৭ মামলার আসামি সেই কাউসার ইংরেজিতে পড়বেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ‘খ’ ইউনিট থেকে অংশ নিয়ে হয়েছিলেন ১২৮তম। ইচ্ছা ছিলো আইনে পড়ার। কিন্তু সামান্যর জন্য আইন পাননি। পেয়েছেন ইংরেজি। অদম্য মেধাবী এই ছাত্রের নাম মো. কাউসার।

তবে এই কাউসারের পথচলা যতটা সহজ ভাবা হচ্ছে, ততটা সহজ ছিল না। স্থানীয়দের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত একে একে দায়ের করা হয়েছে ৭টি মামলা। অবাক করা বিষয় হলো সবগুলো মামলার বাদী একজনই!

কাউসারের এই সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরেছেন তার সাবেক শিক্ষক ৩১তম বিসিএসের ক্যাডার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র কামরুল ইসলাম। কাউসার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগ পাওয়ার দুইদিন আগেও কীভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন এক ফেসবকু স্ট্যাটাসে তা বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হল-

‘আমার ছাত্র কাওসারকে নিয়ে লিখেছিলাম কয়েকদিন আগে। মামলা তার পিছু ছাড়ে না। গত ২ নভেম্বর তাকে আরেকটা মামলার আসামী করা হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্টের পর সে কয়েক দিনের জন্য বাড়িতে গিয়েছিল। এরমধ্যে এক মামলার হাজিরার তারিখ ছিল ২৮ অক্টোবর। আমাকে জানানোর পর বললাম ঢাকা চলে আস। আর উকিলকে ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্টের কপি দিয়ে এসো।যাতে তিনি আদালতে বলতে পারেন সে ভর্তির কাজে ঢাকায় আছে পরে হাজিরা দেবে।

২৬ অক্টোবর সে ঢাকায় চলে আসে। সে ঐ মামলার এক নম্বর আসামী। আমার আশংকা ছিল ২৮ অক্টোবর হাজিরা দিতে গিয়ে আটক হলে খুব বিপদ হয়ে যাবে। কারণ ২ নভেম্বর ঢাবিতে তার সাবজেক্ট চয়েজ ছিল (পরে অবশ্য তারিখ পিছিয়েছে)। তার হাজিরার বিষয় নিয়ে বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলেছি। কিন্তু পটুয়াখালীতে জুডিশিয়ালের তেমন কাউকে পাচ্ছিলাম না। 

তারিকুল ইসলাম ভাই নাম্বার দিলেন ২৭ অক্টোবর রাতে আমি শরিফুল হাসান ভাইয়ের সাথে কথা বললাম। শরীফ ভাই ঢাকা সিএমএম কোর্টের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এক ভাইয়ের নাম্বার দিলেন। ঐ ভাইয়ের সাথে কথা বললাম। তিনি ২৮ অক্টোবর সকালে ঢাকা সিএমএম কোর্টে কাওসারকে পাঠাতে বলেন।

তিনি কাওসারের কাছ থেকে সব শুনলেন। এ ভাইয়ের মাধ্যমে পটুয়াখালীর জুডিশিয়ারির অফিসারদের সাথে কথা বলে একটা ব্যবস্থা হয়। ২৮ অক্টোবর কাওসারসহ অন্যান্যরা জামিন পায়।

এদিকে আমার স্ট্যাটাস পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসাইন এর নজরে আসলে তিনি এসপি স্যারকে দেখান। এসপি স্যার বিষয়টি খুব গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন। এসপি স্যার এ বিষয়টি দেখার জন্য তাকেই দায়িত্ব দেন। তিনি মেসেঞ্জারে আমাকে নক করেন। কথা বলে জানলাম তিনি আমাদেরই ব্যাচমেট এবং আমার হলের (জহুরুল হক হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) বড় ভাই। বিল্লাল ভাইকে কাওসারের নাম্বার দিলাম। তিনি কথা বলে বিস্তারিত জানলেন।

পড়ুন: ‘খ’ ইউনিটে ১২৮তম কাউসারের বিরুদ্ধে ৬ মামলা, বাদী একজনই!

২৮ অক্টোবর কাওসারদের জামিন হওয়ার বাদীর মাথা খারাপ হয়ে যায়। সেদিনই সে কাওসারদের বাড়িঘরে হামলা করে। সন্ধ্যায় কাওসার আমাকে জানায় স্যার তারা আমাদের বাড়িঘরে হামলা করেছে। নিশ্চিত তারাই আবার আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে। মামলা হলে আমাকে আবার আসামী দেবে। ২৮ অক্টোবর সে যে ঢাকায় ছিল এর প্রমাণ স্বরূপ খিলগাঁও থানায় সে একটা জিডি করে।

২ নভেম্বর ঠিকই আরেকটা মামলা হয়। এই মামলায় সে চার নম্বর আসামী। বিল্লাল ভাইকে সব খুলে বললাম। তিনি বললেন, কাওসারকে এসপি স্যার বরাবর একটি আবেদন পাঠাতে বলো। আবেদন পাঠানো হলো। কিছুক্ষণ আগে বিল্লাল ভাইয়ের সাথে কথা বললাম। তিনি আশ্বস্ত করলেন। আশা করি একটা ভাল সুরাহা হবে। কাওসার মিথ্যা মামলার হয়রানি থেকে মুক্তি পাবে।

গতকাল ছিল কাওসারের সাবজেক্ট চয়েজ। আমার ইচ্ছা ছিল, সে আইন নিয়ে পড়ুক। কিন্তু অল্পের জন্য পায়নি। ইংরেজি পেয়েছে। কাকতালীয়ভাবে কাওসারের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত আমি, তরিকুল ভাই, বিল্লাল ভাই, শরীফুল হাসান ভাই সবাই জহুরুল হক হলের। কাওসারও যদি জহু হল পায় মন্দ হয় না। তার জন্য শুভ কামনা।’

পড়ুন: এক কক্ষে মায়ের লাশ, পাশের কক্ষে ছেলের


সর্বশেষ সংবাদ