০৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ২০:০৮

ছাত্রলীগেরই নির্দেশ ছিলো ভিপিকে গণরুমে ঢুকতে না দেয়ার

  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলের গণরুম পরিদর্শনে গেলে ছাত্রলীগের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর। তবে এর পিছনে মূল কলকাঠি নেড়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের নির্দেশে ভিপিকে হলের গণরুমে ঢুকতে বাধা দেয় বলে একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টার এই বাধা প্রদানের ঘটনা ঘটে হলের গণরুম হিসেবে পরিচিত ৩০০২ এবং ৩০০৩ নাম্বার রুমের সামনে।

গোপন সুত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগের নেতারা আগে থেকেই ২য় বর্ষ এবং ১ম বর্ষের ছাত্রদের নির্দেশ দিয়েছিল যাতে ভিপি নুরুল হককে গণরুমে ঢুকতে দেওয়া না হয়। সাংগঠনিক দিক থেকে ভিপিকে পিছিয়ে রাখেতে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাতে জনমত সৃষ্টি করতে না পারেন সে লক্ষ্যেই এ এজেন্ডা হাতে নেয় ছাত্রলীগ।

প্রসঙ্গত, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগেরে একমাত্র শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ছিলো শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কথা বলা, ভূমিকা রাখা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ। সেখান থেকেই এ সংগঠনটিকে তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছে বলে ছাত্রলীগ ও অন্যান্য সূত্রে জানা যায়। এর ফলস্বরূপ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভিপি ও তার প্যানেলের জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী করতে মরিয়া ছাত্রলীগ। ডাকসু নির্বাচনের পরপর বহিরাগত ইস্যুতে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে গেলে ভিপি এবং হল সংসদের এক নারী নেত্রীকে লাঞ্চনা করে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছাত্রীদের মধ্যে সাইবার সচেতনতামূলক কর্মসূচী পালন করতে গেলে ছাত্রলীগের বাধা এবং অসহযোগিতার মুখে পণ্ড হয়ে যায় সে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। অভিযোগ রয়েছে ভিপি কাজ করতে গেলেও তাকে বরাদ্দ দেয়া হয় না। দিব দিচ্ছি করে করে ঝুলিয়ে রাখছে প্রশাসন।

মঙ্গলবার বিজয় একাত্তর হলে ভিপিকে প্রবেশে বাধাদানের বিষয়টি জানিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১ম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ভিপি নুরুল হক যখন হল গেইটে আসেন তখন ৩০০৩ নাম্বার রুম থেকে ছাত্রলীগের সাদিক এবং মাজেদ ভাই এসে আমাদেরকে রুম বন্ধ করে দেয়। উনি রুম বন্ধ না রাখলে অবস্থা খারাপ হবে বলে আমাদের ধমক দেয়। তারপর যখন ২য় বর্ষের রুমে যান তখন উনারা ধাক্কাধাক্কি আর কথা কাটাকাটি করেন। সাদিক ভাই এক পর্যায়ে নুরুল হককে বলেন, কার অনুমতি নিয়ে হলে আসছেন? হল সংসদের অনুমতি ছাড়া হলে আসা যাবেনা।

পরে আমাদের ৩০০২ নাম্বার রুমের সামনে দিয়ে আসলে আমাদের মধ্য থেকে সঞ্জিত এক অনুসারী দরজা বন্ধ করে দেয়। ১ম বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী উচ্চস্বরে ভিপির পেছনে গালি দিতে থাকে। তাদের মধ্যে আছে সুজন, রাকিব, হাবিব, নাফিসহ অনেকে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নুরুল হক যখন চলে যাচ্ছিল তখন বিজয় একাত্তর হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক আবু ইউনুস, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রণো আনোয়ার, সদস্য রাব্বি শেখ আসেন। তারাও বাকবিতণ্ডা করে ভিপিসহ সবাইকে বের করে দেয়।

দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ভিপি নুরুল হক যখন বের হয়ে যাচ্ছিল তখন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বেশ কয়েকজন উচ্চস্বরে গালি দিচ্ছিল এবং ‘ভুয়া’ বলে বলে চিৎকার করে। তাদের মধ্যে রয়েছে আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র রাব্বি, ইতিহাস বিভাগের শাহরিয়ার, সঞ্জিত চন্দ্র দাসের অনুসারী জিবু এবং ইকোনমিকস বিভাগের স্বাগত।

উল্লেখ্য, রাব্বিকে গেস্টরুমে নির্যাতনের কারণে বহিষ্কার করা হয়। তবুও হলেই থাকে বলে জানান শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের বিল্লালকে মারার অভিযোগ রয়েছে স্বাগত-এর বিরুদ্ধে।

ভিপির সঙ্গে থাকা ডাকসু সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহবায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন, ফারুক হোসেনসহ অন্যরাও ধাক্কাধাক্কি এবং হেনস্থার শিকার হয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২য় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ভিপি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি। উনি চাইলেই আসতে পারেন। ছাত্রলীগের নেতারা যদি অনুমতি ছাড়া হলে আসতে পারেন তাহলে উনি কেন পারবেননা তা আমার মাথায় আসেনা। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি আরো, নাম বললে আমিও আবরার হতে পারি। দয়া করে আমার নাম দিবেননা।

আজকে বিজয় একাত্তর হলের গণরুমের যাওয়া প্রসঙ্গে ভিপি নুরুর হক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা কয়েকজন বিজয় একাত্তর হলে দুপুরে খেতে গিয়েছিলাম। ১ম বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করলে আমরা গণরুমে যাই। সেখানে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে চাইলে ছাত্রলীগ পরিচয়ে কয়েকজন উচ্ছৃংখল আচরণ করে। একই সাথে অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করে। আমি হল প্রাধ্যক্ষকে বিষয়টা অবহিত করেছি তিনি বলেছেন বাইরে আছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজয় একাত্তর হল সংসদের এজিএস আবু ইউনুস দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, হল সংসদের কেউ বাধা দেয়নি। ছাত্রলীগও বাধা দেয়নি। হলে আসতে অনুমিত নিতে হবে এমন না, তবে জানিয়ে আসলে সুন্দর হয়, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানো যায়।