সকালে চাইলেন অপসারণ, রাতে আলিঙ্গন!

  © সংগৃহীত

মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে একে অপরের পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর এবং জিএস গোলাম রাব্বানী। পরে রাতেই তাদেরকে একসঙ্গে আলিঙ্গন করতে দেখা গেছে। এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠার পর নিজ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন বলে গতকাল রোববার দাবি করেছেন তিনি। তাকে অনুসরণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের ভিত্তিতে তাকেও পদত্যাগ করার আহবান জানান ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী।

ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরের টেন্ডারবাজি, তদবির বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক লেনদেনের প্রতিবাদে নিন্দাজ্ঞাপন, ভিপি পদ থেকে নুরকে পদত্যাগের আহবান এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এমন দাবি করেন ডাকসুর ২৫ সদস্যের ২৩ জন। সেখানে রাব্বানী ওই আহবান জানান।

এর জবাবে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর গতকাল বলেন, ‘ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার হয়ে ডাকসু জিএস লজ্জায় এতদিন ডাকসুতে আসেননি। রাতের অন্ধকারে দু-একদিন এসেছেন। আজ এসেছেন। তারা ভেবেছে ভিপিকে ঠেকাতে ছাত্রলীগকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ছাত্রলীগের মধ্যে তো বিভেদ রাখা যাবে না। তখন তারা ঘর থেকে জিএসকেও নিয়ে এসে সংবাদ সম্মেলন করেছে।’

ভিপি নুর বলেন, ‘কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে ডাকসু ভিপি বিন্দুমাত্র অনৈতিক লেনদেন করেছে, অবৈধ লেনদেন করেছে, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হয়েছে- তাদের এই প্রশ্ন তোলার আগেই প্রমাণটা গণমাধ্যমে উপস্থাপন করলেই ডাকসু ভিপি পদত্যাগ করবে। ছাত্রলীগের কথায় ডাকসু ভিপি পদত্যাগ করবে না বা ছাত্রলীগের কথায় কর্ণপাত করবে না।’

দিনের বেলায় দুজন এভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে কথা বললেও রাতেই দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। নুরুল হক নুর এবং গোলাম রাব্বানীর একে অপরকে আলিঙ্গন করার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তারা এভাবে আলিঙ্গন করেন বলে জানা গেছে।

ওই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে জিএস প্রার্থী হিসেবে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেয়া আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক লিখেছেন, ‘তারা হাসেন, মানুষকে হাসান এবং আলোচনায় থাকেন। দুজনই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং মিডনাইটের কলংকিত ডাকসুর তথাকথিত ভিপি জিএস। (গতকালের ছবি- ৮ ডিসেম্বর’২০১৯)।’

ওই পোস্টে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মুঁহাম্মদ রাশেদ খান মন্তব্য করেছেন, ‘ভাই, রাজনীতিতে সৌজন্যতা বড় একটা জিনিস। আপনার সাথে কেউ কোলাকুলি করতে চাইলে আপনি কি বলবেন, আমি যার তার লগে কোলাকুলি করি না? রাজনীতিতে দরকার সম্প্রতি, দরকার সৌজন্যতা, দরকার ভ্রাতৃত্ব।

যতোদিন হানাহানির রাজনীতি চলতে থাকবে, ততোদিন এই দেশের কোন উন্নতি হবেনা। তাই নতুন ধারা রাজনীতি তৈরি করতে আমাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। আর আপনার কি মনে হয় নুর ভোট না পেয়েই নির্বাচিত?

আপনাদের কয়েকজন এমপি যদি সংসদে যেতে পারে, ভিপি তার দায়িত্ব গ্রহণ করে জোরোলো প্রতিবাদ করলে সমস্যা কোথায়? আপনাদের সাথে মিশলে নুরু বিএনপি, তারেক রহমানের লোক। গণভবনে গেলে ছাত্রলীগ। আর গণফোরামে গেলে গণফোরামের লোক। আসলে নুর যাবে কোথায়?

নুরু ভিপি হওয়ার পর যেভাবে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছে, এটা কি এই ১২ বছরে অন্য কোন নেতার দ্বারা সম্ভব হয়েছে? আর আপনাদের সভাপতিকে গোলাম রাব্বানী সেলফি তুলে, কোলাকুলি করে ঢাবিতে স্বাগত জানিয়েছিল। এগুলো কি ভুলে গেছেন? আশা করি রাজনৈতিক সৌন্দর্যতা বুঝবেন।

কেউ যদি হ্যান্ডসেক করার জন্য হাতটা বাড়িয়ে দেয়, তবে আপনি হাতটা ফিরিয়ে নিয়ে শত্রুতা ছাড়া আর কিছু বাড়াতে পারবেন না। ক্ষোভ ছাড়া ভালবাসা তৈরি করতে পারবেন না। আসুন নতুন ধারার রাজনীতিতে শামিল হই।’

আলমগীর শাহরিয়ার নামে একজন লিখেছেন, ‘আপনার আমার সব দেখা সত্য নয়, সব জানাও সত্য নয়। আপনি-আমি দেখি টেলিভিশন আর ফোনের সুসজ্জিত পর্দা। এর নেপথ্যে আরও অনেক কলাকুশলী থাকে। পর্দার অন্তরাল চিরকাল এই ছবির মতই। চ্যানেল আইয়ের এক অনুষ্ঠানে ডাকসুর আলোচিত ভিপি-জিএস।’

শাহিন নামে একজন লিখেছেন, ‘দুইটা ভাড় জনগণকে বোকা বানাচ্ছে আর আমরা অনেকেই বোকা বনে যাচ্ছি। পরিকল্পিতভাবে ছাত্রলীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে নুরকে একটা শক্ত অবস্থানে আনার জন্য মিডিয়ার মাধ্যমে সব সময় আলোচনায় রাখা হচ্ছে, এটা যারা বুঝছেন না তারা খাল কেটে কুমির আনছেন।

১১ মার্চের ডাকসু নির্বাচনকে ঠিক সেইভাবেই বৈধতা দেওয়া যায়, যেভাবে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন বৈধতা পেয়েছে। সুতরাং ভবিষ্যতে নিজেদের পায়ে নিজেরা কুড়াল মারার পথ তৈরি করে দিলে পরিণতির কথা চিন্তা কইরেন।’


সর্বশেষ সংবাদ