০২ ডিসেম্বর ২০১৯, ২৩:১৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ১৯২৩ সালে প্রথম, আজ ৫২তম সমাবর্তন

  © ফাইল ফটো

আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তন। এ সমাবর্তনে ২০ হাজার ৭৯৬ জন গ্র্যাজুয়েটকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিগ্রি প্রদান করা হবে। এদের মধ্যে ১০ হাজার ৬৭৩ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং অধিভুক্ত সাত কলেজের ১০ হাজার ৪৪ জন। এবারের সমাবর্তনে ৭৯ জন কৃতি শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীকে ৯৮টি স্বর্ণপদক, ৫৭ জনকে পিএইচডি, ছয়জনকে ডিবিএ এবং ১৪ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেওয়া হবে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এই সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠান হবে। এর বাইরে আরও দুইটি বাড়তি ভেন্যু হিসেবে থাকছে ঢাকা ও ইডেন কলেজ। বেলা ১২টায় সমাবর্তন শুরু হবে। সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সভাপতিত্ব করবেন। এ সমাবর্তনে বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেবেন পদার্থে নোবেল বিজয়ী জাপানের তাকাকি কাজিতা।

অনুষ্ঠানসূচি

এ দিকে সমাবর্তন উপলক্ষে উৎসবমুখর পরিস্থিতি বিরাজ করছে পুরো ক্যাম্পাসে। গাউন পরে, মাথায় হ্যাট লাগিয়ে সমাবর্তনের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন গ্র্যাজুয়েটরা। একে অপরের সাথে ছবি তুলছেন, কেউ আবার গাউন পরে কার্জন হল, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের পুকুরপাড়, টিএসসি, রাজু ভাস্কর্য, বটতলা, অপরাজেয় বাংলা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনের ‘নূর চত্বর’, মধুর ক্যান্টিন, সিনেট ভবন, স্মৃতি চিরন্তন প্রভৃতি স্থান ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এক কথায় সমাবর্তনপ্রত্যাশী গ্র্যাজুয়েটদের পদচারণায় গোটা ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।

জানতে চাইলে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে সমাবর্তনে অংশ নেয়া গ্র্যাজুয়েট আল আমিন বলেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছে সমাবর্তনের দিনটি খুবই মূল্যবান। একই সাথে আবেগ, ভালোবাসা এবং সম্মানের। এ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই বন্ধুবান্ধব-শিক্ষকদের সাথে প্রিয় কিছু মুহূর্তকে ফ্রেমে বন্দী করে রাখছি।

১৯২৩ সালে প্রথম: দেশের বিশ্ববিদ্যালসমূহের মধ্যে সমাবর্তন প্রথম শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের হাত ধরে। সমাবর্তনে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাস বেশ উজ্জ্বল। ৯৬ বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ব্রিটিশ আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বপ্রথম নিয়মিত সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। আজকের (সোমবার) মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৫২ বার সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে।

১৯২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বপ্রথম নিয়মিত সমাবর্তনে বাংলার তৎকালীন গভর্নর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর লর্ড লিটন (রোনাল্ডশে সিআইই) সমাবর্তন ভাষণ দেন। এরপর ১৯২৪ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই (সর্বমোট ২৪ বার) সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ আমলে শেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালের ২১ নভেম্বর।

পাকিস্তান আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৮ সালের ২৪ মার্চ। ২৪ মার্চের সেই সমাবর্তনে কার্জন হলে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠার দাবিকে নাকচ করে দিয়ে জঘন্যতম ভাষণ দিয়েছিলেন তার প্রতিবাদে সমাবর্তন স্থলেই তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং ছাত্ররা দাঁড়িয়ে নো নো বলে তীব্র প্রতিবাদ করেন, তারই ধারাবাহিকতায় পূর্ব পাকিস্তানে ভাষা আন্দোলন আরো বেশি গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। ১৯৫২ সালের সমাবর্তনের তারিখ নির্দিষ্ট ছিল ২৪ ফেব্রুয়ারি কিন্তু মহান ২১ ফেব্রুয়ারির ঐ ঘটনায় আর হতে পারেনি। সে বছর ১৭ ডিসেম্বর সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত মোট ১৫ বার সমাবর্তন হয়।

১৯৬৪ সালের সমাবর্তন ছিল এক পণ্ডময় সমাবর্তন, তখনকার তত্কালীন উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ড. এম ওসমান গনি ও চ্যান্সেলর আবদুল মোনায়েম খান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সেবারই প্রথম কোন সমাবর্তনে চ্যান্সেলর ও ভাইস চ্যান্সেলর উভয়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন। কিন্তু মোনায়েম খানের কাছ থেকে ডিগ্রি নিতে ছাত্র-ছাত্রীরা অস্বীকার করলে এই সমাবর্তন পণ্ড হয়ে যায়। পাকিস্তান আমলে সর্বশেষ সমাবর্তন হয় ১৯৭০ সালে ৮ মার্চ; সেটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম সমাবর্তন।

স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো (৪০তম) সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাষ্ট্রপতি হিসেবে সমাবর্তন উদ্বোধন করার কথা ছিল; কিন্তু তার আগেই ভোররাতে ঘটে যায় সেই নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড, ১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডি ফলে তখন সমাবর্তন স্থগিত করা হয়।

এরপর স্বাধীন বংলাদেশে প্রথম সমাবর্তন (৪০তম) অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর যা ছিল দীর্ঘ ২৯ বছর বিরতির পর। এরপর সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০০১, ২০০৪, ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯, ২০১২, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সব থেকে বৃহত্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালের মার্চ মাসে (৪৭তম), প্রধান বক্তা ছিলেন ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন-এর মহাসচিব প্যাসকেল ল্যামি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। এটিও সমাবর্তন ইতিহাসের এক অনবদ্য সংযোজন, সমাবর্তনের প্রধান বক্তা ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে প্রথমবারের মত প্রথম সম্পূর্ণ বাংলায় সমাবর্তন ভাষণ দিয়েছিলেন। 

২০১৪ সালের ৭ এপ্রিল ৪৮তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ (সার্ন)-এর মহাপরিচালক অধ্যাপক রোল্ফ হুয়ের।তাকে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি ৪৯তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তা ছিলেন জেনেভাভিত্তিক মেধাস্বত্ব সংগঠন ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের মহাপরিচালক ফ্রান্সিস গ্যারি। ২০১৭ সালের ৪ মার্চ ৫০তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৭ হাজার ৮৭৫ জন গ্র্যাজুয়েট অংশগ্রহণ করেন। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিও’র প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক অমিত চাকমা। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তাকে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

সর্বশেষ, ২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সমাবর্তনে ২১ হাজার ১১১ জনকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছিল। এই সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সর্বাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এই সমাবর্তনে বক্তা হিসেবে জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।