সরকার দুর্বল বিধায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করতে পারছে না: নুর

  © টিডিসি ফটো

সরকার দুর্বল বিধায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর । আবরার সহ সকল ছাত্র হত্যার দ্রুত বিচার, দেশের স্বার্থ বিরোধী চুক্তি বাতিল ও ছাত্র সংসদের নির্বাচন সহ ৫ দফা দাবিতে বিকাল ৪টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার পরিষদের প্রতিবাদ সমাবেশ তিনি এ মন্তব্য করেছেন ।

সমাবেশে নুরুল হক নুর বলেন, আপনারা আজ দুর্বল বলে আন্তর্জাতিক একটা সমর্থন থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা সমস্যা দূর করতে পারছেন না। কিন্তু আমরা দেখেছি রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান ১৯৭৮ সালে হয়েছে ৯২ সালে হয়েছে। বাংলাদেশ ছোট্ট ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ । আপনারা মানবতার পরিচয় দিয়েছেন, অনেক ভালো করেছেন। কিন্তু আপনারা এই সমস্যা সমাধানের মিয়ানমারকে বাধ্য করতে পারেননি। কারণ, আপনাদের শক্ত ভিত্তি নেই। আপনারা তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি। আপনারা জনগণের সমর্থনে সরকার নন। জোর করে ক্ষমতায় এসেছেন। আপনারা জনগণকে ভয় পান। জনগণের আন্দোলন নিয়ে অপপ্রচার করেন।

ছাত্রলীগের সমালোচনা করে বলেন, আপনারা দেখেছেন বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরারকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে। কত নির্মমভাবে সেই ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আবরারকে হত্যা করেছে। আইয়ুব খানের আমলে ছাত্রসংগঠন যে এনএসএফ ছিল আজকে ছাত্রলীগ তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সেই এনএসএফকে অতিক্রম করেছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছয়ষট্টির ছয় দফা, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন নিয়ে আপনারা গর্ব করেন সেই গৌরবোজ্জ্বল ছাত্ররাজনীতি আজকে কেন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে বন্ধের দাবি আসলো।

ডাকসুর ভিপি বলেন, আজকের ছাত্রলীগ পূরবর্তী ছাত্রলীগকে কলুষিত করেছে। আজকের শিক্ষাঙ্গনগুলোতে ছাত্রলীগ একটি সন্ত্রাসী বাহিনী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে । শিক্ষাঙ্গনগুলোতে ভিন্নমতের শিক্ষার্থীরা কথা বলতে ভয় পায়। ভিন্নমতের শিক্ষার্থীরা অনেকাংশে থাকতে পারেনা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকতে হলে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের গোলামী করে থাকতে হয়।

এ সময় সহযোদ্ধাদের উৎসাহ দিয়ে ডাকসুর এই নেতা বলেন, শত বাধা উপেক্ষা করে নিয়ন্ত্রিত সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে যাচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে কথা বলা যায়না। কথা বললেই মামলা ঠুকে দেয়, হাতুড়ি-হেলমেট বাহিনীর বাড়ি খেতে হয়। তারপরও কিছু মানুষ কথা বলে যাচ্ছে তারপরও আপনারা এখানে এসেছেন, সমাবেশে ১ হয়েছেন , তারপর যে এই এই স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এখানে সমবেত হয়েছেন, আপনাদের এই সমবেত হওয়া বাংলাদেশের মানুষের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয় । দেশের মানুষকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়। বাংলাদেশের মানুষের মনে নতুন করে । শত হতাশার মাঝে দেশের মানুষের মনে আশার বীজ বপন হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেন, আজকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রয়েছে, হল প্রশাসন রয়েছে তারা ছাত্রলীগের অপকর্মের সহযোগী হিসাবে ভূমিকা পালন করছে। অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতেছে না। আপনারা বুয়েটে দেখেছেন একটা ছাত্রকে ৬ ঘণ্টা পিটিয়ে মেরেছে, তারপরও ভিসি একটি বিবৃতি দেননি। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে হয়তো তার কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে গেলে সরকারের কথা তাদের শুনতে হয়। অথচ বুয়েট পরিচালিত হয় তাদের নিজস্ব অধ্যাদেশ দ্বারা।

বিভিন্ন সময় হামলা-মামলার কথা উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, আজকে আমি ডাকসুর ভিপি হয়েছি কিন্তুু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরির সামনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা মিডিয়ার উপস্থিতিতে আমাকে নির্মমভাবে প্রহার করেছে। কিন্তু দলকানা প্রশাসন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল সারা দেশের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন। তখন প্রধানমন্ত্রী মেঘ না চাইতে বৃষ্টি দিয়েছেন। ছাত্ররা চেয়েছিল সংস্কার তিনি সংসদে বলেছিলেন কোন কোটা থাকবে না। কিন্তু আমরা দেখেছি সে বাতিল নিয়ে কত তালবাহানা করা হয়েছে। আমাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। তখন সরকার বলেছিল ওই আন্দোলন নাকি সরকারবিরোধী আন্দোলন। শিবিরের উস্কানির আন্দোলন।

সম্প্রতি ভারতের চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা লজ্জিত হই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আপনি যখন বলেন ভারতকে যা দিয়েছি ভারত সারা জীবন তা মনে রাখবে। আপনার একটি বাক্যে বোঝা যাচ্ছে আপনি ভারত কি পরিমান দিয়েছেন। আপনি দেশের মানুষের স্বার্থের কথা চিন্তা করেননি। আপনি ক্ষমতায় থাকতে ভারতকে তুষ্ট করার কথা চিন্তা করেছেন। কিন্তু ভারত আমাদের কী দিয়েছে। আজও একজনকে সীমান্তে হত্যা করা হয়েছে।

পুলিশের আচরণের সমালোচনা করে বলেন, এখন পুলিশের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারকে রক্ষা করা। তাদেরকে আমরা খুব বেশি ভালো কাজ দেখি না। তারা সরকারের পেটোয়া বাহিনী হিসাবে ভূমিকা পালন করেন। যেখানে বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ হয় পুলিশ দেদারছে মারে। বিএনপি নেতা কর্মী বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক যেই হোক কাউকে আজকে রেহাই দিচ্ছে না পুলিশ।

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান , ফারুক হাসান, মাহফুজ খান প্রমুখ ।


সর্বশেষ সংবাদ