ছাত্রলীগ নেতার বান্ধবীকে পদে আনতে কারসাজি

এবার রোকেয়া হল বিতর্ক ক্লাবে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ

  © টিডিসি ফটো

আগামী ২৪ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) বিতর্ক সংসদের (ডিইউডিএস) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। উক্ত নির্বাচনে বান্ধবীকে সভাপতি নির্বাচিত করতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক উপ-সম্পাদক এবং ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়নের বিরুদ্ধে বিতর্ক সংসদে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ করেছেন ডিইউডিএস-এর কয়েকজন সদস্য।

এই অবৈধ হস্তক্ষেপে এবার সহায়তা করার অভিযোগ উঠেছে রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদার বিরুদ্ধে। গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে নির্বাচনের জন্য হলের ভোটার মনোনীত করার অভিযোগ করেছেন ক্লাবের একাধিক বিতার্কিক।

এর আগে সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল বিতর্ক সংসদের নির্বাচনের সময়ও ছাত্রলীগের এক নেতাকে নির্বাচিত করতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করা হয়েছিল।

সম্প্রতি বিভিন্ন হলের বিতর্ক ক্লাবের নির্বাচনের সময় শয়নের বিরুদ্ধে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করতে কয়েকটি হলে অবৈধ হস্তক্ষেপের অভিযোগ করেছিলেন বিতর্ক সংসদের কয়েকজন সদস্য। তাদের অভিযোগ, হলগুলোতে পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করার মাধ্যমে তাদের ভোটের মাধ্যমে শয়ন তার বান্ধবী ইসরাত জাহান নুর ইভাকে ডিইউডিএস-এর সভাপতি নির্বাচিত করার পায়তারা করছেন।

অভিযোগকারী বিতার্কিকরা জানান, বিতর্ক সংসদের নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় সংসদ থেকে একজন করে ভোটার মনোনীত করতে হল শাখাগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়। এই পদ্ধতিতে ১৮টি হল থেকে একজন করে ভোটার মনোনীত হন।

বিতর্ক সংসদের গঠনতন্ত্রের ২৭ নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক হল ডিবেটিং ক্লাব থেকে একজন করে ভোটার ভোট দিতে পারেন। হল ডিবেটিং ক্লাব ভোটারের নাম চূড়ান্ত করে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত নির্দিষ্ট দিনে ডিইউডিএস কার্যালয়ে জমা দিবে। ভোটারের নাম প্রেরণের কাগজে অবশ্যই হল প্রাধ্যক্ষ বা মডারেটরের স্বাক্ষর থাকতে হবে। ছাত্রত্ব থাকা সাপেক্ষে ভোটারকে স্ব-স্ব ডিবেটিং ক্লাব থেকে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে।’

বিতর্ক সংসদের নিয়মানুযায়ী, হল বিতর্ক ক্লাবের সদস্যদের মধ্যকার যেকোনো একজনকে সকলের সর্বসম্মতিক্রমে মনোনীত করা হয়। এরপর হল প্রাধ্যক্ষ ও বিতর্ক ক্লাবের মডারেটরের স্বাক্ষর নিয়ে তা বিতর্ক সংসদের নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠাতে হয়।

এখানে, হল প্রাধ্যক্ষ বা বিতর্ক ক্লাবের মডারেটর ব্যক্তিগতভাবে কাউকে মনোনীত করার কোনো এখতিয়ার নেই। যদি তাদের ব্যক্তিগত কোনো পছন্দ থাকে, সেক্ষত্রেও হল বিতর্ক ক্লাবের সকল সদস্যদের সম্মতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ জিনাত হুদা হলে কোনো বিতর্ক ক্লাব নেই উল্লেখ করে বিদ্যমান বিতর্ক ক্লাবের সদস্যদের অনুমতি ছাড়াই তার পছন্দের একজনকে মনোনীত করেছেন বলে বিতার্কিকরা অভিযোগ করেন।

তাদের অভিযোগ, জিনাত হুদা ক্লাবের কাউকে না জানিয়ে একক সিদ্ধান্তে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাহিরে ‘সৌমি সপ্তপর্ণা’ নামে একজনকে ভোটার হিসেবে মনোনীত করেছেন। সে ছাত্রী হল বিতর্ক ক্লাবে অনিয়মিত। এর আগে হল বিতর্ক ক্লাবের নির্বাচনের সময় তিনি সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। সভাপতি না হতে পেরে তিনি বিতর্ক ক্লাবে না আসার ঘোষণা দিয়েছিলেন। দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর ভোটার হওয়ার বিষয়টি সামনে এলে সম্প্রতি তিনি আবার নিয়মিত হন।

এর আগে, রোকেয়া হলের বিতর্ক ক্লাবের ‘রোকেয়া বিতর্ক অঙ্গন’ নতুন কমিটি দেওয়ার সময় সেখানে জিনাত হুদা তার অনুগত সৌমি সপ্তপর্ণাকে সভাপতি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিতার্কিকদের বাধায় সেটা পারেননি। পরে বিতর্ক ক্লাব তাদের নতুন কমিটি নির্বাচিত করলে মডারেটর অনুমোদন দিলেও জিনাত হুদা তাতে স্বাক্ষর না করে ঝুলিয়ে রাখেন।

রোকেয়া হল বিতর্ক ক্লাবের কয়েকজন সদস্য অভিযোগ করেন, মাজহারুল কবির শয়নের পরামর্শে হল প্রাধ্যক্ষ এই কাজ করেছেন। শয়ন তার বান্ধবী ইসরাত জাহান নুর ইভাকে সভাপতি করতে উঠেপড়ে লেগেছেন।

এ বিষয়ে বিতর্ক সংসদের নির্বাচন কমিশনার এসএম রাকিব সিরাজী বলেন, ‘সাধারণ বিতার্কিকদের কাছ থেকে এ ধরণের একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমরা বৈঠক করে সিদ্ধান্তের দিকে যাব।’

আরেক নির্বাচন কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মুতি আসাদ বলেন, রোকেয়া হল বিতর্ক ক্লাবের বিষয়ে কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। যেহেতু রোকেয়া হলের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় নি, সেক্ষেত্রে এ হলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হতে পারে বলে জানান তিনি।

এসব বিষয়ে বিতর্ক ক্লাবের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) তাওহিদা জাহান বলেন, ‘আমরা এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো।’

রোকেয়া হল বিতর্ক ক্লাবের মডারেটর রুমানা ইসলামকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে জিনাত হুদাকে মুঠোফোনে অসংখ্যবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

অভিযোগের বিষয়ে শয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ডিইউডিএস-এর নির্বাচন কবে তা আমি জানি না। এসম্পর্কে আমার কোনো তথ্য জানা নেই।’

বান্ধবীকে সভাপতি নির্বাচিত করার কারসাজির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেন, ‘ইভা কে? পরে তার বান্ধবীর পুরো নাম বললে তিনি বলেন, ‘হতে পারে সে কারও বান্ধবী, কারও প্রেমিকা, কারও বউ, কারো মা। এতে তো অভিযোগ প্রমাণিত হয় না।’

কথা বলার এক পর্যায়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল বিতর্ক সংসদের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের বিষয় এলে তিনি বলেন, ‘আমাকে জড়িয়ে কিছু পত্রিকা বাজে বাজে নিউজ করছে। এটা আমি বুঝতেছি না। তবে খোঁজ নিয়ে দেখতেছি আমি।’

এদিকে, বিতর্ক সংসদের বার্ষিক সাধারণ নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দাবিতে সংসদের সাধারণ বিতার্কিকবৃন্দ সোমবার দুপুরে বিতর্ক সংসদের উপদেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আখতারুজ্জামান বলেন, ‘রোকেয়া হল বিতর্ক ক্লাব গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাজ করবে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা আসবে কেন? শিক্ষার্থীদেরকে মডারেটরের সঙ্গে কথা বলে রীতি-নীতি, ঐতিহ্য অনুসরণ করে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’ এখানে কোনো দুষ্ট চক্রের কাজ করার সুযোগ নেই বলেও জানান উপাচার্য।


সর্বশেষ সংবাদ