হতবাক হলাম। একটা ছবির মূল্য এত টাকা! (অনেকের কাছে এটা বেশি না হলেও আমার মতো বেকারের কাছে অনেক বেশি)।

পরবর্তীতে বিশ্বস্তসূত্রে জানতে পারলাম, তারা এই ছবি-ব্যবসার আয় থেকে একটা প্রমোদভ্রমণ করেন। আচ্ছা, সামাজিক সংগঠনের সংজ্ঞা কি এমন! ছাত্রদের সাথে এমন ব্যবসা কি নৈতিকতার বিরুদ্ধাচরণ নয়?’’

রাষ্ট্রপতি নয়, বাবার সঙ্গে ছবি দিলেন খাইরুল; লিখলেন- বাবার অর্জন, আমার নয়

 

তবে খাইরুলের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সোসাইটি সভাপতি আবু জাফর মো. সালেহ। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, ‘এক ছবির জন্য দুই হাজার টাকা নয় বরং চারটি প্রিন্ট কপি ছবি এবং সেগুলোর সফটকপির বিনিময়ে ২০০ টাকা করে নিচ্ছি। এ কাজটি গত তিনদিন ধরেই টিএসসি এলাকায় হচ্ছে। এর বাইরে সব অভিযোগ মিথ্যা।’

এদিকে ফেসবুকে পোস্ট করা খাইরুলের ওই স্ট্যাটাসে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মন্তব্য এসেছে। রানা আহমেদ লিখেছেন, ‘আপনারা শুধু একটা ক্লিক-ই দেখলেন; এর পিছনে কত বছরের শ্রম গেছে সে হিসাব রাখেন? DSLR এ ছবি তোলা এত সহজ না। একজন ডাক্তার যদি ৫ মিনিটে ৮০০ টাকা ভিজিট নিতে পারে এরা কেন আপনার হাতে ছবি পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত ২ হাজার নিবে না? আমার তো মনে হয় ছবি প্রতি ৫০০০ টাকা নেয়া উচিত। বিঃদ্রঃ কেউ এটাকে সারকাজম বলবেন না প্লিজ’’।

আতাউল হকের বক্তব্য, ‘৫০ তম সমাবর্তনে কার্জন হলের ব্যানারের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে ৩৫০ টাকা নিয়েছিল। ক’দিন পরে ছবি আনতে যেয়ে দেখি আমার মোবাইলেও ওর থেকে ভাল ছবি উঠে।
কোন ফ্রেম নাই কিছু নাই।’

সোহেলী জান্নাত লিখেছেন, আমি গোল্ড মেডেল নেয়ার সময় একটা ছবি তুলতে পারিনি এই ক্যামেরার অভাবে। পরে ডেইলি স্টারে ছবি আসায় সেখান থেকে ডাউনলোড করে নামিয়েছি। যেহেতু অল ডিভাইস নিষিদ্ধ, সেহেতু ইউনিভার্সিটি প্রশাসনের উচিৎ সকল গোল্ড মেডেলিস্টদের ছবি নিজ দায়িত্বে তুলে ফ্রিতে সরবরাহ করা।

সুমন লিখেছেন, ‘টিএসসিতে ধীরে ধীরে কিছু সংগঠন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে’। ইসলামের মন্তব্য- আমার মনে হয় এর থেকে বাজে কিছু আর হতে পারে না! সিরিয়াসলি এরা এক একটা সমাজের কীটে পরিণত হবে, যখন এরা আরো বড় পরিসরে কাজ করার সুযোগ পাবে! লজ্জাজনক সেই সাথে ধিক্কার জানাই এমন কাজের।

পূজা পুষ্প লিখেছেন, ‘আগের বছর এরা ১০০০ করে চেয়েছিল। আমরা শেষমেশ পিয়ারু ভাইয়ের দোকান থেকে ১০০ করে নিয়েছি পার কপি। 

আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, গতবছরও তিনি গোল্ড মেডেল পেয়েছিলেন এবং ডিইউপিএস তার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে ছবি দিয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ