৭ কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা

সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলসহ চার দফা দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় আবারও আন্দোলনে মাঠে থাকার ঘোষণা দেয়। নতুন এই কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে শাহবাগ মোড়ের অবরোধ তুলে নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। দুপুর ২টার দিকে অবস্থান থেকে সরে যায়। এরপর এই এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলসহ ৪ দফা দাবিতে জমায়েত হতে শুরু করে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে টিএসসি ও শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখে আন্দোলনকারীরা। ফলে রাজধানীর এই ব্যস্ততম এলাকা জুড়ে অচল অবস্থা সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়তে হয় পথচারীদের।

অধিভুক্তি বাতিলসহ দাবিসমূহ হলো- চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই অধিভুক্ত সাত কলেজ বাতিল করা; দুই মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া; বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন করা এবং ক্যাম্পাসে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ এবং রিকশা ভাড়া নির্ধারণ করা।

আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ‘সাত কলেজ বাতিল চাই’ কমিটির মুখপাত্র ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. শাকিল মিয়া বলেন, আমরা আমাদের চারটি দাবি নিয়ে এর আগে প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসন আমাদের দাবি মানে নাই। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এ আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

তিনি আরও বলেন, আজকের মত আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামীকাল থেকে সকল ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া একইভাবে আগামীকাল ১১টায় আবার আন্দোলন হবে।

কমিটির আহবায়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো: আকাশ হোসেন আবিদ বলেন, অধিভুক্ত সাত কলেজের কারনে আমাদের বিভিন্ন জায়গায় পরিচয় সংকট এবং বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। আমরা অবিলম্বে এর থেকে পরিত্রাণ চাই।

এসময় অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ‘শোন বোন শোন ভাই, ঢাবির কোন শাখা নাই’, ‘ঢাবির বাস আটকা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আশ্বাস বা প্রতারণা, চলবে না চলবে না’, ‘সাত কলেজের ঠিকানা, ঢাবি হবে না’, ‘রাখতে ঢাবির সম্মান, সাত কলেজ বেমানান’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেয়  আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

পরে তারা টিএসসি চত্বর অবরোধ করে সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে ভোগান্তিতে পরে পথচারীরা। এসময় পাশেই অবস্থিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনেরা বিপাকে পড়েন।

চিকিৎসা নিতে নাম না জানা একজন বলেন, এটা কোন সিস্টেম হতে পারে না। আপনারা প্রতিদিনই কোন এক পক্ষ রাস্তা আটকিয়ে রাখবেন আর আমরা ভোগান্তিতে পরব। আপনারা প্রতিদিন আন্দোলনই করবেন নাকি লেখা পড়া করবেন! এর স্থায়ী সমাধান করুন। আমাদেরও ভালো থাকতে দিন আপনারাও ভালো থাকেন।

পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আরেকটা অংশ বিক্ষোভ মিছিল সহকারে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয় এবং সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়।

এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে শাহবাগে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সমাজ সেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। এসময় তিনি বলেন, আমি এই আন্দোলনের সাথে শুরু থেকেই একাত্মতা প্রকাশ করেছিলাম এখন আপনাদের সাথে আছি।

তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেখানে পর্যাপ্ত সেবা পায় না, তাদের রেজাল্টের জন্য ৭ থেকে ৮ মাস অপেক্ষা করতে হয় অথচ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অন্যান্যদের দায়িত্ব নেন। প্রশাসন শিক্ষার মানের কথা বলেন, কেমন মান বৃদ্ধি পাচ্ছে তা আপনারা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছেন।

প্রশাসেনর উদ্দেশ্যে আখতার বলেন, প্রশাসনকে জানাতে চাই, আমাদের পরিচয় হুমকির মুখে রয়েছে। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত আমাদের জন্যও অসংখ্য অসুবিধার সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি তাদেরকেও বিপদের সম্মুখীন করেছে। আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই।’


সর্বশেষ সংবাদ