বর্তমান সরকারও বাষট্টির বাণিজ্যিক শিক্ষার পথেই হাঁটছে

  © সংগৃহীত

বর্তমান সরকারও বাষট্টির বাণিজ্যিক শিক্ষার পথেই হাঁটছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মস্তুফা। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮ টায় শিক্ষা অধিকার চত্বরে শিক্ষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার সময় বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন সভাপতি এ মন্তব্য করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ছাত্র ফেডাশেনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাদিক রেজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সালমান ফারসি, ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক সৈকত আরিফ, ঢাকা মহানগর শাখার সম্পাদক রূপক রায় ও অর্থ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান নাঈমসহ নেতৃবৃন্দ।

গোলাম মোস্তফা বলেন, ১৯৬২ সালে শরীফ শিক্ষা কমিশন শিক্ষাকে বিক্রি করে মুনাফালাভের জন্য টাকা যার শিক্ষা তার এই নীতি প্রস্তাব করেছিল। মোস্তফা, বাবুল, ওয়াজিউল্লাহর রক্তের বিনিময়ে সেই জনবিরোধী শিক্ষা নীতি বাতিল হয়েছে ঠিকই কিন্তু এখনও পর্যন্ত শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা বন্ধ হয় নি। বর্তমান সরকারও বাষট্টির শরীফ শিক্ষা কমিশনের মতো বাণিজ্যিক শিক্ষার পথেই হাঁটছে।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের যে অঙ্গীকার সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের বাংলাদেশ সেটা বাস্তবায়ন করতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থাকে উৎপাদনমুখি, অংশগ্রহণমূলক ও গণতান্ত্রিক করতে হবে। আর্থিক অস্বচ্ছলতা শিক্ষালাভের পথে কোনো বাধা হবে না এমন শিক্ষানীতি চালু করতে হবে। মানসম্মত প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে ছাত্র ফেডারেশনের বেশ কিছু প্রস্তাবনা রয়েছে। এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করলে শিক্ষাব্যবস্থা যুগোপযোগী ও উৎপাদনমুখি হবে, তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ ঘটবে।

এসময় প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে ছাত্র ফেডারেশনের কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

তাদের প্রস্তাবনাগুলো হল- বহুধারার (সাধারণ, মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যম) শিক্ষাপদ্ধতি বাতিল করে একই ধারার বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ করে ক্লাসে পাঠদান নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। অংশগ্রহণমূলক পাঠদান পদ্ধতি চালু করতে হবে যাতে করে শিক্ষার্থীদের অনুসন্ধিৎসু ও চিন্তার সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।কোচিং, গাইড-নোট-মডেল টেস্টসহ যাবতীয় শিক্ষা ধ্বংসের তৎপরতা ও বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করতে হবে। প্রচার মাধ্যম ও পাঠ্যপুস্তক থেকে সাম্প্রদায়িক, ইতিহাসের দলীয়করণ, অবৈজ্ঞানিক, পুরুষতান্ত্রিক, জাতিবিদ্বেষী ও বর্ণবৈষম্যমূলক উপাদান বাতিল করতে হবে।সকল জাতিসত্তার শিশুদের জন্য প্রাথমিক পর্যন্ত মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।শিক্ষাক্ষেত্র থেকে ঝরেপড়া রোধ করতে এবং প্রত্যেক শিশুর শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করতে অভিভাবকদের ন্যূ্ন্যতম আয় ও বাঁচার মতো মজুরি নিশ্চিত করতে হবে। প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ভাষা, গণিত, সমাজ, বিজ্ঞান, ইতিহাস এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রিকতার সাধারণ শিক্ষা এমন পদ্ধতিতে প্রদান করতে হবে যাতে শিক্ষার ভিত মজবুত হয়।

সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সারাদেশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন ঘটাতে হবে। ছাত্র শিক্ষকের অনুপাত ৩০ঃ১ হারে প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। প্রত্যেক স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের উপযোগী আনন্দদায়ক পাঠাগার ও গবেষণাগার নির্মাণ এবং এগুলো মনিটরিং কর। পর্যাপ্ত গ্রন্থাগারিক নিয়োগ ও তাদের মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। পরিবহণ ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে খেলার মাঠ, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও শিক্ষা সফরের ব্যবস্থা করতে হবে।শ্রেণিমূল্যায়ন পদ্ধতিকে যুগোপযোগী ও শিক্ষার্থীদের প্রতি বিবেচনাপূর্ণ করে শ্রেণি উন্নয়নের নীতি প্রণয়ন করতে হবে। শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থী মূল্যায়ন ও শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষক মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, জাতি, আর্থিক অবস্থা কোনো ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা চলবে না। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা চলবে না। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। স্কুল-কলেজগুলোতে প্রশাসনিক দলীয়করণ বন্ধ করে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের সমন্বয়ে স্কুল/কলেজ পরিচালনা কমিটি গঠন এবং কমিটির কার্যক্রম মনিটরিং করতে হবে। ভর্তি বাণিজ্য, বোর্ডের বই নিয়ে দুর্নীতি ও ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। বোর্ডের সকল বই দেশীয় ব্যবস্থাপনায় ছাপাতে হবে।

মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে ছাত্র ফেডারেশনের প্রস্তাবনা- শিক্ষাঙ্গনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত কর। প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে ছাত্র প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। সকল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের অধিকার যাতে অর্থনৈতিক অবস্থার অধীন না হয় এ কারণে শিক্ষা ব্যয় জনগণের ন্যূন্যতম আয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে গ্রহণ করতে হবে।শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ও শিক্ষা সংকোচনের সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তে বছর বছর বেতন-ফি বৃদ্ধি চলবে না। বর্ধিত বেতন-ফি প্রত্যাহার করতে হবে। শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। গবেষককে হয়রানি করা বা গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা দেয়া চলবে না।

প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ আবাসিক হলে মানসম্মত পাঠাগার গঠন ও পর্যাপ্ত বই-জার্নাল সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। লাইব্রেরি ও বিভাগীয় সেমিনারে পর্যাপ্ত নতুন বই-জার্নাল ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ছাত্রানুপাতে বাড়াতে হবে। ভর্তি জালিয়াতি বন্ধ কর। কলেজ সহ অধিভুক্ত সকল কলেজের একাডেমিক ক্যালেণ্ডার প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। অধিভুক্ত কলেজে সারাবছর ক্লাস চালু রেখে নির্দিষ্ট সময়ে কোর্স সম্পন্ন ও পরীক্ষা গ্রহণ কর। অনিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পরীক্ষা পদ্ধতি বছর বছর বদলানো যাবে না। স্বতন্ত্র পরীক্ষা হল ও পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ তৈরি করতে হবে। সেমিস্টার পদ্ধতি বাতিল কর। শিক


সর্বশেষ সংবাদ