‘শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণ না করে অনৈতিক লেনদেনে ব্যস্ত নুর’

  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, তদবির বাণিজ্য ও অনৈতিক অর্থ লেনদেনের অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত নেতারা। এর  প্রতিবাদে আজ রোববার (৮ডিসেম্বর) ডাকসু ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নুরকে পদত্যাগের আহবান জানিয়েছেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী ছাড়াও সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসেন, সংস্কৃতি সম্পাদক আসিফ তালুকদার, সদস্য রাকিবুল ইসলাম ঐতিহ্যসহ আরো অনেকে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রাকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য। এতে বলা হয়, ডাকসুতে ২৫টি পদের মধ্যে ছাত্রলীগ থেকে মনােনীত ২৩ জন বিপুল ভােটে নির্বাচিত হয়। আমরা গণতান্ত্রিক ভাবে নির্ধারিত এবং ক্ষেত্রবিশেষে শিক্ষার্থীদের প্রয়ােজনমাফিক যে কোন কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও প্রয়ােজনীয় প্রতিটি মুহূর্তে পাশে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কখনােই কোন আকাশকুসুম কল্পনায় শিক্ষার্থীদের ভাসিয়ে দিইনি।

তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত ২৩ জন ছাত্র প্রতিনিধির একক ও যৌথ উদ্যোগে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবনমান ও পড়াশুনার পরিবেশ উন্নত করার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের সুবিধা ও সুযােগ প্রাপ্তির সংগ্রামকে এগিয়ে নেবার কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছি। তখন ডাকসুর ভিপি পদটি ব্যবহার করে নুরুল হক নুরের টেন্ডারবাজি, তদবির বাণিজ্য ও অনৈতিক অর্থ লেনদেনের খবর আমাদের লজ্জিত করে।

আরো বলেন, ‘লজ্জিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে, লজ্জিত করে শত বছরের দ্বারপ্রান্তে পৌছানাে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গােরবান্বিত ইতিহাস, ঐতিহ্যের ধারক। শিক্ষার্থীদের আবেগকে ব্যবহার করে নুর আজ ডাকসুর ভিপি পদের মতাে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে অবস্থান করছে। শিক্ষার্থীরা যে প্রত্যাশা নিয়ে তাকে নির্বাচিত করেছে, নুর একদিকে তার কিছুই পূরণ করতে পারেনি।অন্যদিকে তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করেছে, অপমান করেছে, জাতির সামনে শিক্ষার্থীদের লজ্জিত করেছে।’

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কল্যানার্থে নুরের নামে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে। এর এক পয়সাও এ নয় মাসে ব্যয় না করে নুর শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করেছে, নিজের দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। বিগত নয় মাসে ডাকসু ভিপির উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কাজও সম্পন্ন না হলেও ভিপি পদকে ব্যবহার করে তিনি নিজের রাজনৈতিক অভিলাষ পুরণের কাজ করেছেন পুরাে দমে।’

এতে বলা হয়, ‘নিজেকে জাতীয় বীর হিসেবে হাজির করতে গিয়ে তিনি আজ জাতীয় বেঈমানে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রি অফিসে একাধিক টেন্ডারবাজি, তদবির বাণিজ্য, নিয়ােগ ও বদলি ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেকে নিয়ােজিত রেখেছেন। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের কথা না বলে, দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার অধিকার নিয়ে সােচ্চার হয়েছেন।’ 

আরো বলা হয়, ‘শিক্ষার্থীদের অন্যায্য উন্নয়ন ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ না করে, বনানী অগ্নিকান্ডে সেলফি তুলতে গিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের প্রয়ােজনে বিভিন্ন বিভাগ ও অনুষদে না গিয়ে, দৌড়ে বেরিয়েছেন বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের অভিজাত নাইট পার্টিতে। শিক্ষার্থীদের ন্যনতম স্বস্তি-প্রশান্তির উদ্যোগ না নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন টক শাে তে চটকদারী বক্তব্য দিয়ে।’

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলাকে ‘মাত্র দুই কোটি টাকার বিষয় বলে, নিজের সম্পর্কে বলেছেন, ডাকসু ভিপির জন্য মাত্র ১৩ কোটি টাকা কোন বিষয় নয়। এসময় ভিপি পদ ব্যবহার করে নুরুল হক নুর কিভাবে জিরাে থেকে হিরাে হলেন তা অনুসন্ধান করে ছাত্রসমাজের সামনে উপস্থাপন করার আহবান জানান তারা।

ডাকসু নেতারা বলেন, ‘নির্বাচনে বিজয়ী হবার পর শিক্ষার্থীদের জন্য ভিপি নুর কি কাজ করেছে, নিজের প্রকাশিত ইশতেহারের কতটা কি বাস্তবায়ন করেছে তা জানার ও সবাইকে জানাতে হবে।সম্প্রতি দুইটি টেলিফোন ফোনালাপ ফাঁস হবার মাধ্যমে নুরের স্বরূপ সকলের সামনে উন্মােচিত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবার অভিনয় করতে করতে নুর যে টেন্ডারবাজি, তদবির বাণিজ্য, অনৈতিক লেনদেন ইত্যাদিতেও দক্ষতা অর্জন করেছে তা ছাত্রসমাজের সামনে পরিষ্কার হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘এই ফোনালাপ প্রকাশিত হবার পর নুরের বিভিন্ন বক্তব্য, বিজ্ঞপ্তি, মন্তব্য আমরা গভীরভাবে লক্ষ্য করেছি। সেখানে তিনি যেভাবে নিজের অভিমত ব্যক্ত করেছেন, তা ছাত্র সমাজকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের শামিল। আলােচিত সেই আন্টির ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক পুরাে বিবরণ জাতির সামনে উপস্থাপন করা হােক। যে পরিচিত ভাইয়ের সাথে কথােপকথন তার পরিচয় প্রকাশ করা হাক।’

আরো বলা হয়, ‘যুক্তরাজ্য প্রবাসী যার সাথে কথােপকথন ফাঁস হয়েছে, তার পরিচয় প্রকাশ করা হােক। আমরা এও জানতে চাই যে, কি এমন কথা, লেনদেন, সম্পর্ক তাদের মধ্যে বিদ্যমান যা হোয়াটস এপে বলতে হবে? অভিযােগ যেহেতু নুরের দিকে, তাই নুরকেই এসব প্রকাশ করতে হবে।’

উল্লখিত দুইটি টেলিফোন কথােপকথন ফাঁস হবার পর যে ভিডিও ক্লিপটি ফাঁস হয়েছে তার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ‘নুর নির্লজ্জভাবে বলেছেন, ডাকসু ভিপির জন্য মাত্র ১৩ কোটি টাকা কোন বিষয় নয়। কত ১৩ কোটি টাকা আসবে-যাবে। তার এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য ছাত্রসমাজকে চরমভাবে উদ্বিগ্ন করে। ডাকসু ভিপির মতাে দায়িত্ব তার কাছে কোনভাবেই নিরাপদ মনে করে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।’

তারা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশের আপামর ছাত্র সমাজের পক্ষে নুরুল হক নুরের প্রতি আহবান জানাই, নিজের সকল অপকর্ম, ব্যর্থতা, অক্ষমতা স্বীকার করে ডাকসুর ভিপি পদ থেকে আপনাকে পদত্যাগ করতে হবে।’

এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ডাকসুর সভাপতির নিকট তারা আহবান জানান, ভিপি পদটিকে অপবিত্র, অপব্যবহার করার অপরাধ স্বীকার করে নুর যদি পদত্যাগ না করে, তাহলে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে তাকে ডাকসু থেকে বহিষ্কার করা হােক।

একইসাথে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহবান জানিয়ে তারা বলেন, নুরের যাবতীয় কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তদন্তের ব্যবস্থা করা হােক, ডাকসু তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কমুক্ত করা হােক


সর্বশেষ সংবাদ