ঢাবিতে সান্ধ্যকালীন কোর্সের পক্ষে নেই আচার্য (ভিডিও)

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্সের পক্ষে নেই রাষ্ট্রপতি ও আচার্য মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, সান্ধ্যকালীন কোর্সের কারণে বিশ্বদ্যিালয়গুলো সন্ধ্যার পরে মেলায় পরিণত হয়। বাণিজ্যিক ও সান্ধ্যকালীন কোর্সের কারণে দেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখন দিনে সরকারি আর রাতে বেসরকারি চরিত্র ধারণ করেছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এসব কথা বলেন আচার্য আবদুল হামিদ। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও গবেষকদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তন বক্তা ছিলেন জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কসমিক রে রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. তাকাকি কাজিতা। অনুষ্ঠানে তাকেও সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব সাইন্স’ ডিগ্রি দেওয়া হয়।

এসময় আচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন কোর্সের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কি পরিমাণ টাকা আদায় করা হয় তার উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, তাদের একটা বিষয় ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস। এতে তাদের ২২টা কোর্স। প্রতি কোর্সে সাড়ে ১০ হাজার টাকা। এতে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকার ওপরে হয়। এর অর্ধেক শিক্ষকরা পায়, আর অর্ধেক বিভাগ পায়। বিভাগের টাকা কী হয় জানি না, কিন্তু শিক্ষকরা পাচ্ছে। আমি এটাও জানি, যাদের শুধু পিএইচডি আছে, শুধু তারাই ক্লাস নেয়।’

রাষ্ট্রপতি সান্ধ্যকালীন কোর্স নেয়া শিক্ষকদের সমালোচনা করে বলেন, কিছু শিক্ষক নিয়মিত কোর্সের ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন। কিন্তু ইভিনিং কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্স, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়ার ব্যাপারে তারা খুবই সিরিয়াস। কেননা এগুলোতে নগদ প্রাপ্তি থাকে।

সান্ধ্যকালীন কোর্সের প্রতি নাখোশ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলন, ‘মনে রাখবেন, বিশ্ববিদ্যালয় চলে জনগণের টাকায়। সুতরাং এর জবাবদিহিও জনগণের কাছে।

ডাকসু নেতাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পছন্দ হয় না বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের পর বিভিন্ন দাবি নিয়ে আমার কাছে এসেছে শিক্ষার্থীরা। এগুলো ডাকসু নেতাদের বলা উচিত ছিল। কিন্তু তারা এর মধ্যে নেই। তাদের ব্যাপারে এমন কথাগুলো শুনি যা আমার ভালো লাগে না। তাদের উচিত ছাত্রদের কল্যাণের কাজে প্রাধান্য দেয়া। এখন তাদের নিয়ে নানান কথা শোনা যাচ্ছে। এর বেশি কিছু বলে কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চাই না।’

গত ডাকসু নির্বাচন নিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের নানান ত্রুটির কথা আমি শুনতে পেয়েছি। আশা করি , আগামীতে এ রকমের ভুল ত্রুটি হবে না।’ ভেজাল ওষুধ ও ওষুধ তৈরিতে নানা কারসাজির বিষয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, মেডিসিন বিদেশের জন্য একভাবে তৈরি করা হয়, ঢাকার জন্য এক ভাবে তৈরি করা হয়, গ্রামাঞ্চলের মানুষের জন্য আরেক ভাবে তৈরি করা হয় ছাত্রসমাজকে বিষয়টি রুখে দাঁড়াতে হবে।

সম্প্রতি দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া অমানবিক ও অনভিপ্রেত ঘটনা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও শিক্ষার্থীদের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া করে জ্ঞান অর্জনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, লাশ হয়ে বা বহিষ্কৃত হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য নয়। আমি আশা করব ভবিষ্যতে কর্তৃপক্ষ সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নেবে।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তোমাদের মা-বাবা অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। এমন অনেক পরিবার আছেন যারা সর্বস্ব দিয়ে তাদের ছেলেমেয়েদের মানুষ করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান। তোমাদের মূল দায়িত্ব হলো লেখাপড়া করা এবং দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলা। তোমরা এমন কোনো কাজ করবে না যাতে তোমাদের পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের সম্মান ক্ষুন্ন হয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো কোনো শিক্ষালয় নয়। বাঙালির ইতিহাসের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগ। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের ইতিহাসে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬ এর ছয় দফা, ’৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান, সর্বোপরি ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। প্রতিটি আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।” এসময় রাষ্ট্রপতি যেসব শিক্ষার্থী স্নাতকে ভূষিত হলেন এবং যারা গবেষকের স্বীকৃতি পেলেন তাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

সমাবর্তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী শহিদুল্লাহ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, সিনেট, সিন্ডিকেট, হল প্রভোস্টসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ