সিইসির ভাগ্নে শাহজাদার নির্দেশে হামলা: ভিপি নুর

  © টিডিসি ফটো

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) ভাগ্নে ও পটুয়াখালীর স্থানীয় এমপি শাহজাদা সাজুর নির্দেশে উপজেলা চেয়ারম্যান ও যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলা চালিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) নুরুল হক নুর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে এ দাবি করেন।

নুর বলেন, বুধবার সকালে তার নিজ গ্রামের বাড়ি গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস থেকে তার বোনের বাড়ি দশমিনা উপজেলায় রওনা হন। যাওয়ার আগে তিনি দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) জানিয়ে রওয়া দেন। ওসি তাকে আসার জন্য বলেন।

কিন্তু হামলার ঠিক ১০মিনিট আগে ওসি নুরকে ফোন দিয়ে দশমিনায় আসতে নিষেধ করেন। তার উপর হামলা হতে পারে বলেও জানান তিনি। নুর বাধা না শুনে উলানিয়া বাজার হয়ে দশমিনা যাওয়ার পথে প্রথমে একদল বহিরাগত কৌশল নিয়ে তাদের গতিরোধ করে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে।

কিছুক্ষণ পর গলাচিপা উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন শাহের নেতৃত্বে তার ভাই নুরে আলম, পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাইনুল ইসলাম রনো, লিটু প্যাদা, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক কচিন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ আসিফ, শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রলীগ নেতা রাহাত, তূর্য্যসহ অন্তত শতাধিক বহিরাগতরা রড, চেইন, হকিষ্টিক, রামদা নিয়ে হামলায় অংশ নেয়।

এ সময় আহত হয় নুরের সঙ্গে থাকা রবিউল, জাহিদ, ইব্রাহিম, রিয়াজ, রিয়ন, নজরুলসহ প্রায় ৩০-৪০ জন। আহতদের মধ্যে নুরসহ ৪ জনের অবস্থা গুরুতর হয়। ভাংচুর করা হয় অন্তত ১০টি মোটরসাইকেল। ছিনিয়ে নেয়া হয় ৯টি মোবাইল ফোনসহ নগদ অর্থ। পরে অচেতন অবস্থায় নুরসহ গুরুতর আহতদের গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিস্থিতি ঘোলাটে দেখে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে নিজ বাড়িতে চলে যান নুর ও বাকি আহতরা।

কী কারণে এ হামলা হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ডাকসুর ভিপি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এলাকায় আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে বন্ধুবান্ধব এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাকে দেখতে বাড়িতে ভিড় করেন। তিনি রাস্তায় চা খাওয়ার জন্য বের হলেও শ খানেক লোক জড়ো হয়ে যান। এতে ঈর্ষান্বিত হয়ে স্থানীয় এমপি এসএম শাহাজাদা সাজু এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আমার ওপর হামলা করে।

নুর বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং এমপিসহ অন্যান্য নেতারা এলাকায় টাকা দিয়েও লোক জড়ো করতে পারে না। কারণ তারা জনগনের ভোটে নির্বাচিত হন নি। আর আমি আসলে এলাকায় শত শত মানুষ জড়ো হয়। নুর আরও বলেন, বুধবার তিনি বাড়ি থেকে মাত্র ১০টি মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা হন। পরে তার সঙ্গে যোগ হয় অন্তত ৮০ থেকে ৮৫টি মোটরসাইকেল। এলাকার এই লোকগুলো নুরকে খুব ভালবাসে।

হাসপাতালে চিকিৎসা না নিয়ে বাসায় ফিরে আসা প্রসঙ্গে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপে আমাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। ডাক্তার আমাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নিতে বলেছেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে আমি চিকিৎসা নিতে যেতে পারছি না।

হামলার ঘটনায় থানায় মামলা করেছেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে ডাকসু ভিপি বলেন, অতিতেও আমার উপর অনেকবার হামলা হয়েছে। বগুড়ায় হামলার ঘটনায় ভিডিও ফুটেজে সন্ত্রাসীদের ছবি ছিল। তবুও প্রশাসন তাদের আটক করেনি। দেশের  আইন ও বিচার ব্যবস্থার উপর আর আস্থা নেই। তাই থানায় মামলা করিনি।

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, ভবিষ্যতে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের রাজনীতি এবং জনপ্রিয়তায় প্রভাব পড়বে এমন আশংকায় নুরের ওপর হামলা চালানো হয়।

উল্লেখ্য, বুধবার দুপুরে তার নিজ বাড়ি গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস থেকে দশমিনা উপজেলায় ছোট বোন জেসমিন আক্তারের বাড়িতে যাওয়ার পথে উলানিয়া বাজারে এ হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ আহত নুরকে উদ্ধার করে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।


সর্বশেষ সংবাদ