হতাশা বাড়ছে উর্দু-ফারসি-সংস্কৃত-পালি বিভাগের শিক্ষার্থীদের

ছাত্রলীগ নেত্রীদের হামলার শিকার সুস্মিতা বাড়ৈ।
ছাত্রলীগ নেত্রীদের হামলার শিকার সুস্মিতা বাড়ৈ।   © সংগৃহীত

১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। সে হিসেবেও ২০২১ সালে শতবর্ষ উদযাপন করবে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। তবে, শতবর্ষ উদযাপন করলেও ঢাবির অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে শিক্ষাজীবন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে রয়েছে হতাশা। জীবনের সঠিক দিক নির্দেশনা নেই অনেকের। এই হতাশার পরিমাণ আরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাভিত্তিক কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে হতাশার কারণ সম্পর্কে তারা বলেছেন, চাকরির সঙ্কট, অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেও প্রত্যাশা অনুযায়ী চাকরি না পাওয়া, পারিবারিক অর্থনৈতিক সঙ্কট, চাকরি পরীক্ষার জন্য আলাদা পড়াশুনা, চাকরি দেয়ার ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি এসব কারণে শিক্ষার্থীরা হতাশ।

তবে, তাদের মধ্যে হতাশায় এগিয়ে রয়েছে উর্দু বিভাগ, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, সংস্কৃত বিভাগ, পালি ও বুদ্ধিস্ট বিভাগে পড়া শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে রয়েছে ৪০২ জন শিক্ষার্থী, উর্দু বিভাগে রয়েছেন প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী, সংস্কৃত ও পালি ও বুদ্ধিস্ট বিভাগে রয়েছে প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী। সবমিলিয়ে এই চারটি বিভাগে মোট শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় এক হাজার ৬০০।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, যেসব বিভাগ ব্যবহারিক জীবনে তেমন কাজে লাগে না ঐ সব বিভাগে পড়ে জীবনে বিভাগভিত্তিক তেমন উন্নতি সম্ভব নয়। তবে যদি এগুলো বন্ধ করা সম্ভব না হয় তাহলে এসব বিভাগের ভর্তি পরিক্ষার সিট সংখ্যা কমানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

তাদের অভিযোগ, বিশ্বের নামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এসব ভাষাভিত্তিক বিষয়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে সেটা তৈরি করতে পারেনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকি এসব বিষয়ের আলাদা তেমন কোন চাকরির ক্ষেত্রও নেই।

জানা যায়, উর্দু-ফারসি-সংস্কৃত-পালি বিভাগের সূচনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন এইসব বিভাগের দরকার থাকলেও কালের পরিবর্তনে এ বিষয়গুলোর ব্যবহারিক চাহিদা তুলনামূলক কমে গিয়েছে । যার ফলে কালের পরিবর্তনের সাথে সাথে হতাশাও বাড়ছে এইসব বিভাগে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

তারা জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস । যার ফলে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় থাকে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও তা বাদ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব বিষয়ে ভর্তি হচ্ছেন।

সমাজে কিছু প্রচলিত ভুল ধারণার জন্যও কিছু শিক্ষার্থী এসব বিভাগে ভর্তি হচ্ছেন। প্রচলিত ধারণা রয়েছে, বিষয় কোন ব্যাপার নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিষয় হলেই হলো। চাকরি অনেকাংশে নিশ্চিত। অনেক শিক্ষার্থী এসব প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে শুধুমাত্র চাকরির আশায় এসব বিভাগে ভর্তি হন।

তবে, অনেক শিক্ষার্থী এসব বিভাগে পড়ে বিভাগভিত্তিক চাকরির চিন্তা না করে অন্যান্য চাকরি করছেন। এদের মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি উচ্চতর সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্যে।

শিক্ষা সংশ্লিস্টরা জানিয়েছেন, এসব বিভাগের অবদান অনেক। সাহিত্য অনেক শক্তিশালী। তবে যেহেতু এগুলোর বর্তমান প্রেক্ষাপটে তেমন মূল্যায়ন নেই। তাই তারা এগুলো পযার্লোচনা করে শিক্ষার্থীদের দিক বিবেচনা করে কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন।

জহুরা মন্ডল সুমী নামে ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের এক শিক্ষার্থী জানান, ‘ফারসি পড়ে আমার খুব বেশি ভাল লাগে না। দিন শেষে কি করবো বুঝতে পারছি না । তবে জীবনের লক্ষ্য বিভাগ ঠিক করতে পারবে না। এ জন্য পরিশ্রম করতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সামাদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি এর আগেও এ ব্যাপারে বলেছি। আমরা এসব ভাষা বন্ধ করতে চাই না। তবে এ সব ভাষার যে সাহিত্য রয়েছে সেগুলো অনেক রিচ। এ সমস্থ বিভাগে ছাত্র সংখ্যা কমানো দরকার যাতে যারা এ ভাষা শিখবে। তারা সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করবে, উচ্চ শিক্ষা নিবে। তাহলে তাদের কাজের ক্ষেত্র আছে কিনা আমার পর্যালোচনা করতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘আমদের লক্ষ্য রাখতে হবে শিক্ষার্থীরা যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে আর্থিক স্বাবলম্বী হতে পারে। বাবা মাকে সাহায্য করতে পারে।’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা এসব বিভাগে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি করছি। তবে আমাদের মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন যারা ইচ্ছে করে এ ভাষাগুলো শেখার জন্য বিভাগগুলোতে ভর্তি হয়েছে। তাই এগুলো বন্ধ করার সুযোগ নাই।’

তিনি বলেন, ‘তবে যাদের বিশেষ ঝোক আছে এ বিষয়গুলোর প্রতি তাদের ভর্তি করলে বিষয়টা সুন্দর হয়। আমদের মধ্যে অপরিকল্পিত কিছু বিষয় রয়ে গেছে। এগুলো আমাদের আগে থেকে বিবেচনায় নেয়া উচিত ছিল। আমাদের উচিৎ শিক্ষার্থীরা সমাজের চাহিদা পূরন করতে পারছে কিনা, তারা যোগ্য হচ্ছে কিনা সে দিকটি লক্ষ্য রাখা।’