০৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৮:০৩

ভিপির কাজ কী, যা করেছেন

  © টিডিসি ফটো

দুই যুগের বন্ধ্যাত্বের পরে চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দেশের দ্বিতীয় সংসদখ্যাত ডাকসু নির্বাচন। নির্বাচনে ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে জয় লাভ করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, বাকি ২৩ পদে আছেন ছাত্রলীগ মনোনীত প্যানেলের নেতারা। নির্বাচনের পর একে একে কেটে গেছে প্রায় ১০ মাস। এর মধ্যে বেশ জলঘোলা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে ডাকসু ভিপির দায়িত্ব ও কর্মপ্রচেষ্টা এবং এগুলোর বিপরীতে কথা উঠছে কাজের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা নিয়েও। ভিপির কাজ কী? বিষয়টা নিয়েই প্রায়ই কথা ওঠে। ছাত্রলীগ তো বটেই, সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অনেক সময় প্রশ্ন করেন- দায়িত্বগ্রহণের এত দিনে কী করেছেন নুর? এবার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ডাকসু নির্বাচন (২০১৯)-এর জিএস প্রার্থী মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন।

রাশেদ খাঁন তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসে ভিপি নুরের দায়িত্ব ও সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেন। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো-

“ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বলা হয় ভিপি শিক্ষার্থীদের জন্য কি কাজ করেছে, সে তো তার সংগঠন, ইফতার,  অ্যাম্বাসি, পেঁয়াজ, খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন, জাতীয় সমস্যা, টকশো ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত।

ডাকসু নির্বাচন হওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত ভিপি কিছুই করেনি/ করতে পারেনি, কিন্তু কেউ স্বীকার করুক আর না করুক, সে ছাত্রলীগের প্রতিটা অন্যায় পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। আর এই প্রতিবাদই ছাত্রলীগের জন্য সবচেয়ে বড় জ্বালার বিষয়!

নানা বাধা, বৈরিতা ও প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে ২৩ জনের বিরুদ্ধে গিয়ে ভিপির জায়গা থেকে কতোটুকু কাজ করা সম্ভব?

ডাকসুর প্রতিটা মিটিং এ ভিপি গণরুম গেস্টরুম, টর্চারসেলের বিষয়ে আলোচনা তুলেছে। প্রতিটা হলের প্রভোস্ট বরাবর চিঠি দিয়েছে, একাধিকবার উপাচার্যের সাথে আলোচনায় বসেছে। কিছুদিন আগে অপারাজেয় বাংলার পাদদেশে গণরুম, গেস্টরুম বন্ধের জন্য ভিপি ছাত্র- শিক্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছিলো, কিন্তু সেখানে খুব বেশি শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অংশ নেয়নি। কেন অংশ নেয়নি, তা আপনারা ভালো করেই জানেন।

ভিপির ইনভাইটেশনে ভিসি স্যারসহ প্রশাসনের অন্য কোন শিক্ষক অংশ না নিলেও ছাত্রলীগের নানা প্রোগ্রাম বা তাদের প্যানেল থেকে নির্বাচিত সদস্যের প্রোগ্রামে তিনি ইনভাইটেশন পাওয়া মাত্র গর্বের সহিত অংশ নিয়ে থাকেন, কারণ তিনি তার শিক্ষাজীবন থেকে এই সংগঠনের একনিষ্ঠ ভক্ত। কিন্তু ভিপির ইনভাইটেশনে সাড়া ও তার উদ্যোগ সফল করার বিষয়ে প্রশাসনের কতোটুকু আন্তরিক?

বহিরাগত উচ্ছেদ করতে গিয়ে ভিপি এসএম হলের ডিম হামলার শিকার হয়েছিলো, সেটার কোন বিচার হয়েছে? ভিপি তো অধিভুক্তি সমস্য নিরসনের বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছিলো, সমাধানের বিষয়ে প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছিলো, সমাধান হয়েছে? সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন আন্দোলনের চাপে প্রশাসন বলেছে, ১ম বর্ষ থেকে প্রশাসনের মাধ্যমে সিট বণ্টন করা হবে। বাস্তবেও প্রশাসন সেটা করবে কি না সন্দেহ! কিন্তু আন্দোলনের চাপে এই বিষয়ে আশ্বাস দিতে প্রশাসন যে বাধ্য হয়েছে, এখানে কি ভিপির কোন অবদান নেই? নাকি এই আন্দোলনগুলো ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে নির্বাচিতরা করেছে? বরং তারা শিক্ষার্থীদের প্রতিটা যৌক্তিক আন্দোলনে বাধা দিয়েছে।

আচ্ছা মেনে নিলাম ভিপি কোন কাজ করেনি বা করতে পারেনি। ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে নির্বাচিতরা অনেক কাজ করেছে, সেজন্য তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। তাদের কাজের ধারাবাহিকতায় এবার গণরুম, গেস্টরুম ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জোর করে শিক্ষার্থীদের নেওয়া বন্ধ করা হোক।

পারবে এইগুলো বন্ধ করতে? যদি পারে, তবে ছাত্রলীগ সর্বমহলে প্রশংসিত হবে, আর না পারলে?

ছাত্রলীগকে বলতে চাই, সরকারের জায়গায় বসে থেকে হাজার হাজার উন্নয়ন করা যায়, কিন্তু অন্যায়ের প্রতিবাদকারী হিসেবে বিরোধীদলের জায়গা থেকে কতোটুকু কাজ করা যায়? তাদেরকে কি কাজ করতে দেওয়া হয়?
কথায় কথায় ওবায়দুল কাদের সাহেব বলে থাকেন, বিরোধীদলের আন্দোলন করার ক্ষমতা নাই, মাঠে নামার সাহস নাই, কিন্তু বিএনপি যখন মাঠে নামে তখন গণগ্রেপ্তার শুরু হয়।

ভিপির অবস্থাও ঠিক সেইম। কথায় কথায় বলা হবে, ভিপি কি করেছে, ভিপি কি করেছে? কিন্তু করতে গেলে নানা বাধা প্রদান করা হয়, ডিম হামলা করা হয়। আচ্ছা মুখ চেপে ধরে যখন বারবার বলা হয়- কথা বল, কথা বল, কথা বলা আদৌও সম্ভব?

ডাকসুর আনুষ্ঠানিক মিটিং সম্পর্কে ভিপিও সমাজসেবা সম্পাদককে জানানো হয় না, ডাকসুর অনুষ্ঠান সম্পর্কে জানানো হয় না, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পিছন থেকে স্লেজিং করা হয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাকলেও নামটা পর্যন্ত দেওয়া হয় না, কোনঠাসা করে রাখা হয় ইত্যাদি। এমন প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে কতোটুকু কাজ করা সম্ভব তা শিক্ষার্থীরাই বিচার করুক।”