সাত কলেজ নিয়ে কী ভাবছে ডাকসু-ছাত্রলীগ-ছাত্রদল?

  © ফাইল ফটো

সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন গড়ে তুলেছেন, সে আন্দোলনের সাথে একমত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনগুলো। তারা এ সমস্যার একটি যৌক্তিক ও স্থায়ী সমাধানেরও দাবি জানিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে এ কথা জানা গেছে।

তথ্য মতে, সাত কলেজ অধিভুক্তকরণের কারণ ছিলো শিক্ষার মানোন্নয়ন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফলে এই সাতটি কলেজ সবসময়ই প্রথম সারিতে ছিল। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এই সাতটি কলেজকে অধিভুক্ত করার পরপরই ওই কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের উপর নেমে আসে চরম দুর্ভোগ।দেখা দেয় তীব্র সেশনজট, পাঠদানে অবহেলা, রেজাল্ট দিতে বিলম্ব হওয়া, পরীক্ষায় গণহারে ফেইলসহ আরও নানাবিধ অসুবিধা।

অন্যদিকে, এই সাত কলেজ অধিভুক্তির ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও নানা সমস্যা শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এই সাতটি কলেজ অধিভুক্তির ফলে তাদের ফলাফল, পাঠদানে নানা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যার কারণে শুরু হয়েছে আন্দোলন। এর আগেও একাধিকবার এমন আন্দোলন হয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে আন্দোলনের শুরু থেকে কিছু তর্ক-বিতর্ক থাকলেও এবারের আন্দোলনে সবাই একমত পোষন করছেন অনেকেই। কার্যত অচল করে দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তালা মেরে দিয়েছে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ একাডেমিক ও প্রশাসনিক বিল্ডিং।

তবে আন্দোলনে ছাত্র নেতারা রাজপথে না নামলেও তাদের সমর্থনেই আন্দোলন চলছে। সাধারন ছাত্রদের দাবির সাথে তারা একমত পোষন করেছে। দাবি আদায় না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে উৎসাহ দিচ্ছে বলে জানা গেছে। তাদের মতে, অধিভুক্তির ফলে সাত কলেজ ও ঢাবি উভয়েেই সমস্যায় জালে আবদ্ধ হয়েছে। তাই তারা দ্রুত এর যৌক্তিক সমাধান চান।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছাত্র ও শিক্ষকের বিরোধী মতামত থাকার পরেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাত কলেজ নিয়েছে। এর সাথে সাত কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও ভোগান্তিতে পড়েছে। যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্তি বাতিলের আন্দোলন করছে, তাই আমরা এই আন্দোনের সাথে একমত পোষন করেছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এ বিষয়ে স্থায়ীভাবে সমাধানের জন্য আহবান জানিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কোন সিদ্ধান্ত প্রশাসন নিতে পারেনা। আমি শিক্ষামন্ত্রীকে বলেছি, এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে একটি স্থায়ী সমাধানের জন্যে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদি তালুকদার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এই সাত কলেজ নেওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয় অপ্রস্তুত ছিল। আমরা রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে কোন কাজ করতে গেলে অনেক কালক্ষেপন হয়। সেখানে কেন আবার সাত কলেজকে নেওয়া হল। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে তা যৌক্তিক আন্দোলন এবং আমরা এর সাথে একমত পোষণ করেছি।’

আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ডাকসুর সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আসিফ তালুকদার ভিসি চত্ত্বরে গিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা পোষণ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডাকসু ও হল সংসদের সকল প্রতিনিধিদের নিজেদের পাশে থাকার আহবান জানান আন্দোলনের মুখপাত্র ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ।

এসময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে আসিফ তালুকদার, কোনো ধরণের উচ্ছৃঙ্খল ও আক্রমণাত্মক কার্যক্রম না করে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানান।

ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘২০১৭ সালে যখন সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়, তখন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আড়াই বছরেও তার কোনো সমাধান করেনি। গত কয়েকদিন ধরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে এলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো যোগাযোগ করেনি। তাই সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।’

সাত কলেজের অধিভুক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোঝা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর অধিকার ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারে না, সেখানে সাত কলেজের প্রায় আড়াই লক্ষ শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নেওয়া অসম্ভব। কিন্তু তারপরও কেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অধিভুক্তি বাতিল করছে না, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।’ সাত কলেজের অধিভুক্তির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে কোনো ব্যাখ্যা নেই বলেও মন্তব্য করেন আখতার।