অভিন্ন নীতিমালা বাতিলের দাবিতে ঢাবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন

  © টিডিসি ফটো

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত দেশের সকল পাবলিক বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি বিষয়ক অভিন্ন নীতিমালা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ।

বৃহস্পতিবার (০৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সোয়া ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন করে এই দাবি জানান তারা। মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্বিবদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধনে উপস্থিত শিক্ষকবৃন্দ সকল পাবলিক বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি বিষয়ক অভিন্ন নীতিমালা বাতিলের জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরামের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর অনুরোধ জানান।

সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অভিন্ন নীতিমালা না করে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরর একাডেমিক কাউন্সিলে আলােচনার মাধ্যমে একটি যুগােপযােগী বাস্তব নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করেন শিক্ষকবৃন্দ।

মানবন্ধনে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরামের প্রধান সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুনের পক্ষে একটি বিবৃতি পাঠ করেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আলতাফ হোসেন রাসেল।

বিবৃতিতে বলা হয়, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্বশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ দুটি অনুযায়ী, 'স্বায়ত্তশাসনের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই নিজের মান নির্ধারণ করবে। আর ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদানুযায়ী শুধু আকার নির্ধারণ করবে। অথচ গত ২৫ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে অনুষ্ঠিত ইউজিসি'র ১৪৬ তম সভায় পাবলিক বিশ্বিবদ্যালয়সমূহের শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি বিষয়ক এক অভিন্ন নীতিমালা গৃহীত হয় যা ইউজিসি'র কর্মপরিধির বাইরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়নকে নিয়ন্ত্রণ করার সূক্ষ্ম প্রয়াস। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই নীতিমালা নিয়ে একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। আর অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রণালয় ও ইউজিসি নীতিমালাটি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

গত ২৫ আগস্ট ২০১৯ তারিখে মন্ত্রণালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে ইউজিসির প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে প্রণীত এই অভিন্ন নীতিমালাটি নীতিগতভাবে গৃহীত হযেছে। এই নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ও ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের যে বৈষম্য বিরাজ করছে তা এবং জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫', প্রণয়নের পর শিক্ষকদের বেতন কাঠামাে নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা দূরীকরণের লক্ষ্যে এই অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরাম মনে করে, বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে ঢালাওভাবে বৈষম্যপূর্ণ আখ্যা দিয়ে ইউজিসি যে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে তা বৈচিত্রপূর্ণ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একধরনের ভুল সাধারণীকরণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের পরিপন্থী এবং বর্তমান সরকারেরই গত ১০ বছরের শিক্ষার উন্নয়নকে অস্বীকার করা।'

মানববন্ধনে অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়কে যারা অভিন্ন করতে চায়, বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই নেই। বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় দেশের ভেতর আরেকটি দেশ। একটি দেশের যেমন সংসদ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তেমন সংসদসম সিন্ডিকেট থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়ম-কানুন স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নির্ধারণ করবে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কারও আরোপ করার বিষয় নয়।'

তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ কেমন হবে সেটা কি কোনো সরকারি কর্মকর্তা বুঝতে পারবে। যেহেতু শিক্ষকরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই সারা পৃথিবীতে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘ হয়। যেগুলো আমরা বুঝতে পারি। এগুলো বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। একেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া একেক রকম হবে। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় গুলো অভিন্ন করার প্রয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যায় না।'


তিনি আরও বলেন, 'শিক্ষক সবাই হতে পারে না। কেউ টাকা পয়সার জন্য শিক্ষক হতে আসে না। কেউ বড়লোক হওয়ার জন্য শিক্ষক হতে আসে না। শিক্ষকতা একটা ভিন্ন ধরণের পেশা। আমাদের উচ্চ শিক্ষাকে ধ্বংস করার যে নীল নকশা করা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে থামাতে না পারলে আমাদের এদেশে উচ্চ শিক্ষার মানে ধস নামবে।'

মানববন্ধনে শিক্ষকরা বলেন, 'আমরা শিক্ষক। আমাদের কাজ শিক্ষা দেওয়া, গবেষণা করা। আমাদের রাজপথে নেমে আন্দোলন করতে বাধ্য করবেন না।'


সর্বশেষ সংবাদ