বিতর্কের মুখে ঢাবির ক ইউনিটের ফল স্থগিত

বিতর্কের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটের অধীন স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। আজ রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েটসাইটে স্থগিতের নোটিশ দিয়েছে প্রশাসন। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসে এ বিষয়ে খবর প্রকাশের পর এ সিদ্ধান্তের কথা জানালো কর্তৃপক্ষ।

রোববার (২০ অক্টোবর) রাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ‘ক’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার প্রধান সমন্বয়কারী বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ চৌধুরী। তবে সিদ্ধান্তটি এখনো বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশিত হয়নি। দ্রুত এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

রোববার রাত সাড়ে আটটার সময় অধ্যাপক তোফায়েল আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি। বলেন, ‘আমাদের কাছে অভিযোগ আসার সাথে সাথে আমরা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে, এখনো কোনো বিজ্ঞপ্তি হয়নি যে কী কারণে কেন ফল স্থগিত করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘নতুন করে যাচাই হলে আরও কিছু শিক্ষার্থী পাশ করতে পারে। ভুল সংশোধন হলে কারও মেধাক্রম উপরে এলে আসবে। তার ন্যায্যটা সে পাবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রোগ্রামের কারণে যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, তাহলে প্রোগ্রাম সংশোধন করলে সবার ফলাফল স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঠিক হয়ে যাবে।’

এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার একমাস পর ফলাফল প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত ফলাফলে অসামঞ্জস্য ও ভুল ফল প্রকাশের অভিযোগ উঠেছে। এজন্য ফলাফল বাতিল করে পুনরায় খাতা মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছে অনেক পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। এর প্রেক্ষিতে ফলাফল স্থগিত করে ঢাবি প্রশাসন।

 

 

রোববার (২০ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২ টার ক ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, এবছর ‘ক’ ইউনিটে সমন্বিতভাবে পাসের হার মোট পরীক্ষার্থীর ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ।

ভর্তি পরীক্ষায় বহু নির্বাচনী অংশে (এমসিকিউ) পাস করেছেন ২৫ হাজার নয়শত ২৭ জন। আর বহু নির্বাচনী ও লিখিত অংশে সমন্বিতভাবে পাশ করেছেন ১১ হাজার দুইশত সাতজন পরীক্ষার্থী।

এবছর ‘ক’ ইউনিটের এক হাজার ৭৯৫ টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছিল ৮৮ হাজার নয়শত ৯৬ শিক্ষার্থী। তন্মধ্যে ৮৫ হাজার আটশত ৭৯ জন পরীক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন।

ফল প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং মোবাইলে ফলাফলে অসামঞ্জস্য থাকার অভিযোগ তুলেছেন অনেক পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক। এজন্য ফলাফল বাতিল করে পুনরায় খাতা মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছেন তারা।

সরেজমিনে জানা যায়, ‘ক’ ইউনিটের গণিত অংশের ফলাফলে অনেক পরীক্ষার্থীর ফলাফল ভুল হয়েছে। তারা অভিযোগ করেছেন, গণিত অংশের ফলাফল উল্টো দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ অনেক শিক্ষার্থীর গণিত অংশে ১০ প্রশ্ন সঠিক ও তিনটি প্রশ্ন ভুল হয়েছে বলে তারা ভর্তি পরীক্ষার পর মিলিয়ে দেখেছিলেন। কিন্তু ফলাফলে দেখা যায়, বিষয়টি পুরো উল্টো। অর্থাৎ তিনটি সঠিক ও ১০টি ভুল দেখাচ্ছে। আবার অনেকে অন্য সব বিষয়ে ভালো নম্বর পেলেও গণিত অংশে ১৫টি ভুল উত্তর দেখাচ্ছে।

এভাবে অনেক শিক্ষার্থীই একই অভিযোগ তুলেছেন। তারা অভিযোগ করছেন, সবার ক্ষেত্রেই গণিত অংশের ফলাফল উল্টো হয়েছে। এটা ফলাফল তৈরির ভুল। ভুল উত্তরের সংখ্যার জায়গায় সঠিক উত্তরের সংখ্যা এবং সঠিক উত্তরের সংখ্যার জায়গায় ভুল উত্তরের সংখ্যা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, খাতা পূনর্মূল্যায়নের সুযোগ থাকলেও খাতা পূনর্মূল্যায়ন নয় পুরো ফলাফল বাতিল করে নতুন করে সকল খাতা মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছেন অনেক পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক। তাদের দাবি, গণিত অংশে ভুলের বদলে সঠিক এবং সঠিকের বদলে ভুল উত্তর এসেছে। এর ফলে যে শিক্ষার্থীর ১০ টি উত্তর ভুল এবং ৫ টি সঠিক হয়েছে কিন্তু তার ফল এসেছে ১০ টি সঠিক এবং ৫ টি ভুল। স্বাভাবিকভাবেই সে খাতা পুনর্মূল্যায়নের জন্য আবেদন করবে না। ফলে অনেক অযোগ্য পরীক্ষার্থী যারা গণিত অংশে অকৃতকার্য হতো তারাও উল্টো ফলাফলের জন্য মেধা তালিকায় অনেক এগিয়ে গেছে।

তাই পুনর্মূল্যায়ণের আবেদন নয়, ফলাফল বাতিল করে নতুন করে সকল পরীক্ষার্থীর খাতা মূল্যায়ন করার দাবি জানিয়েছেন অভিযোগকারীরা।

আজ সন্ধ্যায় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস ফলাফলে অসামঞ্জস্যের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ‘ক’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার প্রধান সমন্বয়কারী বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘যদি এরকম হয়ে থাকে তাহলে যারা আবেদন করবে আমরা তাদেরটা যাচাই করে দেখবো। অভিযোগ যেগুলো আসবে আমার সবগুলো খতিয়ে দেখবো। আমরা কোনোটাই উপেক্ষা করবো না। আমরা প্রত্যেকটা অভিযোগ খতিয়ে দেখবো। আমরা সবার কাছে থেকে তথ্য পাই, এখন গণিতের বিষয়ে অভিযোগ আসছে, আরও কোথায় কোথায় সমস্যা আছে, তা আমরা মিটিংয়ে বসে আলোচনা করবো।’

এদিকে, অনেক শিক্ষার্থী দাবি করেছেন তারা নৈর্ব্যক্তিক অংশে পাশ করলেও তাদের লিখিত অংশে কোনো নম্বর দেখাচ্ছে না।

এ বিষয়ে অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘২৫ হাজার শিক্ষার্থী পাশ করেছে এমসিকিউ অংশে। আমরা ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর লিখিত অংশ মূল্যায়ন করেছি। আমাদের নির্দেশিকায় ছিল আমরা আসন সংখ্যার পাঁচগুণ দেখবো, সেখানে আমরা সাতগুণ খাতা দেখেছি।’

প্রসঙ্গত, ৭৫ নম্বরের বহু নির্বাচনী (এমসিকিউ) এবং ৪৫ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নিয়মে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৯০ মিনিটের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের। এমসিকিউ পরীক্ষার জন্য ৫০ মিনিট ও লিখিত পরীক্ষার জন্য সময় ছিল ৪০ মিনিট। প্রতিটি এমসিকিউ-এর জন্য ১.২৫ নম্বর বরাদ্দ ছিল। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য কাটা গেছে ০.২৫ নম্বর। ভর্তি পরীক্ষায় পাস করতে হলে প্রার্থীকে এমসিকিউ অংশে ৩০ ও লিখিত অংশে ১২ নম্বরসহ মোট ৪৮ নম্বর পেতে হয়েছে। এ ছাড়া বিষয়ভিত্তিকভাবেও পরীক্ষার্থীদের পাস করতে হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ